অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ ষষ্ঠী

0
.

ঢাকে পড়লো কাঠি, শঙ্খ ধ্বনিতে মুখরিত হলো চারিদিক। আজ ষষ্ঠী। মন্দিরে মন্দিরে বেল গাছের নীচে অনুষ্ঠিত হলো দেবীদুর্গার ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ। মহামারির এই ক্রান্তিকালে পূজা শুরু হওয়ায় ভক্তদের মন কিছুটা হলেও হালকা। প্রার্থনা শুধুই মঙ্গলের।

আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মহাষষ্ঠীতে নানা আচার-অর্চনায় দেবী আনুষ্ঠানিকভাবে অধিষ্ঠান হলেন মণ্ডপে মণ্ডপে। মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে পাঁচদিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হলো আজ (১১ অক্টোবর)। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব ঘিরে এখন সারাদেশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, দুর্গা এবার এলেন ঘোড়ায় চেপে। পুরাণ অনুযায়ী, দুর্গা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলে যুদ্ধ, ঝড়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। আর ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়বেন দোলায় চড়ে। দোলায় গমনেও বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্বিপাক।

শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সোমবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৭ টায় নগরের কিছু পারিবারিক ও সর্বজনীন মণ্ডপে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ ও আবাহনে ষষ্ঠীপূজা সম্পন্ন হয়।সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। পঞ্জিকা মতে, মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমী তিথিতে পূজা হবে। বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুর্গাদেবীর মহাষ্টমী পূজা ও রাতে সন্ধি পূজা। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) দুর্গাদেবীর মহানবমী বিহিত পূজা এবং শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর পূজা শেষে দর্পন বিসর্জন।

চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান পূজামণ্ডপ জেএম সেন হল প্রাঙ্গণ সেজেছে নতুন সাজে। সুদৃশ্য তোরণ ও মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হয়েছেন প্রতিমা। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে দুর্গতিনাশিনীর আগমনে সনাতনী সম্প্রদায় এখন আনন্দে মতোয়ারা।নিপুণ শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা মহাদেব, দেবী দুর্গা, শ্রীশ্রী লক্ষ্মী, শ্রীশ্রী সরস্বতী, শ্রীশ্রী গণেশ ও শ্রীশ্রী কার্ত্তিক সহ দেবীর পদতলে ধরাশায়ী অসুরের অধিষ্ঠান পূজা মণ্ডপগুলোতে। আয়োজকরা পূজার সব উপকরণ পূজাস্থলে আনতে ব্যস্ত। তবে অনেক মণ্ডপে দেখা গেছে, ঋষির দেওয়া প্রতিমা কাঠামো না মেনে মনগড়া আধুনিক ভঙ্গি ও পোশাকে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমা।

সনাতন শাস্ত্রীয় ব্যবস্থাপক অমল চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিমা পূজার জন্য প্রয়োজন নিখুঁত গঠনশৈলি। বরাহপুরাণে বিষ্ণুরূপী অবতার বরাহ বসুমতীকে বলেছেন, “প্রতিমা যশস্য কর্তব্যা তদানীয় বসুন্ধরে। প্রতিমাং কারয়েচ্চৈব লক্ষণোক্তাং বসুন্ধরে। ” অর্থাৎ, যে দ্রব্য দিয়ে প্রতিমা প্রস্তুত করতে হবে সে দ্রব্য এনে শাস্ত্রোক্ত বিধিমতে প্রতিমা নির্মাণ করবে। এতে বুঝা যায়, প্রতিমা হতে হবে শাস্ত্রোক্ত বিধিমতো অর্থাৎ ঋষিদের দেওয়া কাঠামো অনুযায়ী, নিজ মনের কল্পনা অনুযায়ী নয়।নগরের ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৭৬টি পূজামণ্ডপে এবং চট্টগ্রাম জেলার আওতাধীন ১৫ উপজেলায় সর্বজনীন ১ হাজার ৫৫৩টি ও পারিবারিক ৪১১টি মণ্ডপসহ মোট ১ হাজার ৯৬৪টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি পূজাম-পে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সপ্তমী, পরশু বুধবার অষ্টমী, বৃহস্পতিবার নবমী এবং শুক্রবার দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বাঙালির অন্যতম প্রাচীন এই শারদোৎসব।
এর আগে গতককাল রবিবার সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

এছাড়াও পূজা উপলক্ষে মেলা, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি প্রতিযোগিতা এবং বিজয়া দশমীর দিন শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আগামী ১৫ অক্টোবর মহাদশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হবে পাঁচদিনের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।