অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিকতাহীন শিক্ষা!

0
সাইদুল ইসলাম।

মানুষের কল্যাণের জন্য সমাজের প্রয়োজন- তবে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। একসাথে মিলেমিশে থাকা, বিপদে আপদে একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে এটাই সমাজ গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যে ছিল। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় পারস্পরিক সহযোগিতা দূরের কথা ভালো করে কথা বলবে এমন প্রতিবেশি খুঁজে পাওয়া ভাগ্যর ব্যাপার। আমরা এতটাই স্বার্থপর হয়েগেছি যে একে অন্যর ভালো সহ্য করতে পারি না।

.

প্রতিনিয়ত অন্যর ক্ষতি করতে সমালোচনায় কান ভারী করছি বিভিন্ন প্রান্তে। অতি লোভ আমাদের আদর্শকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা আর আগের মতো বিবেক দিয়ে কাজ করি না বরং নিজের স্বার্থ উদ্ধারে প্রতিনিয়ত অন্যায়ের আশ্রয় নিচ্ছি। ভালো মানুষের সংখ্যা একেবারে নেই বললেই চলে তবে বিবেকহীন পশুরূপী মানুষের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে।

পটভূমি কি তা জানার প্রয়োজন নেই, টাকা থাকলেই যশ খ্যাতি সব হবে। ঐ যে বলে টাকার গায়ে কোনো কলংক নেই। আর যারা আইনের ‘আ’ ও বুঝেন না অথচ সমাজের মানুষ ছুটে যাচ্ছেন বিচারের আশায় তাদের কাছে। সমাজের অধিকাংশ মত মোড়লরা হয়তো অশিক্ষিত নয়তো অসৎ চরিত্রের অধিকারী। এরপরও অর্থ বিত্তের কারণে এরা সম্মানিত। নসিকেতার সেই বিখ্যাত গান- রাজনীতি করলেরে ভাই- ডিগ্রির কি প্রয়োজন- জনগণ তুলে দেবে- তোমার হাতে দেশের শাসন। তাই হয়তো এরিস্টটল গণতন্ত্রকে মূর্খের শাসন বলেছেন। আব্রাহাম লিংকনের গনতন্ত্রের সংজ্ঞা এখন বিকৃতি হয়ে এভাবে রূপ নিয়েছে-Government off the people, bye the people, far the people |

আপনার পরিবার খারাপ সেটা যদি আপনি অন্যর কাছে বলেন তাতে আপনার সম্মান কমবে বয় বাড়বে না। ঠিক তেমনি আপনি যদি আপনার সমাজের মানুষের বদনাম অন্য সমাজে গিয়ে করেন তাতে আপনার সম্মানটাই নষ্ট হবে। আপনি এক আঙ্গুল দিয়ে অন্যর দোষ দেখিয়ে দিচ্ছেন অথচ একটু নিজের বিবেককে প্রশ্ন করলে দেখা যাবে আপনার হাতের বাকি আঙ্গুলগুলো আপনার দোষত্রুটিগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে। মিথ্যা, দুর্নীতি, পরশ্রীকাতর, পরন্দিা, কৃতঘœ, অন্যায়, অবিচার,সহিংসতা এসব বিষয়গুলো আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। স্কুলের গ-ি পার করার সুযোগ হয়নি অথচ অবৈধভাবে কোটি টাকার মালিক হয়ে এখন অনেকেই শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগী কিংবা সমাজ সেবক হিসেবে সমাজে বেশ পরিচিত হচ্ছেন। হ্যাঁ মানলাম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও সমাজ সেবক কিংবা সমাজ নেতা হওয়া যায়। তবে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন বা শিক্ষকদের আদর্শ শেখানোর ব্যাপারে তাদের ভূমিকা কতটুকু যৌক্তিক! আর এদের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক শিক্ষিত মানুষও নিজের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে অন্য কৌশলে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়ে লেজুড়বৃত্তি করে যাচ্ছেন। আর যারা নীতিকে বিসর্জন দিয়ে এসব স্রোতে গা ভাসাতে পারছে না তারাই সমাজচ্যুত নয়তো নির্যাতিত। মহা বিপদে নীতিবানরা। আপনি জেনেশুনে হারাম পানীয় পান করছে অথচ মাকরুফ হবে ভেবে গোঁফগুলো আবার ছোটও রাখছেন তার মানে আপনি সমাজের মানুষের সাথে ভন্ডামি করছেন!

এটাই হাল বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার। মহাবিশ্বের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা আছে কিন্তু আহাম্মকীর নাকি সীমানা নেই। আর এমন সব আহাম্মকে ভরে গেছে পুরো সমাজ। তবে এটা অবধারিত সত্য খারাপের পরিণাম কখনো ভালো হয় না। গণতন্ত্রের বিষয়টি শুধুমাত্র পরিবার ও সমাজ কেন্দ্রিক রাখতে চাই কারণ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচনার করা বা সমালোচনা করার মত যোগ্যতা হয়নি বিধায় তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের হাতে ছেড়ে দিলাম। আলোচনার বিষয়টি ছিল সমাজ নিয়ে-সমাজ কার জন্য? সমাম গঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর সমাজ বিজ্ঞানে খুব ভালোভাবে লিখা আছে যদিওবা আমাদের সংস্কৃতিতে এসব ধারণার প্রয়োগ আধৌও হয়নি তা শুধুমাত্র গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সমাজ বিজ্ঞানের মূল বিষয়গুলো প্রয়োগ না হওয়ার একমাত্র কারণ নৈতিকতাহীন শিক্ষা। যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ পরিবার ও শিক্ষাঙ্গন জাতি গঠনে কাজ করে সেই দুটি প্রতিষ্ঠানে চরম অস্থিরতা কাজ করছে । শিক্ষা আর এখন সমাজ সংস্কারে কাজে আসে না বরং তা ব্যক্তি স্বার্থ অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার। বর্তমানে সময়ে একটা বিষয় আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সাথে ওৎপোতভাবে মিশে গেছে তা হলো ব্যানার সংস্কৃতি। নেতাদের তেল মেরে খুশি করার বেশ কার্যকর প্রক্রিয়া। অনেক সময় নেতারা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেকে জাহির করতে ব্যানার বানিয়ে এলাকায় এলাকায় টাঙিয়ে দেন। আর কিছু টাকার লোভে খুব উৎসাহে এমন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন নতুন প্রজন্ম। তবে ঘুর কেটে গেলে যে জীবনের আম ছালা দুটোই হারিয়েছে তা টের পেয়ে বৃথা আস্ফালন করবে এটা নিশ্চিত করা বলা যায়। নতুন প্রজন্মের বোঝা উচিৎ তাদের আসল কাজ কী? পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য কী? কার স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে তা বোঝার বোধগম্যতা না থাকলে বর্তমান প্রজন্মের মানসিক বিকাশ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে।

সমাজের সবচেয়ে আদি সংগঠন পরিবার অথচ আমাদের বর্তমান প্রজন্ম কী শিক্ষা পাচ্ছে পরিবার থেকে। একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। নিজের সুখ ভোগ বিলাশের জন্য ছোট পরিবার গঠন করছে মানুষ। তাতেও প্রকুত সুখের দেখা মিলছে। ইদানিং মিডিয়ার খবরগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-অধিকাংশ পরিবারে অস্থিরতা কাজ করছে। মা, বাবা তার সন্তানদের খুন করতে দ্বিধাবোধ করছেন পক্ষান্তরে সন্তানরাও মা, বাবার প্রতি সহিংস হয়ে নানাবিধি অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধের এমন অবক্ষয় হয়েছে প্রতিনিয়ত স্বামী স্ত্রীকে ঠকাচ্ছে কিংবা স্ত্রী স্বামীকে,পিতা-মাতা সন্তানদের, সন্তানরা পিতা-মাতাকে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত একে অপরের সাথে প্রতারণা করছে। দেশে শিশু হত্যার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে- যে হারে প্রতিদিন শিশু হত্যা হচ্ছে মনে হচ্ছে ক্রোধের কেন্দ্রবিন্দু এখন ঐ নিষ্পাপ শিশুরা। সিলেটে শিশু রাজন হত্যার বিচারের রায় খুব দ্রুত সময়ে দেওয়া হলেও তাতে কোনো প্রভাব পড়েনি এসব ঘটনার কমার ক্ষেত্রে। বরং শিশু হত্যা দেশব্যাপী বেড়ে চলেছে।

সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া ঐশী কর্তৃক মা,বাবাকে হত্যা, চট্টগ্রাকে মাকে হত্যা করে লাশ আট টুকরা করে ফেলে দেওয়া কিংবা বনশ্রীতে আপন মায়ের হিংস্রতার বলি ছেলে-মেয়ে। এসব ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে সমাজের অবক্ষয় কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। আর এসব হত্যাকা- সমাজের জন্য অশনী সংকেত বলছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। পারস্পরিক যে শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার তার লেশমাত্র নেই বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়। যে মানুষের কল্যাণে সমাজের সৃষ্টি সেই মানুষরাই আজ বলির পাঠা। আপনি সমাজের নেতা হয়ে বিচার করছের অথচ আপনার আইনের ফাঁকে লাভবান হচ্ছেন ক্ষমতাবানরা। আর ভাগ্যর নির্মম গ্যারাকলে ন্যায় বিচারে বঞ্চিত থেকেই যাচ্ছেন নির্যাতিত নিরহ মানুষরা। কার কাছে যাবে- কে শুনাবে আশার বাণী- সব দিকে শুধু হাহাকার।

আমরাতো বীরের জাতি, আমাদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। আমরা কি পারি না ঘুরে দাড়াতে? সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর আদর্শ দেশ গড়ে যেতে!। আসুন কবি সুকান্তের মত আমরাও স্বপ্ন দেখি-এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান…. এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি….নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ অঙ্গীকার।

লেখক: মো. সাইদুল ইসলাম চৌধুরী
বিএ(অনার্স)এমএসএম, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, চবি
উপাচার্য মহোদয়ের একান্ত সচিব ও জনসংযোগ কর্মকর্তা
সাদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।