অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ভুয়া নারী ম্যাজিস্ট্রেটের কবলে পড়ে কারা কর্মকর্তা বন্দি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে‍!

0
ভুয়া নারী ম্যাজিস্ট্রেট আনিকা তাসনিম সরকার

রংপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে এক কারা কর্মকর্তার কাছ থেকে নগদ অর্ধলাখ টাকাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন এক নারী। পরে ওই কারা কর্মকর্তাকে মাদকাসক্ত দাবি করে জোরপূর্বক শহরের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দেন ওই ভুয়া নারী ম্যাজিস্ট্রেট।

গত সোমবার (২ আগস্ট) মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বন্দি করা হয় আনজু মিয়া নামের ওই কারা সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টরকে। পরদিন তাঁকে উদ্ধার করে পিবিআই। এই ঘটনায় বুধবার ওই ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত সোমবার রংপুরে বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন কারা সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর আনজু মিয়া। পরিবারের সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে পরদিন তাঁকে উদ্ধার করে নগরীর সুস্থ জীবন মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে।

সেই সময় মাদক নিরাময় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিকা তাসনিম সরকার (অনামিকা)-এর নির্দেশেই তাঁরা আটকে রেখেছেন মাদকাসক্ত আনজু মিয়াকে।

আনজু মিয়ার ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- পিবিআই। পরে জানা যায়, দিনাজপুর কালেক্টরেটে কর্মরত পরিচয় দেওয়া আনিকা তাসনিম সরকার (অনামিকা) আসলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটই নন।

.

আনজু মিয়া জানান, ৬ থেকে ৭ মাস আগে বিমানে ভ্রমণের সময় আনিকা’র সংগে পরিচয় হয় তাঁর। সেই সময় আনিকা নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেন। সেই থেকে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো তাঁদের। গত সোমবার আনিকা রংপুরে এসেছেন জানিয়ে শহরের জেলা স্কুল গেট এলাকায় আসতে বলেন। আনজু তাঁর সংগে দেখা করতে মোটরসাইকেল যোগে সেখানে যান। এই সময় মাইক্রোবাসে থাকা আনিকাকে স্যালুট করে কুশলাদি বিনিময় করছিলেন আনজু। তখন কয়েকজন তাঁকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যায়।

আনজু দাবি করেন, তাঁর কাছে সেই সময় নগদ ৪৪ হাজার ২২৫ টাকা, একটি বিদেশি ঘড়ি, মোবাইল, স্বর্ণের আংটি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিলো। যার সবই ছিনিয়ে নেওয়া হয়। মাদকাসক্ত দাবি করে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয় সুস্থ জীবন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে।

পিবিআই-এর রংপুর জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, আমরা খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে আনজু মিয়াকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করি।

এই সময় মাদক নিরাময় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁদের কাছে বলেছেন আনজু মিয়া তাঁর ভাই। তিনি মাদকাসক্ত হওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট আনিকার মানহানি হচ্ছে। তাই তাঁকে আটকে রেখে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন আনিকা। আনিকা’র পরামর্শে নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন আনজুকে তুলে এনে এখানে বন্দি করে। এসময় আনজু’র কাছে থাকা জিনিসপত্র বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে, নিয়ে চলে যান কথিত ম্যাজিস্ট্রেট আনিকা।

জাকির হোসেন আরও বলেন, আনিকা আসলে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নয়। সে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য। তার বিরুদ্ধে একই পদ্ধতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারণার অভিযোগে মামলা রয়েছে। পুরো চক্রটিকে ধরতে চেষ্টা চলছে বলেও জানান পিবিআই-এর এই কর্মকর্তা।