অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে বিবাহিত নারীর সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবলের অবৈধ সম্পর্ক

0
.

চট্টগ্রামে বিয়ের প্রলোভনে ফেলে বিবাহিত এক নারীকে ধর্ষণ ও গোপন মেলামেশার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য তারিকুল ইসলাম রাজিবের (৩০) বর্তমানে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মালখানা শাখায় জেলা পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

তবে মামলা হওয়ার পর তাকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।

এ নিয়ে ভুক্তভোগি ওই গৃহবধূ কনস্টেবল রাজিবের বিরুদ্ধে আদালতে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মো. জমিউল হায়দারের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনালের পিপি এডভোকেট নিখিল কুমার নাথ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১ নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে। অভিযুক্ত কনস্টেবল তারিকুল ইসলাম রাজিব (৩০) পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ রানিপুর এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে বলে জানান এডভোকেট নিখিল কুমার নাথ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কনস্টেবল তারিকুল ইসলাম রাজিব চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের মালখানায় বদলি হয়ে আসার পর ভুক্তভোগী নারীর বায়েজিদ এলাকার বাসায় আত্নীয়ের মাধ্যমে সাবলেট উঠেন। বাসায় ভুক্তভোগী নারী স্বামী-সন্তানসহ বসবাস করতেন। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সাবলেট থাকা অবস্থায় তারিকুল ওই নারীকে ভুলিয়ে স্বামীর অবর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ছবি ও ভিডিও করেন এবং তিনি ওসি হলে তাকে বিয়ে করার আশ্বাস দেন। এভাবে তাদের দুজনের স¤ র্ক গভীর হয়।

পরে বাসায় ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক সেবনসহ বিক্রি করছিলেন কনস্টেবল তারিকুল। এসব অনৈতিক কাজে ভুক্তভোগী নারী বাধা দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চুপ থাকতে বলেন। এরমধ্যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপও দেন তারিকুল। পরে স্বামী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন তারিকুল। এসময় অজান্তে ওই নারীর বিভিন্ন গোপন ছবি এবং ভিডিও ধারণ করা হয়।

এদিকে কনষ্টেবল তারিকুল ওসি পদে পদোন্নতির কথা বলে নানা ভাবে প্রলোভনে ফেলে ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ টাকা আত্নসাৎ করেন। সে বলে, “চাকুরিতে প্রমোশন পেয়ে ওসি পদে পদোন্নতি ফেলে তোমাকে রাণীর মত করে রাখবো, তখন কোন কিছুর অভাব থাকবে না। এসব বলে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ টাকা নেয়। পরে আরও টাকা দাবী করলে না দেয়ায় তাদের মধ্যে তিক্ততার সম্পর্ক তৈরী হয়। তখন রাজিব ভয় দেখায় টাকা না দিলে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দিবে। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তারিকুলের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর বিভিন্ন সময় ফোনে ভুক্তভোগী নারীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দিতে থাকেন তারিকুল।

গত ৪ আগস্ট স্বামী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে তারিকুল ব্ল্যাকমেইলিং করে ভুক্তভোগী নারীকে আবারও শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করেন। তারিকুল বেরিয়ে যাওয়ার সময় এসব বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিলে ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ খুন করার হুমকি দেন ভুক্তভোগী নারীকে।

এ সময় তারিকুলকে রাগান্বিতভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে বাসার দারোয়ান ওই নারীর কাছে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সব খুলে বলেন। পরে স্বামী-আত্নীয় স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে বায়েজিদ থানায় মামলা করতে গেলে তারা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার আবেদন করা হয় এবং গত ১৮ সেপ্টেম্বর মামলা গ্রহণ করেন আদালত।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, কনস্টেবল তারিকুল আমাকে ফাঁদে ফেলে এসব কাজ করিয়েছেন এবং প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আত্নসাৎ করেছেন। গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) তার আরেক বন্ধুকে দিয়ে ফোনে আমাকে হত্যার হুমকি দেন। বর্তমানে আমি পরিবারসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এদিকে জানতে কনস্টেবল তারিকুল ইসলাম রাজিবের মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্কে বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, ২০১৬/১৭ ইংরেজি থেকে তার সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয়ের সুত্র ধরে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরী হয়। এবং আমাদের দুজনের মধ্যে ভাইবোনের সম্পর্ক থাকলে সে পরে আমাকে অবৈধ সম্পর্কে প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। আমি তার এ প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ার কারণে এবং গত মাসে আমি সামাজিকভাবে অন্যত্র বিয়ে করার পর থেকে সে আমাকে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছিল।

আমি তার কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি। বরং সে ভাই হিসেবে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আমার কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাওলাদ নিয়েছে। যা আমার কাছে প্রমাণ আছে।