অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“সম্মানিত লোক হলে পদত্যাগপত্র সব সময় পকেটে রাখবেন”: নতুন ইসিকে গয়েশ্বর

0
.

নতুন নির্বাচন কমিশনকে সব সময় একটি পদত্যাগপত্র পকেটে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

আজ মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে বরিশালে ‘তেল, গ্যাস, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও অব্যবস্থাপনার প্রবিাদে মহানগর বিএনপির বিশাল সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান।

সমাবেশ মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থানা থেকে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে জানতে চেয়েছেন। আমাদের ইস্যু হল, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, জিনিসপত্রের দাম কমানোর। আমাদের ইস্যু হল নিরাপত্তা। নির্বাচন কমিশন নিয়ে কিসের কথা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করবে-এই কথা যে বিশ্বাস করে তার পাগলা গারোদে চিকিৎসা করা দরকার। পাঁচটা ফেরেস্তা নির্বাচন কমিশন হয়েও কোনো লাভ নেই। শেখ হাসিনার মতো একটা সরকার ক্ষমতায় থাকলে। আমাকেও যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানায়, আমার ভোট আমি দিতে পারব না। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো কথা নেই।

তিনি আরো বলেন, আগে সরকার যাবে, তারপর এই নির্বাচন কমিশনকে বিদায় নিতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য যে সরকার আসবে-যেটা জনগন চায়। তারপর নির্বাচন কমিশন হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন- তারা যদি সৎ ও সম্মানিত লোক হন, প্রস্তুত থাকতে বলব, একটা পদত্যাগপত্র লিখে পকেটে রাখবেন, যথা সময়ে বঙ্গভবনে পৌঁছে দিবেন। আপনাদের অধীনে নির্বাচন হবে না, কেউ-ই বলে আপনাদের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম উল্লেখ না করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কেউ কেউ নতুন নির্বাচন কমিশনকে সার্টিফিকেট দিতে পারেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভালো-এই সার্টিফিকেট যিনি দিলেন তিনি তো নির্বাচনও করেন না, কোনো নির্বাচনে দাঁড়ানও না। অতীতেও দাঁড়াননি। সেই নির্বাচন কমিশন ভালো মন্দে উনার কী যায় আসে। সুতরাং উনি যদি এই কথা বলে থাকেন, এই নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করেন, আমি বলব তারও মনে হয় চিকিৎসার দরকার আছে। কাঠাল দিয়ে কখনো আমসত্ব হয় না।

সরকার বিরোধী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমার মনে হয় নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা বন্ধ করা দরকার। সকল শক্তিকে একসঙ্গে করে জনগনের পক্ষে দাঁড়ান। জনগণের বিপক্ষে যারা আছে তাদের নামাতে হবে। তারপর জনগন সিদ্ধান্ত নিবে কাকে ভোট দিবে, কাকে ভোট দিবে না। কাকে সরকারে আনবে, কাকে আনবে না। এর বাইরে আর কোনো শব্দ নেই।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, দলের নেতাকর্মী আপনাদের সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। সরকার যখন বিপদে পড়ে তখন বড় বড় লোভ দেখায়; আবার কাউকে কাউকে ভয় দেখায়। আমরা যেন লোভেও না পড়ি, ভয়েও মাথা নত না করি। জনগনের দল বিএনপি, জনগনের পাশে বিএনপি থাকবে। স্বাধীনতার যুদ্ধে জনগনের পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন জিয়াউর রহমান, নয় বছর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ভোটাধিকার ও গনতন্ত্র উদ্ধার করেছেন। ইতিহাস তো বিএনপির আছে, ওদের কোনো ইতিহান নেই। ওরা মুক্তিযুদ্ধের দাবি করে, আমি অস্বীকার করি না তারা মুক্তিযোদ্ধা না। ওরা অধিকাংশ প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হারিকেন দিয়ে খুঁজে পাওয়াও কষ্টের। এখন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। যাদের মা-বাবার বিয়ে হয়নি, তারাও মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়েছে।

এই সরকারের পালাবার জায়গা নেই বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সরকারকে বলব, আপনাদের পালাবার জায়গা নেই, কোনো দেশ আপনাদের গ্রহন করবে না। দেশেই যেহেতু থাকতে হবে, তাহলে চুরির মাল ফেরত দেন। যেসব টাকা বিদেশে আছে, তা আনার ব্যবস্থা করেন। আমেরিকার সরকার যদি সাড়ে ছয় লক্ষ কোটি টাকা বাতিল করে, তাহলে কার টাকা বাতিল করবে? বাংলাদেশের টাকা। তাতে শেখ হাসিনার আসে যায় কী। কিন্তু আমাদের তো আসে যায়।

তিনি আরও বলেন, সারা পৃথিবীতে তেলের দাম করতেছে আর বাংলাদেশে বাড়ে। তেলের দাম, গ্যাসের দাম যদি বাড়ে তাহলে আর কিছুর দাম বাড়ানোর দরকার আছে। তেল ও গ্যাসের সাথে শিল্প ও কৃষির সব কিছুর উৎপাদন, পরিবহনসহ সব ধরনের পন্যের ব্যয় জড়িত এ কারণেই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি।

গয়েশ্বর বলেন, এই সরকার লুটপাটের উর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, ভোটচুরি, মিথ্যা কথায় উর্ধ্বগতি। দামের দিক দিয়ে নিম্নগতি আছে, মানুষের জীবন, মা বোনের ইজ্জত। এদের জন্য কান্নার লোক থাকে না। এভাবে দেশ চলতে পারে না।

তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবি কার কাছে করব? যিনি বাড়ায় তার কাছে? তিনিই তো সরকারের লোকজনদের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায়, মূদ্রাপাচার করে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, যেসব ব্যবসায়ীদের পুঁজি ও আয় কম তাদের ওপর এনবিআরের চাপ কত। বিক্রি করেন বা না করেন টাকা আমার চাই।
দেশের টাকা যদি বিদেশে পাচার না হত, তাহলে তা দেশে বিনিয়োগ হত। আমাদের দেশে কর্র্মসংস্থান হত, তাহলে আমাদের যুবক ভাইদের বিদেশে যেতে হত না। ভূমধ্য সাগরে ডুবে মরতে হত না। জিনিসপত্রের দাম ও বেকাত্ববৃদ্ধির কারনে আজ ঘরে দুর্ভীক্ষ চলছে বলে উল্লেখ করেন গয়েশ্বর।

প্রশাসনের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, আজকে আমাদের বিরুদ্ধে যাদের কাজে লাগাচ্ছে, ডিসি,এসপি, পুলিশ র‌্যাব তাদের জিজ্ঞাস করব, বাজারে গেলে আপনাদের কাছ থেকে দাম কম নেয়? রাখে না। সব পুলিশ তো ঘুষ খাওয়ার সুযোগ পান না। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সবাই ঘুষ খান না, ঘুষ পান না। হয়ত শতকরা পাঁচজন খান। বাকি ৯৫ ভাগ কষ্ট করে চলতে হয়।

সমাবেশে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মীর জাহিদুল ইসলাম জাহিদের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিস জাহান শিরীন, আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, মেজবাদ উদ্দিন ফরহাদ, এবাদুল হক চাঁন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাবৃন্দ।