অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে ভর্তি বাণিজ্য ও দূর্নীতিতে যুক্ত ৬৮টি স্কুলের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অভিযোগ

3
নগরীর ৫ স্থানে ছাত্রলীগের অভিযোগ বক্স বসানো হয়।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরকারী নির্দেশনা অম্যান্য করে বেসরকারী এবং আধাসরকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাণিজ্য অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশপাশি আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে অভিযোগবক্স বসায় ছাত্রলীগ। এসব বক্সে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুনীর্তির অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ যাচাই বাছাই শেষে সোমবার নগরীর ৬৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম দুর্নিতীর চিত্র তুলে ধরে জেলা প্রশাসনের কাছে একটি তালিকা জমা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পাঠক ডট নিউজের সাথে আলাপকালে মহানগর ছাত্রলগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের এ কর্মসূচিতে অভিভাবকরা ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। অনেকে নিজের সন্তানের কথা চিন্তা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত টাকা আদায় ও বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ করতে পারেন না। তারা লিখিতভাবে আমাদের জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য অভিযোগ।

রণি বলেন, শুধু অর্থিক বাণিজ্য বা অনিয়ন নয়। ধর্মীয় বৈসম্যের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। যেমন সাইথ পয়েন্ট স্কুলে ভর্তি মুসলিম শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১০ হাজার ১ টাকা। অথচ হিন্দু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১০ হাজার ৫’শ টাকা।

অপরদিকে রেসিডেন্টসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খ্রীষ্টান শিক্ষার্থী গুড মনিং এর পরিবর্তে সালাম দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অনেক বেসরকারী স্কুলে ধর্মীয় পুস্তকের নামে মওদূদীর বই পড়ানো অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়গুলো আমরা মাথায় রেখেছি।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্লাস ওয়ান শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচীতে ১৬ টি বই জুড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ প্রশ্নে জবাবে তরুণ এ ছাত্রলীগ নেতা বলেন, শুধু তালিকা তৈরী করেই আমাদের কাজ শেষ না।জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনও চলবে। আমরা মূলত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিক করণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছি।

এরপর আমরা শিক্ষামন্ত্রণালয়, শিক্ষাবোর্ড, দুদক, মাউসিকে লিখিত অভিযোগ দেবো। ইতোমধ্যে দুদকের সাথে আমাদের অনানুষ্ঠানিক কথা হয়েছে।আমাদের অভিযোগ শুনে ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কি পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয় এই মেমো তার প্রমাণ।

এদিকে রাতে নগর ছাত্রলীগের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলমান “ভর্তি দূর্নীতি বিরোধী” কার্যক্রমের অংশ হিসাবে নগরীর বিভিন্ন স্কুলের ভর্তি অনিয়মে জড়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা  বিকাল ৪ ঘটিকায় জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফিনের হাতে তুলে দেন নগর ছাত্রলীগ। নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি এসময় সরকারী বিধিমালা অমান্য করে ভর্তি অনিয়ম, দুর্নীতি সহ নানা অভিযোগে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত ৬৮টি স্কুলের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ সংশ্লিষ্ট সচিত্র প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাহামিনুর রহমান এ বিষয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, নগরীর ৫টি এলাকায় আমরা ৫টি অভিযোগ বক্স রেখেছিলাম যাতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের স্কুল ভর্তির বিড়ম্বনা এড়াতে আমাদের সাহায্য নিতে পারেন। আমাদের লক্ষ্য ছিল বিদ্যানন্দিনী শেখ হাসিনার শিক্ষা সেবা সহজলভ্য করে তোলার ক্ষেত্রে বিপত্তি সমূহ সকলের সামনে উপস্থাপন করা। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে না পারে। সরকারী নীতিমালা অনুসরন না করলে আমাদের তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু অভিভাবকদের সচেতনতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আজও থেকে গেলো।

নগরীতে স্থাপিত অভিযোগ বাক্সের মধ্যে জমা দেয়া অভিযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে পাওয়া অভিযোগ গুলো আমরা খোঁজ খবর নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছি। আমরা আশা করছি অনিয়মে অভিযুক্ত স্কুল সমূহকে একবিন্দু ছাড় দেয়া হবেনা।

আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে বলেছি নগরীর কাজেম আলী স্কুল ও রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের জমিতে ইমারত নির্মাণ ও দোকানপাঠ ভাড়া দিয়ে বাণিজ্যিকায়নের দায়ে জড়িতদের এমপিও বাতিল করা হউক।

