অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ধর্ষণ মামলা তুলে না নেয়ায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে এনে তরুণীকে হত্যা

0
.

ধর্ষণ মামলা তুলে না নেয়ায় বিয়ের প্রলোভনে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম এনে তরুণীকে হত্যার ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  হত্যার ৫১ দিন পর রাউজানে থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাতনামা নারীর লাশের পরিচয় উদঘাটন করেছে রাউজান থানা পুলিশ।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের রাউজানের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মো. নুরুল ইসলাম প্রকাশ বাদশা (২৪), মো. আক্তার হোসেন (৩৫) ও মো. মেহেরাজ প্রকাশ মিরাজ (২৩) নামে এই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ নভেম্বর রাউজানের পূর্বগুজরা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া সেকসান-২ সড়কের সিকদারঘাটা এলাকার রাস্তার পাশ থেকে পুলিশ তরুণীর লাশটি উদ্ধার করেছিল। পুলিশ জানিয়েছে হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীর নাম আমেনা বেগম প্রকাশ রাহি, প্রকাশ শারমিন (২২)। তিনি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া পাড়ার নুর হোসেন এর কন্যা।

পুলিশের ভাষ্যানুসারে ভিকটিম শারমিনের সাথে নিজ পাড়ার নুরুল ইসলাম প্রকাশ বাদশার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তিনি গর্ভবতী পড়ে। এই অবস্থায় নুরুল ইসলাম বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিতে শারমিনকে গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করে। গর্ভপাত ঘটানোর পরও বিয়ে না করায় ভিকটিম ও তার পরিবার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জোড়পূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ করে বিগত ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে। ওই মামলায় নুরুল ইসলাম গ্রেফতার হয়ে কারা ভোগ করেন।

জেল থেকে জামিনে এসে নুরুল ইসলাম মামলা প্রত্যাহার শর্তে শারমিনকে বিয়ে করার ও বশে আনে তার পরিবারকে। কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও ভিকটিম মামলা প্রত্যাহার না করায় নুরুল ইসলাম শারমিনকে হত্যার কৌশল নেয়। তারই অংশ হিসাবে গোপনে বিয়ের প্রলোভনে শারমিনকে গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরে এনে লালদিঘির পাড়স্থ একটি হোটেলে রাখে। এখানে তাকে রেখে নুরুল ইসলাম খুনের পরিকল্পনা করে। এ কাজে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করে তার আত্মীয় লালখান বাজারের বসবাসকারী ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার মৃত গোলাম হোসেন এর পুত্র আকতার হোসেন(৩৫) ও রাউজানের জিয়াবাজার এলাকায় বসবাসকারী নোয়াখালীর হাতিয়া বাজারের রাশেদ মিয়ার পুত্র ট্যাক্সি চালক মেহেরাজ প্রকাশ মিরাজ (২৩) এর সাথে। তিনজনের পরিকল্পনা অনুসারে গত ১৮ নভেম্বর হোটেল থেকে শারমিনকে নিয়ে ট্যাক্সিতে করে কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন স্পটে বেড়াতে বের হয়। এভাবে ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে ১৯ নভেম্বর তারা শহরে ফিরে যাওয়ার আগে সুযোগ খুঁজে শারমিনকে হত্যা করে।

হত্যার পর তারা কাপ্তাই রোড ধরে শহরের দিকে এগুনোকালে রাউজানের পাহাড়তলী এলাকায় নিরিবিলি জায়গা এসে তিনজনই শারমিনকে প্রথমে গলা চেপে ধরে। পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে ট্যাক্সি গাড়ির ভিতর। এর পরে গাড়িটি নোয়াপাড়া পথেরহাট থেকে উত্তরমুখী রাউজান-নোয়াপাড়া সেকশন -২ পথের প্রায় চার কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে নিরিবিলি স্থানে লাশটি ফেলে চলে যায়।

রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুণ বলেন, গত বছরের ২০ নভেম্বর রাউজানের পূর্ব গুজরা পুরাতন রুগুনন্দন চৌধুরী হাটের পূর্ব দিকে সিকদারের টেক থেকে একটি অজ্ঞাতনামা তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার পর পরিচয় শনাক্তে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

তদন্তে জানা যায়, নিহত তরুণীর নাম আমেনা আক্তার শারমিন (২২)। পরে সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি বলেন, শারমিনকে চট্টগ্রাম এনে অটোরিক্সাযোগে কাপ্তাই, লিচুবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে রাউজানের পাহাড়তলী বাজার অতিক্রম করার পর চলন্ত অটোরিক্সায় নুরুল ইসলাম ওই তরুণীর গলা চেপে ধরেন। এসময় আক্তার হোসেনও তার হাত ও পা চেপে ধরেন। তাৎক্ষণিক শারমিনের গলায় থাকা ওড়না প্যাঁচিয়ে নুরুল ইসলাম ও আক্তার হোসেন তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে তারা অটোরিক্সাচালক মেহেরাজের যোগসাজশে শারমিনের মরদেহ ফেলে চলে যায়।