অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

হালদায় মিলছে না আশানুরূপ মাছের ডিম

0
আশানুরূপ মাছের ডিম মিলছে না হালদায়।

জিয়া চৌধুরী, হাটহাজারী প্রতিনিধি:
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামে ঘোষিত চট্টগ্রামের হালদা নদীতে আশানুরুপ ডিম ছাড়েনি কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ) মা মাছ। এবার পূর্নিমার জো থাকায় ডিম সংগ্রাহকরা আশা করেছিল সোমবার জোয়ারের শুরু থেকে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে। কিন্তু বজ্রসহ তীব্র বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত পাহাড়ী ঢল সৃষ্টি না হওয়ায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি। আশানুরুপ ডিম না পাওয়ায় ডিম সংগ্রাহকদের মনে হতাশা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সোমবার ভোর ৫টা থেকে ডিম সংগ্রাহকরা শত শত নৌকা আর বাঁশের ভেলা নিয়ে হালদায় ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি নেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মা মাছ অল্প অল্প ডিম ছাড়তে শুরু করে। জোয়ারের শুরু থেকে দুপুর পর্যন্ত নদীর নয়াহাট, মাছুয়াঘোনা বাঁক, আজিমের ঘাট অংশে ডিম ধরা পড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের জালে। কোথাও কোথাও দুই তিনটি নৌকা মিলে এক বালতি ডিম পেলেও বেশিরভাগ ডিম সংগ্রহকারীরা খুব অল্প পরিমানেই ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

.

স্মরণাতীত কাল থেকেই চৈত্র-বৈশাখ মাসে হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। ডিম সংগ্রাহকরা নৌকা ও একপ্রকার বিশেষ জাল দিয়ে সেই ডিম সংগ্রহ করে বিশেষভাবে নির্মিত পাকা বা মাটির কুয়ায় সেই ডিম ফুটিয়ে রেনু তৈরী করে। পরে পুকুরে সেই রেনুকে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে পোনায় পরিণত করা হয়। প্রাকৃতিক ভাবে ব্রিডিং হওয়া হালদার পোনা খুব অল্প সময়ে বড় হয় বলে সারা দেশে হালদার পোনার বিশেষ চাহিদা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিদের্শনা অনুসারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং নৌ পুলিশ হালদার পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ তৎপর ছিলেন। হালদা নদীর জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় মা মাছ ধরা বন্ধ রাখা ও মিঠা পানির ডলফিন রক্ষায় প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত ছিল। নদী থেকে মাছ চুরির ঘটনা সনাক্ত করতে মদুনাঘাট থেকে আমতুয়া পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলন, ড্রেজার ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা বন্ধের পরও আশানুরুপ ডিম না পাওয়ায় ডিম আহরণকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মনে হতাশা দেখা দিয়েছে।

মাদার্শা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী শফিউল আলম জানান, তিনি ৩টি নৌকার মাধ্যমে ৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। সেই ডিম মাছুয়াঘোনা হ্যাচারিতে রেখে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজ করছেন। তিনি বলেন, এই তিথিতে পুরোদমে ডিম না ছাড়লেও পরের তিথিতে বজ্র সহ বৃষ্টিপাত হলে আশানুরুপ ডিম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

.

হালদার উপর পিএইচডি ডিগ্রীধারী হালদা গবেষক ও চট্রগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের প্রভাষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদা নদীতে বর্তমানে যে ডিম পাওয়া গেছে তা মুলত নমুনা ডিম, যেহেতু এখনো বজ্রপাতসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল হয়নি তাই মা মাছ ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিমাণ পায়নি। তবে পরিবেশ অনুকুলে থাকলে এখনো পর্যন্ত ডিম ছাড়ার সময় রয়েছে। তা না হলে পরবর্তী (২৮-৩১) মে অথবা (১৩-৩) জুন ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে হালদা নদীর পানির গুনগত মান স্বাভাবিক অর্থাৎ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের মান আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। এবং হালদা নদীর পানিতে লবনাক্ততার উপস্হিতি পাওয়া যায়নি। সুতরাং হালদার পানি মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকুলে। শুধুমাত্র বজ্রপাত সহ বৃষ্টির অপেক্ষা।

সরকারি হ্যাচারী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহিদুল আলম বলেন, ভোর থেকেই নদীতে অবস্থান করছি। ডিম সংগ্রহকারীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এখনো পুরোপুরি ভাবে ডিম ছাড়ছেনা মা মাছ। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেই পুরোদমে ডিম ছাড়বে বলে আশা করছি।