অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

যুদ্ধে পুলিশের বীরত্ব গাঁথা কাহিনী নিয়ে নির্মিত হচ্ছে “দামপাড়া” চলচ্চিত্র

0
.

চট্টগ্রাম মহানগরীর আলোচিত এবং পরিচিত একটি এলাকা হচ্ছে দামপাড়া। এবার সেই ‘দামপাড়া’ নামে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্র। ৭১র মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)তে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা শামসুল হকের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে সিনেমা ‘দামপাড়া’।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে এ ছবিটির শুটিং।

ছবির গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন আনন জামান। পরিচালনা করবেন শুদ্ধমান চৈতন।

ছবিতে প্রয়াত পুলিশ শামসুল ইসলামের চরিত্রে অভিনয় করবেন ফেরদৌস আহমেদ। তার স্ত্রী মাহমুদা হক চৌধুরীর ভূমিকায় আশনা হাবিব ভাবনা।

.

সিএমপি সূত্র জানায়, এম. শামসুল হক ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন। যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, পাকিস্তানিদের লক্ষ্যই ছিল চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা শামসুল হককে হত্যা করা। অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। শহীদ হন তিনি, তবে তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। জীবন বাজি রেখে তিনি চট্টগ্রামের জনগণের সঙ্গে পুলিশকে একাত্ম করে এক জনযুদ্ধের সূচনা করেন। ২৮ মার্চের পর চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায়। ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর লালদিঘিতে পুলিশ সদর দফতরে স্থাপন করা হয় কন্ট্রোল রুম। কন্ট্রোল রুমে প্রতিনিয়ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা বৈঠকে মিলিত হতেন। তারা পুলিশ সুপার শামসুল হকের দিক-নির্দেশনা নিতেন ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতেন। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম এলাকার সেনাবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর দুইশ বাঙালি সদস্য পুলিশ লাইন্সে আশ্রয় নিলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও এসব বাঙালি সদস্যদের হাতে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দেওয়া হয়।

২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়। পরে ২৯ মার্চ দিবাগত রাত ভোর ৪টার সময় পুলিশ লাইন্সের দক্ষিণ-পূর্বদিক এবং উত্তর-পূর্বদিক থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একযোগে আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারী মেশিনগান এবং থ্রি ইঞ্চি মর্টার ব্যবহার করে। যুদ্ধরত পুলিশ সদস্যরা পাহাড়ের ঢালে এবং ট্রেঞ্চে অবস্থান করায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথমদিকে বেশ বেগ পেতে হয়। পরবর্তীতে ভোর ৬টার দিকে গোলাবারুদের অভাবে যুদ্ধরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে এবং পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ শাহাদাৎবরণ করেন।

মূলত এই কাহিনী অবলম্বনে ‘দামপাড়া’ নির্মিত হচ্ছে।

চলচ্চিত্রটি প্রসঙ্গে ছবির গল্প, চিত্রনাট্যকার আনন জামান বলেন, “সত্তরের নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর বিজয় অর্জনের পর সাকা চৌধুরীর পরিবার চট্টগ্রামে খুব হিন্দু নির্যাতন শুরু করলে, বঙ্গবন্ধু এই এসপি শামসুল ইসলামকে সিলেট থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। যখন যুদ্ধ শুরু হয় পাকিস্তানিদের লক্ষ্যই ছিল কি করে এসপি শামসুল ইসলামকে খুন করা যায়। শেষ পর্যন্ত তাকে অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে খুনও করে পাকিস্তানিরা। কিন্তু তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বামীহারা স্ত্রীর বর্ণনায় গল্পটি বড়পর্দায় দেখতে পাবো আমরা।”

তিনি বলেন, “চরিত্র নির্বাচনে ফেরদৌসকে আমরা বেছে নেই এ কারণে যে, তার যে পরিণত লুকটা এসেছে তা আমাদের প্রয়োজন ছিল। তা ছাড়া পর্যাপ্ত সময় তার হাতে থাকায় চরিত্রটির জন্য তাকে তৈরি করতেও সুবিধা হবে। তাকে সচরাচর যে রোমান্টিক হিরো হিসেবে দেখা যায়, তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে অন্য এক ফেরদৌস ধরা দেবেন এখানে। অন্যদিকে ভাবনাকে বরাবরই দেখে এসেছি নায়িকা হওয়ার চেয়ে অভিনয়শিল্পী হওয়ার প্রতি তার মনোযোগ ছিল। মূলত এ কারণেই তাকে চলচ্চিত্রটিতে নেয়া হয়েছে।”

চলচ্চিত্রটির প্রযোজক সিএমপির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক জানান, ২৩ ডিসেম্বর (আজ) থেকে চলচ্চিত্রটির শুটিং শুরু হতে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই একটি মহরত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।