নগরীর চিটাগাং গ্রামার স্কুল ও প্রেসিডেন্সী স্কুলের মত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সমূহের মধ্যে নজরদারী বাড়িয়ে তাদের আর্থিক অনিয়মের শাস্তি নিশ্চিত করা হউক। অভিযুক্ত স্কুল সমূহের পরিচালনা পরিষদ বাতিল করা হউক। যত্রতত্র কিন্ডার গার্ডেন স্কুল চালু করলে ব্যবস্থা নেয়া হউক। অভিযুক্ত স্কুলের পরিচালানা পরিষদ, উদ্যোক্তাদের দুদুকের আওতায় এনে তাদের সম্পত্তি যাচাই বাছাই করা হউক। আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ ও বিজ্ঞান কলেজের মত অতিরিক্ত অর্থ আদায়কারীদের জামায়াত মনোভাবাপন্ন স্কুলের অর্থ কি কাজে বিনোয়োগ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হউক।

এমপিও ভূক্ত স্কুল সমূহের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হউক। চট্টগ্রামের থানা শিক্ষা অফিসারদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণ দেখিয়ে তাদের বদলি করা হউক। ইংলিশ মিডিয়াম বিশেষ করে ব্রিটিশ ক্যারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের দেখাশুনার খাতটা নিশ্চিত করা হউক।

তালিকায় যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি অনিয়ম ও দূর্নীতি নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবরে জমা দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কুলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, মিলেনিয়াম পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ভোলানাথ মনোরমা উচ্চ বিদ্যালয়, YWCA স্কুল, বিএন স্কুল এন্ড কলেজ, ক্যান্টমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট জোসেফর্স টিউটোরিয়াল, কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাইনিং সান স্কুল, তানজিমুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদ্রাসা, ইউনাইটেড রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, আইল্যান্ড আইডিয়াল স্কুল, চিটাগাং ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মেরিট বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজ, ব্রাইট স্পার্ক গ্রামার স্কুল, ছায়াবিথী বিদ্যাপীঠ, মেরিট প্লাস স্কুল এন্ড কলেজ, মানারাত রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, আল নূর কেজি এন্ড হাই স্কুল, অরবিট গ্রামাবার স্কুল, Chittagong Royal Pre Cadet School & College, মেট্রোপলিটন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, মডেল এডুকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, অরিয়েন্ট ইংলিশ স্কুল, ফরেস্ট হিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ফেয়ার কেয়ার কে.জি এন্ড গার্লস হাই স্কুল, সিটি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, সানোয়ারা বালক ও নুরুল ইসলাম পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী এয়াকুব আলী বালিক উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সাউথ এশিয়ান স্কুল, রিডার্স স্কুল এন্ড কলেজ, গণপূর্ত বিদ্যানিকেতন, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ, টেকনু চাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, পুলিশ লাইন স্কুল, মির্জা আহমদ ইস্পাহানি স্কুল, সিডিএ পাবলিক স্কুল, চিটাগাং রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, বাকলিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, চিটাগাং ক্যান্টমেন্ট পাবলিক কলেজ, মির্জা আহমদ ইস্পাহানী স্মৃতি বিদ্যালয়, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, চিটাগাং আইডিয়াল হাই স্কুল, বিএন স্কুল এন্ড কলেজ, সাউথ পয়েন্ট স্কুল, রেডিয়েন্ট স্কুল, চট্টগ্রাম পুলিশ ইনস্টিটিউট, কদম মোবারক এম.ওয়াই.ই উচ্চ বিদ্যালয়, সারমন স্কুল, কাজেম আলী স্কুল, বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুল, শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিকেল স্কুল, আয়ুব বিবি সিটি কর্পোরেশন স্কুল, রহমানিয়া স্কুল, আসমা খাতুন কলেজ, ভাটিয়ালি স্কুল, গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড স্কুল এন্ড কলেজ, দারুল উলুম ইসলামী কিন্ডার গার্টেন স্কুল, ফিরোজ শাহ্ কিন্ডার গার্টেন, নতুনকুঁড়ি আইডিয়াল স্কুল, সেন্ট স্কলাটিকাস কিন্ডার গার্টেন, ইডেন স্কুল এন্ড কলেজ, নর্দান স্কুল।

৩ মন্তব্য
  1. Alim Uddin বলেছেন

    ওয়াওওওওওওও।

  2. Md Mannan বলেছেন

    ১০০%সঠিক সরকার এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিদায় এরা শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে।

  3. Ayaar Muhammad বলেছেন

    ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নতুন নতুন কাজ যুক্ত হচ্ছে!