অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামের আলোচিত ঘটনা

0
চট্টগ্রাম মহানগরী।

নানান ঘটনা ও ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে ২০১৬। এসেছে নতুন বছর ২০১৭। বিদায়ী বছরে বন্দর নগরী ও জেলা চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যা আলোচনা সমালোচনা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহিবিশ্বেও আলোড়ন তুলেছে। বিদায়ী বছরে এমন কয়েকটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।

নগরীর জলসা মার্কেটের এ ভবন একটি অপরটির উপর হেলে পড়ে।

ভূমিকম্পে হেলে পড়ে ১০ ভবন: ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যায় ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে অন্তত ১০ থেকে বহুতল ভবন হেলে পড়ে। এসময় হুড়োহুড়ি করে বিভিন্ন ভবন থেকে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৬ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে।
ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানায়, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ টায় সৃষ্ট প্রচন্ড ভূমিকম্পে (রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২) সারাদেশের ন্যায় কেঁপে উঠে চট্টগ্রামও। এসময় প্রাণ বাঁচাতে নগরীর বিভিন্ন ভবন থেকে লোকজন বাইরে বের হয়ে আসে। হুড়োহুরি করে নামতে গিয়ে নগরীর অক্সিজেন ট্যানারী বটতল এলাকায় ১৫ নারী পোষাক শ্রমিক আহত হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস আলাদা আলাদা কমিটি গঠন এবং ভবনগুলো পরিদর্শন করে চিহ্নিত করে ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হলেও ৯ মাসেও কার্যকর হয়নি।

.

এসপি স্ত্রী মাহমুদা খুন: ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড বলতে গেলে বছরের শেষ ৬ মাস জুড়ে আলোচিত ছিল। গত ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড়ে আততীয়দের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সহধর্মীনি মাহমুদা খানম মিতু। ঐদিন সকালে নিজের শিশু সন্তানকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বাসা থেকে জিইসির মোড়ে যাবার সময় নির্মম হত্যাকাণ্ডে শিকার হন মিতু। এ ঘটনা শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশে প্রশাসনকে নাড়িয়ে দেয়। আলোচিত হয় বহিবির্শ্বে। এ ঘটনার জন্য প্রথম দিকে জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও নানা নাটকিয়তায় মোড় ঘুরতে থাকে আলোচিত এই খুনের ঘটনা। তৎকালিন এসপি বাবুল আক্তার নিজেই বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছিলে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামী করে। পরে ঘটনা চক্রে স্বামী বাবুল আক্তারকেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ চালায় ডিবি অফিসে নিয়ে। ২৪ জুন মধ্যরাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে পুলিশ তুলে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। অনেক নাটকীয়তার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর বলা হয় বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। প্রায় ৭ মাস হতে চলছেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কোন কুল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর বাবুল এবং এক সপ্তাহের ব্যবধানে তার শশুর (মিতুর পিতা) মোশারফ হোসেন চট্টগ্রামে এসে ডিবি অফিসে হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন।

কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদেিএলাকাবাসীর বিক্ষোভ।

কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পুলিশে গুলিতে ৪ খুন: শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন জেলার বাঁশখালিতে স্থাপিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (এসএস পাওয়ার লিমিটেড) স্থাপন নিয়ে গন্ডামারা গ্রামবাসীসহ আসে পাশের কয়েক গ্রামের মানুষের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এলাকারবাসীর বিশাল একটি অংশ কয়লা বিদ্যুতের কারণে পরিবেশ সহ অন্যান্য ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে এর বিরোধীতা করে আসছিলেন। ৪ এপ্রিল এনিয়ে গন্ডামারা গ্রামে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পক্ষ নিয়ে বিপক্ষ গ্রামবাসীদের উপর গুলি চালায়। এতে ব্যাপক সংর্ঘষ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের গুলিতে সেদিন মারা যায় ৪ নিরীহ গ্রামবাসী। আহত হয় অন্তত অর্ধশত নারী পুরুষ। এ ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য জেলা প্রশাসনসহ একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। ক্ষতিপূণ দেয়া হয় আহত নিহত পরিবারকে। এ ঘটনার পর থেকে কয়লা বিদ্যুৎ বিরোধী আন্দোলন চাপা পড়ে যায়।

.

অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা রনি গ্রেফতার: চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বিগত কমিটি গুলো মধ্যে বতর্মান কমিটির সাধারণ নুরুল আজিম রনি ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে দলের কর্মী এবং দলের বাইরেও সবার কাছে পরিচিত। ছাত্র সংশ্লিষ্ট এবং শিক্ষাবান্ধব আন্দোলন করে আলোচিত হন তিনি। বিশেষ করে শিবিরের দুর্গ হিসেবে কয়েক যুগ ধরে চলে আসা চট্টগ্রাম কলেজ মহসিন কলেজ থেকে প্রশাসনের সহযোগিতায় শিবিরকে বিতাড়িত করে রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নিজেদের দখলের নেয়ার পর থেকে নেতাকর্মীদের মধ্যে রনির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু নগরীর বাইরে জেলার হাটহাজারী ইউপি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিষ্ট্রেট ৭ মে শনিবার সময় নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে পিস্তলসহ আটক এবং বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় রনির বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেসহ ২টি মামলা হয় হাটহাজারী থানায়। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত রনিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৬ এর দুটি ধারায় এক বছর করে মোট দুই বছর কারাদন্ড দেন।
পরদিন পুলিশ রনিকে সরাসরি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনাও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে রনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তিপান।

.

