অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্যোক্তা ছিলেন যারা…

0
61
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে এবং লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের মহান বিজয় অর্জিত হয়েছে। এ বিজয়ের ফলে অভ্যুদয় ঘটেছে প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের। আমাদের দেশপ্রেমের প্রধান প্রতীক মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয়। এ বিজয়ের শক্তি নিয়ে আমরা নতুন উদ্যমে উদ্দীপ্ত হয়ে এগিয়ে চলি। মহান বিজয়ের এ মাসে নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা উদযাপন করি আমাদের বিজয় দিবস। অনেক আয়োজনের মধ্যে ‘বিজয়মেলা’ নামে এখন অনুষ্ঠিত হয় মেলা, সাংস্কৃতিক উৎসব, টিভি বিশেষ প্রোগ্রামসহ অনেক কিছু। বিজয়মেলার পথ চলার উৎপত্তি সম্পর্কে হয়তো দেশবাসী তেমন জানে না। বিজয়ের মাসে বিজয়মেলার গুরুত্ব বেড়েছে।
bg-220161202203132
নগরীর কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামে বিজয় মেলা।

১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের মাটি থেকে শুরু হয় বিজয়মেলা। আমি তখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা জনাব ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তৎকালীন চট্টগ্রাম প্রতিনিধি (পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক) জনাব আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া আমার কাছে আসেন।

ষাটের দশকের ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব কর্মকাণ্ডে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। সেই সুবাদে তারা আমার কাছে এসে জানান যে, তারা বিজয়মেলা করতে চান। এ জন্য তারা বেছে নিলেন পুরানা সার্কিট হাউজের সামনের মাঠ, যা বর্তমান সার্কিট হাউজের পাশে। কিন্তু ডিসি অফিস থেকে এ ব্যাপারে অনুমতি পাচ্ছেন না।
এ সমস্যা সমাধানে তারা আমার সহযোগিতা কামনা করেন। সেই সময় মেয়র মহানগরের কর্তাব্যক্তি ছিলেন। সার্কিট হাউজের সামনের জায়গাটি সেনাবহিনীর আওতাধীন; সেহেতু জেলা প্রশাসক তাদেরকে অনুমতি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। চট্টগ্রামের তৎকালীন জিওসি (পরবর্তী সময়ে সংসদ সদস্য) জেনারেল আব্দুস সালামকে ফোন করি। বিজয়মেলা এবং এর তাৎপর্যের কথা শুনে তিনি উত্তর দেন, সিটি ফাদার করতে চাইলে জিওসি না করতে পারেন না এবং তিনি আবেদন করতে বলেন। মেলার সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয় এবং আমাকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করা হয়। কমিটির সভাপতি মনোনীত হন ফারুক-ই-আজম এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া। এরপর জিওসি বরাবর অফিসিয়াল আবেদন করা হয় এবং পুলিশ কমিশনারসহ প্রশাসনের সর্বস্তরে মেলা উদযাপনে সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিতে পরামর্শ দিলাম।
da4fbb09771e70004761dd47fbcb3448
বিজয় মেলার উদ্যোক্তাদের একজন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।

কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে জানান, এ মেলা আয়োজনের প্রয়োজনীয় অর্থ তাদের কাছে নেই। তখন সুভ্যেনির বের করার পরামর্শ দিই এবং সিটি করপোরেশনের ফান্ড থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ বড় অংকের অর্থ দিয়েছিলাম। এ ছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে আরো কয়েকটি বিজ্ঞাপন জোগাড় করে দিই। এর মধ্যে যাদের নাম উল্লেখযোগ্য, সাবেক সংসদ সদস্য, সানোয়ারা করপোরেশনের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বিএসসি ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছোট ভাই ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল হাসান। একজন মঞ্চসজ্জার সব ব্যবস্থা করেন।

বিজয়মেলার আয়োজন আমাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছিল। মেলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাজীর দেউড়ি মোড়ে একটি দোকান অস্থায়ীভাবে ভাড়া নেয়া হয়। মেয়র এবং মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এ কার্যালয়ের উদ্বোধন করেছিলাম। তখন এ বিজয়মেলা শব্দটি দেশের অন্য কোথাও উচ্চারিত হতো না। চট্টগ্রাম থেকেই এর যাত্রা শুরু। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ বিজয়মেলা আনন্দের সাথে উদযাপিত হতে দেখে ভালো লাগে। তাই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি প্রচলিত বাক্য উল্লেখ করতে চাইÑ What Chittagong thinks today, the rest of Bengal thinks it tomorrow মহাত্মা গান্ধীও চট্টগ্রামে এসে বলেছিলেন, Chittagong is to the fore. বন্দর নগরীর সীমানা পেরিয়ে বিজয়মেলা আজ সারা দেশে জাতীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনালব্ধ এ ধরনের একটি ভিন্নধর্মী প্রয়াসের সূচনালগ্ন থেকে আমি জড়িত আছি, এটি আজ আমার জন্য বড় আত্মতৃপ্তির বিষয়। বিজয়ের এ মাসে প্রথম মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকসহ সবার অবদান স্মরণ করছি।
লেখক : সাবেক মেয়র, চট্টগ্রাম ও সাবেক সংসদ সদস্য