অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ইতালি বসেই ‘নৌকা’র মনোনয়ন পেলেন তিনি

0
ইতালিপ্রবাসী মো. শাহ আলম

গত টানা পাঁচ দিনে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে ৬ বিভাগের ইউপি নির্বাচনে নৌকার একক চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে, কিছু কিছু প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার পর তাদের নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। সম্প্রতি শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যানপ্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ইতালিপ্রবাসী মো. শাহ আলমকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খোদ দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মো. শাহ আলম আওয়ামী লীগের কোনো স্থানীয় কোনো কমিটিতে নেই। এমনকি দেশেও নেই তিনি। তবু পেয়েছেন দলের মনোনয়ন। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তারা বলছেন, মো. শাহ আলম ২০১৬ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলিন। তখন তিনি বিজয়ী হতে পারেননি। ওই নির্বাচনের পর ২০১৭ সালে শাহ আলম ইতালিতে চলে যান। এরপর আর দেশেই ফেরেননি।

এদিকে, মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকালে সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শাহজাহান ঢালী, দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত লিয়াকত হোসেন হান্নান ঢালী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুমন ঢালী, হারুন খালাসী, মামুন খানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১১ নভেম্বর শরীয়তপুর সদরের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য গত ৩ অক্টোবর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে তৃণমূলের প্রার্থীদের নামের তালিকা রেজুলেশন করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতরে পাঠানো হয়। ওই তালিকায় মাহমুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের জন্য শাহ আলমের নাম ছিল না। ১০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন। সেখানে সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে শাহ আলমের নাম আসে।

মাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান ঢালী বলেন, ‘শাহ আলম ইতালি প্রবাসী, কোনো দলীয় পদে নেই। তৃণমূল থেকে তার নামও প্রস্তাব করা হয়নি। তাহলে কিভাবে তিনি মনোনয়ন পেলেন? এভাবে ভৌতিক মনোনয়ন দিলে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা হতাশ হন। আমরা চাই তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে অন্য কোনো ত্যাগী নেতাকে দেওয়া হোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পেতে নিয়ম হলো, কারও পক্ষে মনোনয় ফরম যে কেউ সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু যিনি প্রার্থী তিনি নিজে মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করবেন ও নিজে জমা দেবেন এটা নিয়ম। এখন প্রশ্ন উঠেছে শাহ আলম মুন্সী প্রবাসে, তার দলীয় মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করলেন কে?’

এদিকে ইতালি থাকায় শাহ আলমের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব না হলেও তার ভাগ্নে সোহেল রানা বলেন, ‘আমার মামা ইতালিতে আছেন। দুই-এক দিনের মধ্যেই দেশে আসবেন। এছাড়া, তিনি সবসময় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন ও আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকেন। দল তাকে যোগ্য মনে করেই মনোনয়ন দিয়েছেন।’

শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘গত ৩ অক্টোবর সদর উপজেলা ও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে তৃণমূল থেকে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেই তালিকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানে মাহমুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে শাহ আলম মুন্সীর নাম নেই। শাহ আলম বিদেশে বসে কিভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, কে তার আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন আর কিভাবেই তিনি মনোনয়ন পেলেন, এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’ তবে তার অনেকেই হতবাক হয়েছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।