অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আজ মহান বিজয় দিবস

0
victory-day
.

আজ মহান বিজয় দিবস। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্ণ হল আজ। এদেশের মুক্তিকামী অকুতোভয় যোদ্ধারা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটায় এদিন। জাতি পায় বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্তি। জন্ম নেয় এক নতুন দেশ।

মুক্তির জয়গানে মুখর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আজ স্মরণ করবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, সেই অকুতোভয় বীরদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ বিজয়। যাদের আত্মত্যাগে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সূচনা হবে বিজয় দিবসের কর্মসূচী। দিবসটি উপলক্ষে প্রত্যুষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামবে সাধারণ মানুষের। বিজয় আবেগে উদ্বেলিত সাধারণ মানুষের ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ আর সকল শহীদ মিনার। বঙ্গবন্ধুর বজ্র নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত। বিজয়ের হাসিতে হাসবে পুরো জাতি।

১৯৪৭ সালে ইংরেজদের শাসন থেকে এদেশ মুক্ত হলেও ফের বাঁধা হিসেবে দেখা দেয় পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীর অন্যায় শাসন। বাঙালি বঞ্চিত হতে থাকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে। পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ লুট করে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তোলা হয় সম্পদের পাহাড়। তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ধীরে ধীরে জেগে ওঠে দামাল বাঙালি। ধাপে ধাপে আঘাত হানতে থাকে শাসনযন্ত্রে। মাতৃভাষার দাবিতে সেই ’৪৮ সাল থেকে শুরু করে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদান সংগ্রাম-আন্দোলন। ’৫৪-র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৫৭-র স্বায়ত্তশাসন দাবি। মূলত ৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তিসনদ ঘোষণা করা হয়। এরপর ৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিদায় এবং ’৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এসেছে স্বপ্নের স্বাধীনতা।

৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই জগদ্বিখ্যাত ঘোষণার মধ্য দিয়েই মূলত বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে যায়। অদম্য বাঙালী জাতিকে দমাতে না পেরে ২৫শে মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী শুরু করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর আসে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা। দখলদার বাহিনীকে বিতাড়নে শুরু হয় অদম্য সংগ্রাম। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে জীবন দান করেন লাখ লাখ বাঙালি। অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর আসে সেই কাঙ্খিত বিজয়। সে সময়ের রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতের মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।

কর্মসূচী: প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন।

সকাল দশটায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ। এতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।

এছাড়াও বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সিপিবি, ওয়াকার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।

এর মধ্যে আছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।