অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

লিবিয়ায় অপহরণের শিকার বাংলাদেশি সাংবাদিক জাহিদ, প্রকৌশলী সাইফুলসহ ৩ জন

0
প্রকৌশলী সাইফুল ও সাংবাদিক জাহিদুর রহমান (চেক শার্ট)।

ঢাকা থেকে লিবিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি সাংবাদিক জাহিদুর রহমান (৪৮) ও লিবিয়ায় তার সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ৫ দিন ধরে নিখোঁজ আছেন।  এছাড়া একই সময় থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তাদের লিবিয়ার গাড়িচালক মোহাম্মদ খালেদও।

পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ মার্চ সাংবাদিক জাহিদ তার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে পারিবারিক ভিসা নিয়ে লন্ডনে যান। সেখান থেকে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ঘুরে ২১ মার্চ তিনি লিবিয়ায় পৌঁছান। পরদিন ২২ মার্চ তিনি নিজের ফেসবুকে ত্রিপোলী থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশটিতে প্রবেশ ছিল রীতিমতো বেশ চ্যালেঞ্জের।

লন্ডনে যাওয়ার আগেই বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঢাকা থেকে ভিসা সংগ্রহ করেন। অবশ্য লন্ডন থেকে জাহিদুর রহমানের একাধিক রিপোর্ট এনটিভিতে প্রচার হয়েছে।

জাহিদের পরিবার বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে তাদের অপহরণ করা হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

তবে লিবিয়ায় থাকা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের পরিবারের ধারণা, ত্রিপলিতে যেহেতু মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণ কম কাজেই ক্ষমতাসীন সরকারের কোনো বাহিনীর কেউও তাদের ধরে নিয়ে যেতে পারে।

লিবিয়ার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান বলেন, তারা এখন ধারণা করছেন কোনো মিলিশিয়া গ্রুপই তাদের ধরে নিয়ে যেতে পারে।

গত ২১ মার্চ লিবিয়ায় যান জাহিদুর। তার স্ত্রী তাসলিমা রহমান বলেন,সর্বশেষ ২৩ মার্চ দুপুরে জাহিদের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। পরে তার ফোন বন্ধ পান। লিবিয়ার কোরিনথিয়া হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তিনি ফেরেননি।

জাহিদুর রহমান অবশ্য ২৩ মার্চ দুপুর ১টা ৪৯ মিনিটে কোরিনথিয়া হোটেল থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এরপর থেকে তার কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি। তিনি আর ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন না।

জাহিদুর রহমান এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধির পাশাপাশি সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও পরিচালক। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

তাসলিমা রহমান জানান, প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে দূতাবাস থেকে খোঁজ জানাতে বলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়। এরপর তারা জানতে পারেন জাহিদুর রহমানকে কে বা কারা অপহরণ করেছে।

২২ মার্চ দুপুরে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির ময়দানে সোহাদা নামে পরিচিত গ্রিন স্কয়ারে গিয়ে একাধিক ছবি তোলেন।

সেখান থেকে তিনি লেপসিস ম্যাগনা এলাকায় যান। গ্র্রিন স্কোয়ারে লিবিয়ায় জাতীয় পতাকা হাতে এক বৃদ্ধের সঙ্গে তিনি একাধিক ছবিও পোস্ট করেন নিজের ফেসবুকে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম টিপু এবং তাদের লিবিয়ান গাড়িচালক মোহাম্মদ খালেদ।

লিবিয়ার ত্রিপোলিতে সাংবাদিক জাহিদুর রহমান। নিষিদ্ধ এলাকায় এ ছবি তোলার পরই তারা অপহরণের শিকার হন।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গাদ্দাফির সময় এই এলাকাটি গ্রীন স্কয়ার নামে পরিচিত ছিল। তবে, ২০১১ সালের ২১-২২ আগস্ট লিবিয়ার বিদ্রোহীরা এই জায়গার নিয়ন্ত্রণ নেন। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিহতদের স্মরণে তারা এই জায়গাকে শহীদদের স্মরণে মার্টিয়াড স্কয়ার নাম দেন। এখানে গিয়ে লিবিয়ার পতাকা হাতে ছবি তোলার পরপরই সরকারি লোকজনের সন্দেহ হয়। এসবের জের ধরে কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

জাহিদুরের নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম বলেন, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান বলেন, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম সরকারের কোনো সংস্থা তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে। এখন মনে হচ্ছে তাকে কোন মিলিশিয়া গোষ্ঠীও ধরে নিয়ে যেতে পারে। আমরা এখনো ঠিক নিশ্চিত নই। তবে, ২৩ মার্চ কোন জায়গা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটি আমরা এখন মোটামুটি জানতে পেরেছি। ত্রিপোলিতে সাংবাদিক জাহিদুর রহমান নানা জায়গায় ছবি তুলছিলেন। এখানে ছবি তোলা নিষেধ। এটি একটি বড় কারণ। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।

প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, তাদের ৩ জনকে একসঙ্গে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে, ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি গাড়ির চালক তার পরিবারকে ফোন করেছিলেন। তাদের সম্ভবত এখন আলাদা করে রাখা হয়েছে। যাই হোক তাদের উদ্ধারের জন্য আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আপনারা দোয়া করেন। এটা আমাদের জন্য এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ।