অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সিটিভিতে চলছে লুটপাটের মহোৎসব: জিএম মনোজের অপসারন দাবী

1
photo-1463478576
বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্র।

প্রতিদিন ৬ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে (সিটিভি) চলছে লুটপাটের মহোৎসব। খোদ কেন্দ্র প্রধান মনোজ সেন গুপ্ত’র নেতৃত্বে একটি চক্র রাষ্ট্রীয় এই গণমাধ্যমে হরিলুটে মেতে ওঠেছে। ফলে প্রতিষ্ঠার ২০ বছরেও রাজস্ব খাতভূক্ত না হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যে কোনো মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে দাপ্তরিক কাজে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনৈতিক কর্মকান্ডের নতুন ইতিহাস।

এদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি)’র জি এম মনোজ সেন গুপ্তের অপসারন দাবী করেছে চট্টগ্রামের সম্মিলিত শিল্পী সমাজ । সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এ দাবী জানান শিল্পী সমাজের নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় অবিলম্বে এ দুর্নীতিবাজ জিএমকে অপসারন না করলে প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিবেন শিল্পীরা। জিএম’র দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে সিটিভি এখন সিসিটিভিতে পরিণত হয়েছে বলেও দাবী করেন শিল্পী সমাজের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সম্মিলিত শিল্পী সমাজের নেতা পংকজ বৌদ্য সুজন বলেন, নিম্মমানের অনুষ্ঠান, টেরিস্টরিয়াল সম্প্রচার বন্ধ রাখা, অযোগ্য লোক দিয়ে টকশো পরিচালনা,তালিকাভূক্ত শিল্পীদের বাদ দিয়ে অখ্যাত শিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করা, অডিশনের নামে বাণিজ্য সহ নানা অনিয়ম চলছে ।

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত শিল্পী সমাজের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এম এম নজরুল ইসলাম, ফরিদ বঙ্গোবাসি, দিদারুল আলম দিদার ,ফজলুল কবির চৌধুরী, সজল চৌধুরী, দিলীপ দাশ, এস বি সুমী প্রমুখ।

এর আগে একই অভিযোগ উঠেছিল সাবেক জি এম জ্যাঁ নেসার ওসমান’র বিরুদ্ধে । অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং শিল্পী সমাজের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাঁকে বদলি করা হয়। তাঁর স্থলে যোগদান করেন বর্তমান জি এম মনোজ সেন গুপ্ত। কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। দুর্নীতি আর অনিয়মের ধরন রয়েগেছে অপরিবর্তিত।

মনোজ সেন গুপ্ত মূলত একজন প্রযোজক হলেও তাঁকে দেয়া হয়েছে জি এম’র দায়িত্ব। বিটিভি মহাপরিচালকের আপন লোক হওয়ার কারণেই দাপটের সাথে এসব অনিয়ম করেও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। এর আগে ১৯৯৬ সালে সিটিভিতে প্রযোজক থাকাকালীন আর্থিক অনিয়ম আর নারী কেলেংকারীর অভিযোগে তাঁতে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছিল। পরে পুলিশ পাহারায় সে সময় তাঁকে ঢাকা পাঠানো হয়।

জানা গেছে, সিটিভি’র ৩৬ কোটি টাকার আধুনিকায়ন প্রকল্পের অনিয়ম আড়াল করতে ৬ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের তোড়জোড় শুরু করে অবশেষে রণেভঙ্গ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

15311581_1828627464019447_895951383_o
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পঙ্কজ বৈদ্য সুজন।

৬ ঘন্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সর্বশেষ প্রস্তুতি পর্যালোচনার জন্য গত ৩ জানুয়ারি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি চট্টগ্রাম কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এসময় প্রকৌশল শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ৬ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে গেলে যে সব সমস্যা দেখা দিবে তা তুলে ধরেন।

