বাবা দেখতে কেমন?
মোঃ গোলাম মোস্তফা:
সমাজের মাঝে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অনেক কিছু, তবে সবার আগে প্রয়োজন পরিবার। কারন পরিবার আছে বলে মানুষ তার জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলে নিজের মতো করে।
আর যার পরিবার নেই, তাহলে সে তার জীবনকে কিভাবে সাজিয়ে তুলবে? ঠিক এমন একটি মানুষ যার কোন পরিবার নেই, সে জানেনা তার বাবা কে, মা কে, ছেলেটির গ্রামের বাড়ী রসুলপুর। সে যখন মায়ের পেটে তখন তার বাবা মারা যান গাড়ী দুর্ঘটনায়।
তিন মাস পরে ছেলেটি পৃথিবীর সুন্দর আলো বাতাসের মাঝে এসেছে, তখন এলাকাবাসী তার নাম দিয়েছে ( সজীব )। সজীব এর বয়স যখন তিনবছর, তখন তার মা তাকে রেখে চলে যায়।
সজীব তার দাদার বাড়ীতে থাকেন দাদুর কাছে, আট বছর বয়সে সজীব তার দাদুকে হারায়। সে থেকে সজীব এর কষ্টের জীবন শুরু হয়, নানার বাড়ীতে গেলে মামারা তাকে তাড়িয়ে দেয়।
আমি সজীবের সাথে কথা বলার সময় নিজেকে বড় অসহায় মনে করছিলাম, মানুষের জীবন কত কষ্টের আমরা আসলে বুঝতে পারিনা, আবার বুঝার চেষ্টা করিনা কোন দিন। আমি তার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, দেখে মনে হচ্ছে সজীবের এর মাঝে ভালোবাসার অনেক অভাব।
কিছুক্ষন পর আবার কথা বলা শুরু করলাম, নানার বাড়ী থেকে তারিয়ে দেবার পর কোথায় গিয়েছিলে? রাস্তার পাশে ফুটপাতে শুয়ে থাকতাম সাহেব। কিছু দিন যাবার পর মেসে উঠি,তখন আমার বয়স দশ বছর। পেটের দায়ে রিকশা চালানো শুরু করি, একদিন মনে হলো আমাকে পড়া লেখা করতে হবে। আমি সজীবকে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন মনে হলো তোমাকে পড়া লেখা করতে হবে?
সজীব উত্তরে বললেন, একদিন আমি রিকশা নিয়ে রাস্তার পাশে বসে ছিলাম। এক বাবা তার সন্তানকে সাথে নিয়ে, আমার রিকশা করে স্কুলে গেলেন, আমি তাদের কে নামিয়ে আসার সময় আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। আজ যদি আমার বাবা থাকতো, তাহলে আমাকেও এইভাবে স্কুলে নিয়ে আসতো।
সাহেব আমার বাবা দেখতে কেমন আমি জানিনা, জন্মের পরে একবারের জন্যও বাবাকে ” বাবা ” বলে ডাকতে পারিনি। বাবার একটি ছবি অনেক খঁজেছি কোথাও পায়নি।
মাঝে মাঝে ঘুমানোর আগে খাতায় “বাবা” লেখে খাতার দিকে তাকিয়ে বাবা,বাবা,বলে ডাকি। সজীব আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলো সাহেব ” বাবা দেখতে কেমন হয়” আমি নিরব হয়ে গেলাম আমার কাছে কোন উত্তর ছিল না, সজীব কান্না করতে করতে আমায় বলছিলো সাহেব আমার জীবন এমন হলো কেন ?
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ,পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি , চট্টগ্রাম ।