অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালাতে গিয়ে ভারতে আটক বনানী থানার ওসি তদন্ত

0
বনানী থানার পুলিশ ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা।

প্রতারণা করে গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নেপালে পালিয়ে যাবার সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পুলিশ ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন।

তিনি মূলত নেপাল হয়ে ইউরোপ বা আমেরিকায় পালিয়ে যেতে চেয়ে ছিলেন বলে ভারতের পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
সোহেল রানার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

ভারতে আটকের পর।

অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার সোহেল রানাকে আটক করা হয়েছে বলে ভারতের স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। আটক অবস্থায় তার একটি ছবিও প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।

নর্থ বেঙ্গল বিএসএফের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও সোহেল রানাকে আটকের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভারতীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে তারা টুইটে লিখেছে, অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন পরিদর্শককে আটক করা হয়েছে। বিএসএফের একটি দল সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করে।

জানাগেছে, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের সাবেক মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের ভাই সোহেল রানা। ই-অরেঞ্জের বর্তমান মালিক বীথি আক্তার। সোহেল রানা ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।

বিএসএফকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়, আটকের সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পাসপোর্ট, একাধিক মোবাইল ও এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। শনিবার মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হতে পারে।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিএসএফ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, আটকের সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পাসপোর্ট, একাধিক মোবাইল এবং এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। শনিবার মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানিয়েছে বিএসএফ।

এ বিষয়ে বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আজম মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, সোহেল রানা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অফিস করেছেন। এরপর তিনি আর থানায় আসেননি। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তা জানা নেই।

বিজিবির পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ভারত-নেপাল সীমান্তে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশি আটক হয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা বিএসএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এরকম কোনো তথ্য পাইনি।

এর আগে ১৬ আগস্ট গুলশান-১ এর ১৩৭ নম্বর রোডে অবস্থিত ই-অরেঞ্জের কার্যালয় রোড এবং গুলশান-২ চত্বর আটকে আন্দোলন করেন ভুক্তভোগীরা। বিক্ষুব্ধ ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারের চেয়ে অনেক কম মূল্যে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য অনেক পণ্যের অর্ডার নেওয়ার পর ই-অরেঞ্জের মালিক ও কর্মকর্তারা লাপাত্তা। তাই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও এখন তাদের দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়। নিরূপায় হয়ে দিনভর ক্রেতারা বিক্ষোভ করেন ই-অরেঞ্জের গুলশানের কার্যালয়ের সামনে।

পরে, ১৭ আগস্ট সকালে গুলশান থানায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জনও উপস্থিত ছিলেন। মামলার এজাহারে তাদের স্বাক্ষর রয়েছে।

এদিকে ই-অরেঞ্জের সাবেক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বাসার সামনে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী ক্রেতারা। সেসময় মাশরাফি জানান, দুই মাস আগে ই-অরেঞ্জের সঙ্গে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।