প্রকৌশল শাখা থেকে জানানো হয়, বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ২ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। তবে ৬ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৬ ঘন্টা বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ রাখতে হবে। কারণ একই সময়ে দুটি কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য আলাদা ট্রান্সমিটার নেই। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের দর্শকরা ৬ ঘন্টা বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান দেখতে পাবেনা। কার্যত চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে ৬ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

এর আগে ৬ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরুর পদক্ষেপ হিসেবে বিটিভি কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার পদে রদবদল করে। জেনারেল ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন সরকারকে ঢাকা কেন্দ্রে সংযুক্ত করে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর বিটিভিতে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত অনুষ্ঠান শাখার মান উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক জ্যাঁ নেসার ওসমানকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়া হয়।

১৯ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তিনি অনুষ্ঠান শাখায় নিয়ম বহির্ভুত জনবল নিয়োগসহ নানা অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠান শাখায় প্রযোজক এডিটর ও ক্যামেরাম্যান পদে ৪৬ জনকে নিয়োগ দেন। যাদের অধিকাংশই ঢাকা থেকে নিয়ে আসা জেনারেল ম্যানেজারের কথিত ছাত্র।

নতুন করে অস্থায়ী জনবল নিয়োগ দেয়ার পর অনুষ্ঠান শাখার কার্যক্রমে বিশৃংখলা সৃষ্টির পাশাপাশি অনুষ্ঠান নির্মাণ প্রায় বন্ধই বলা চলে। জেনারেল ম্যানেজার ও তার নিয়োগকৃত প্রযোজকদের পছন্দের কয়েকজন শিল্পী ও লোকজন দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আউটডোর অনুষ্ঠানের নামে যেনতেন অনুষ্ঠান বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিটিভি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের হিসাব শাখায় এক বছরের বেশি সময় ধরে সহকারি পরিচালক (অর্থ) পদে কোনো কর্মকর্তা নেই। প্রায় এক বছর ধরে প্রশাসন শাখার সহকারি পরিচালক নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি হিসাব শাখার দায়িত্বও পালন করেন।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিল্পী সম্মানী পরিশোধ বা যে কোনো ব্যয়ের পূর্বে জেলা হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা অফিসের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু জেনারেল ম্যানেজার সরকারি কোনো নিয়ম মানতে নারাজ, অনিয়মকেই তিনি নিয়মে পরিণত করেছেন। অভিযোগ ওঠেছে শিল্পীদের নামে চেক ইস্যুর পাশাপাশি জেনারেল ম্যানেজার নিজের পকেটও ভারী করে চলেছেন।

অপরদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যানবাহন শাখায় জ্বালানী তেল বরাদ্দের নামে চলছে পুকুর চুরির ঘটনা। বিটিভি থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যানবাহন শাখায় জ্বালানী খাতে মাত্র দুটি গাড়ীর জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন ৬টি গাড়ীর জ্বালানী তেলের জন্য স্লিপ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের পকেট ভারী করছেন।

এছাড়া বিভিন্ন শাখার জন্য মালামাল কেনার নামেও চলছে হরিলুট। জেনারেল ম্যানেজারের দপ্তরে ব্যবহারের জন্য কেনা হয়েছে ৭০ হাজার টাকার ক্রোকারিজ সামগ্রী। কর্মকর্তাদের জন্য ১০টি পানির ফিল্টার কেনার কথা বলা হলেও মাত্র ৫টির সন্ধান পাওয়া গেছে। মোদ্দা কথা বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনিয়ম-দুর্নীতি অতীতের সব রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে জেনারেল ম্যানেজার মনোজ সেন গুপ্ত বলেন, আমাকে ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে দুই ঘন্টা থেকে ছয় ঘন্টায় উন্নীত করার জন্য। আমি সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। চট্টগ্রাম কেন্দ্র কবে নাগাদ ছয় ঘন্টার সম্প্রচারে যাবে জানতে চাইলে এ বিষয়েও স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি তিনি।

১ টি মন্তব্য
  1. Rodrotonu Rt বলেছেন

    sob durninitbazder 10000% dorte hobe. amra oder sasti chi