আনোয়ারায় ডাই অ্যামোনিয়া গ্যাস প্লান্টে বিস্ফোরণ: ২২ আগস্ট রাতে জেলার আনোয়ারা উপজেলার রাঙাদিয়া গ্রামে অবস্থিত ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি-১) সার কারখানায় বিস্ফোরণে ব্যাপক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে আশে পাশে গ্রামে বাসিন্দারা ক্রমান্বয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। বাতাসে গ্যাসের তীব্রতা ছড়িয়ে পড়ে তা নগরীর আগ্রবাদ বন্দর ইডিজেড, হালিশহর পতেঙ্গা এলাকতে শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত হয় শত শত লোকজন। ৫০০ টন ধারণক্ষমতার ট্যাংকটিতে ৩৪০ টন তরল অ্যামোনিয়া ছিল। বিস্ফোরিত হয়ে তার বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আতংকিত হয়ে পড়ে। অসুস্থ্য হয়ে পড়া স্থানীয় শতাধিক আনসার সদস্যসহ ৩ শতাধিক মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে। রাতভর চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম পরিস্থিতি সামাল দেয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাড়ি ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ মেয়রের: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্প পাশের জন্য মন্ত্রণালয় কতিপয় কর্মকর্তা ঘুষ হিসেবে পাজেরো গাড়ি চেয়েছেন দাবী করে ব্যাপক আলোচনা জন্ম দিয়েছিলেন মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দিন। ১০ আগষ্ট বুধবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে “নগর সংলাপ” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে মেয়র নাছির বলেছিলেন, “প্রকল্প অনুমোদনের জন্যে একজন যুগ্ম সচিব একটি নতুন পাজেরো জিপ চেয়েছেন। ৫ শতাংশ কেটে রাখার জন্যে রাজি হলে ৮০ কোটি টাকার স্থলে ৩০০-৩৫০ কোটি টাকার তহবিল আনতে পারতেন চসিকের জন্যে” মেয়রের এ বক্তব্য মিডিয়াতে আসার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মেয়র নাসিরের এ বক্তব্যের প্রমাণ দেয়ার জন্য ৭দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শোকজ করেন। মেয়র তার কাছে প্রমাণ আছে দাবী করলেও পরে এ ঘটনা চাপা পড়ে যায়।

মন্ত্রী এমপির বাকবিতণ্ডা।

মন্ত্রী মোশাররফের উপর চড়াও হন সাংসদ আফছারুল আমিন: নগরীর পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে ৯ এপ্রিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল আলোচনায় দুই মন্ত্রী ও সাংসদ পরস্পপরের প্রতি মারমুখি আচরণ এবং প্রকাশ্যে ঝগড়ায় পন্ড হয়ে যায় আলোচনা অনুষ্ঠান। সভায় উড়াল সেতু নির্মাণ নিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন এমপির উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এ সময় আফসারুল আমীনকে বারার মন্ত্রী মোশাররফের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। আফসারুল আমীন অনুসারীরা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে সভাস্থলে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশের সহায়তায় তিনি সভাস্থল ত্যাগ করেন। ‘টেকসই জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম সহ শত শত দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাগণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক আলোচিত হয়।

কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ: প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হবে ট্যানেল। যার ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। নতুন বছর থেকে এর কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এটি নির্মিত হলে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের চিত্র পাল্টে যাবে এমন ধারণা চট্টগ্রামবাসীর। এই ট্যানেলের সুবাধে কর্ণফুলি তীর ঘেঁষে চীনের সাংহাই শহরের আদলে গড়ে উঠবে একটি উপশহর। সৃষ্টি হবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। গত ১৪ অক্টোবর টানেল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। নদীর তলদেশে টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ হাজার ৫ মিটার (তিন কিলোমিটারের বেশি)। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে টানেলের নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। এই টানেল নদীর পূর্ব তীরের আনোয়ারা উপজেলা ও কর্ণফুলী উপজেলাকে চট্টগ্রাম মহানগীরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। ফলে বিশাল এ প্রকল্প নিয়ে বছর জুড়ে আলোচনা ছিল চট্টগ্রামবাসীর কাছে।

.

কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের রহস্যজনক মৃত্যু: বিগত বছরে চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে গত ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকার ভাড়া বাসায় রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগে সহ সম্পাদক ও চবি ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর। ঐদিন রাতে গলায় ফাঁস লাগানোবস্থায় দিয়াজকে নিজ কক্ষে ঝুলতে দেখে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে চবি ছাত্রলীগের একাংশ এবং দিয়াজের পরিবার এটিকে পরিকল্পিত হত্যা দাবী করে আসছেন। কিন্তু প্রথম ময়নাতদন্তে দিয়াজের মত্যু আত্মহত্যা বলে রিপোর্ট আসলেও তার পরিবার তা প্রত্যাক্ষান করে। এবং পরিবারের পক্ষ থেকে ২৪ নভেম্বর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এতে চবি’র একজন সহকারী প্রক্টর এবং ছাত্রলীগ নেতাদের আসামী করা হয়। এ হত্যাকা- নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে চবিতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎকরা এসে দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে নিয়ে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেন। এবং এতে বলা হয় আঘাত জনিত কারণে দিয়াজের মৃত্যু হয়েছে। মামলাটি এখন আদালতে বিচারধীন।

.

আল্লামা জালাল উদ্দীনের ইন্তেকাল: দেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গর্ভনর, চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব, জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা জালাল উদ্দীন আল কাদেরী ২৬ নভেম্বর রাত ১০ টা দিকে রাজধানীর ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার মত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঢাকা-চট্টগ্রামে ৪ দফা জানাজা শেষে তাকে নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রসা সংলগ্নকবরাস্থানে দাফন করা হয়। প্রখ্যাদ এই আলেমে দ্বীনের জানাজায় চট্টগ্রামে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয়।

.

কাট্টলীর জঙ্গি আস্তানায় অভিযান: বিগত বছর জুড়ে চট্টগ্রামে একাধিক জঙ্গি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে বেশ কয়েকজন জঙ্গি। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর ভোরে নগরীর উত্তর কাট্টলী কর্ণেলহাট এলাকার একটি বাড়ি ঘেরাও করে র‌্যাব র‌্যাব ৪/৫ ঘন্টা ব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে ৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার ও অস্ত্র বোমা এবং বোমা তৈরীর বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। গ্রেফতাকৃত ৫ জনই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামিয়া বাংলাদেশের (হুজি-বি) সদস্য বলে র‌্যাব দাবী করেন। তবে গ্রেফতারদের কয়েকজনের পরিবার জানান তারা কেউ কেউ ৩ মাস কেউ ৫ মাস আগে নিখোঁজ হন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাদের ধরিয়ে নিয়ে যায় বলে পরিবার দাবী করেন। এবং সে সময় তাদের ব্যাপারে থানায় জিডিও করা হয় বলে জানান।

.

হারিয়ে গেলেন আঞ্চলিক গানের সম্রাট গফুর হালী: বছরের শেষ দিকে এসে চট্টগ্রামবাসী হারিয়েছেন দেশের লোকগানের অন্যতম পথিকৃৎ ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাট, কিংবদন্তি আব্দুল গফুর হালীকে। গত ২১ ডিসেম্বর বুধবার ভোর ৫টা ৪৮মিনিটেচিকিৎসাধীন অবস্থায় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীনবস্থায় সঙ্গীতের এই দিকপালের জীবনাবসান ঘটে। তার মৃত্যু পুরো চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। ৮৮ বছর বয়সে এ সঙ্গীত জগতের এ দিকপালের জীবনাবসান ঘটে। ৬০ বছর ধরে একটানা গান লিখে চলা হালী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত দুই মাস ধরে হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিলেন। গফুর হালীর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আবদুল গফুরের জন্ম ১৯২৯ সালে পটিয়ার রশিদাবাদে। বাবা, আবদুস সোবহান, মা গুলতাজ খাতুন। লেখাপড়া করেছেন রশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে। রশিদাবাদ আরেক সাধকশিল্পী আস্কর আলী পন্ডিতের গ্রাম। আস্কর আলীর গান শুনে বড় হয়েছেন গফুর। ছোটবেলায় তাঁর আধ্যাত্মিক ও মরমি গান গফুরের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। ৫৪ বছর ধরে টানা লিখেছেন আবদুল গফুর হালী। তার লেখা দেশজুড়ে খ্যাত গানের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হলো “সোনাবন্ধু তুই আমারে করলি দিওয়ানা” “রসিক তেল কাজলা কোন পাঞ্জাবিঅলা” “মনের বাগানে ফুটিল ফুলগো” “তুঁই যাইবা সোনাদিয়া বন্ধু মাছ মারিবার লাই,‘অ শ্যাম রেঙ্গুম ন যাইও” “বানুরে অ বানু আঁই যাইমুব রেঙ্গুম শরত তোঁয়ার লাই আইন্যম কী” কিংবা মাইজভান্ডরী গান- দেখে যারে “মাইজভান্ডারে, কতো খেলা জানরে মাওলা, মাইজভান্ডারে কি ধন আছে” ইত্যাদি শত শত কালজয়ী গান।