অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বাঁশখালীর শুটকী রপ্তানী হচ্ছে এখন বিশ্ব বাজারে

0

মোঃ আবদুল জব্বার, বাঁশখালী:

banshkhali-pic-11-12-16
.

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লক্ষাধিক জেলের জীবন জীবিকার অন্যতম স্থান হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। এই বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে শুকানোর পর তা দেশে-বিদেশী রপ্তানি করে জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু বিগত কয় বছর যাবৎ বঙ্গোপসাগর জলদস্যুদের আস্থানায় পরিণত হওয়ায় দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে জেলেদের জীবন। তারপরেও জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে সাগর থেকে মাছ আহরণ ও তা শুকানোর কাজে ব্যস্ত বাঁশখালীর জেলেরা।

বর্তমানেও জেলে পল্লীগুলোতে চলছে শুটকি শুকানোর মৌসুম। বর্ষা মৌসুমে শুটকি শুকানো কঠিন হওয়ায় বর্তমান শুস্ক মৌসুমই শুটকি শুকানোর উপযুক্ত সময় মনে করেন জেলেরা।

বাঁশখালী ছাড়া অন্যান্য এলাকার জেলেরা ইউরিয়া সার, লবন ও বিষাক্ত পাউডার মিশ্রিত কাঁচা মাছ শুকানোর কারনে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওইসব শুটকি খেতে তেমন স্বাদ না হলেও বাঁশখালীর সমুদ্র উপকূলের জেলেরা কোন কিছু মিশ্রণ ছাড়া প্রহর রৌদ্রের তাপে শুটকি মাছগুলো শুকান বলেই বাঁশখালীর শুটকি খুবই সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়।

বাঁশখালীর জেলে পল্লীগুলোতে শুকানো হাজার হাজার মন শুটকি ক্রয় করতে চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারের গুদাম মালিকরা দলে দলে হাজির হচ্ছেন এবং অনেকেই জেলেদের অগ্রীম টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। বাঁশখালীতে শুকানো শুটকির মধ্যে লইট্যা শুটকি, ছুরি শুটকি, রূপচান্দা শুটকি, ফাইস্যা শুটকি, মাইট্যা শুটকি, কোরাল শুটকি, রইস্যা শুটকি, পোঁহা শুটকি ও চিংড়ী শুটকি সু-স্বাদু ও অন্যতম।

এসব শুটকি এখন রপ্তানী হচ্ছে দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত ও পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

এসব শুটকি রপ্তানী করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও চকবাজারের বড় বড় গুদাম মালিকরা। শুকনো মৌসুমে শুটকি শুকিয়ে তা গুদাম মালিকদের কাছে বিক্রয় করেই চলে তাদের জীবন জীবিকা।

বাঁশখালী থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয় কোটি কোটি টাকার শুটকি। এর ফলে জেলেরা যেমন জীবিকা নির্বাহ করতেছে পাশাপাশি তা দেশের অর্থনীতিতে যোগান দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্বের।

চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারসহ বড় বড় গুদামে হাজার হাজার মন শুটকি গুদামজাত করে বর্ষা মৌসুমেও উচ্চ দামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে অনেক ব্যবসায়ীরা লাভবান হন। সাগর থেকে জেলেদের আহরণ করা মাছ আধুনিক পদ্ধতিতে শুকানোর কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর সাগর উপকূলে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ বিনষ্ট হয়।

শুটকি শুকানোর কাজে নিয়োজিত জেলেরা সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে আরো ব্যাপক হারে শুটকি উৎপাদন করার মাধ্যমে তা বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। লাভজনক এই মাছ আহরণ ও শুটকি মাছ ব্যবসায়ীরা বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি থেকে শুরু করে নানা বেকায়দায় আছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের জলদস্যু সম্রাট আবদুল হাকিম প্রঃ বাইশ্যা ডাকাত জেল হাজতে থাকলেও বঙ্গোপসাগরে জেলে ও বোট অপহরণ থেমে নেই। বঙ্গোপসাগরে আস্তানা গড়ে উঠা জলদস্যুরা জেলেদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত আহরিত মাছ ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা ও অপহরণ করছে জেলেদের।

বিশেষ করে ২০১১ সালে ২৫ জন জেলেকে অপহরণ করে হত্যা। সর্বশেষ ২০১৩ সালে বাঁশখালীর ৩১ জেলেকে অপহরনের পর নিমর্ম ভাবে হত্যার ঘটনায় দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর আবারো ১০ নভেম্বর ফিশিং বোট সহ ১৫ মাঝিমাল্লাকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরেও থেমে নেই জীবনের তাগিদে জেলেদের মৎস্য আহরণ ও শুটকি দেশে বিদেশে রপ্তানির। বঙ্গোপসাগরে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেন এসব জেলেরা। বাঁশখালীবাসীর দাবি প্রশাসনের নজর দেওয়া জরুরী। বাঁশখালীবাসী দাবি প্রশাসনের নজর দেওয়া জরুরী।