অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রাম আদালতে বাদীকে অনুপস্থিতি দেখিয়ে নারী নির্যাতন মামলার ৪ আসামীর জামিন!

0
নারী নির্যাতন মামলার প্রধান আসামী রুবেল ‍ও দ্বিতীয় আসামী তার বাবা আবদুল মোনাফ।

জালিয়াতির মাধ্যমে তথ্য গোপন করে চট্টগ্রাম আদালতে নারী নির্যাতন মামলার চার আসামীকে জামিন পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারীর (পেশকার) বিরুদ্ধে।

এনিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তথ্য গোপন করে আদালতে উপস্থিত থাকা মামলার বাদীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জামিন পাইয়ে দেয়া আসামী মো. মোজাহের হোসেন রুবেল এখন তার তালাক দেয়া স্ত্রী ও শশুর পরিবারের লোকজনকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

এতে শংকিত হয়ে পড়েছেন মামলার বাদীনি দিনা আক্তার রিতু ও তার পরিবার। সম্প্রতি চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর আদালতে এ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

তবে অভিযুক্ত আদালতের সহকারী (পেশকার) মোরশেদ বলেছেন জালিয়াতি নয় এটি তার ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। আদালত সহকারি (পেশকার) মোরশেদের ভুলে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শংকায় আছেন যৌতুকের দাবীতে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর নির্যাতনের শিকার দিনা আক্তার রিতু।

আসামী মোজাহের হোসেন রুবেল।

জানাগেছে, মামলার আসামীদের গ্রেফতারের পর আদালতে নেয়া হলে স্বাক্ষী ও মামলার বাদী উপস্থিত থাকার পরও তাদের অনুপস্থিতি দেখিয়ে আসমিদের জামিন দেন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের -৩ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো: সেলিম মিয়া। আদালতে সরকারি (পেশকার) মোরশেদ ইচ্ছাকৃতভাবে বাদী ও স্বাক্ষীকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন বলে দাবী করেছেন মামলার বাদী দিনা আক্তার রিতু।

তিনি জানান, ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর মোজাহের হোসেন রুবেলের সাথে আমার বিবাহ হয়। বিয়ের পর আমি জানতে পারি রুবেল ও তার পরিবার ইয়াবাব ব্যবসার সাথে জড়িত। আমি রুবেলকে এই ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার কথা বললে সে আমার উপর নির্যাতন চালায়। পরে আমার পরিবারের কাছ থেকে ইয়াবাব ব্যবসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে রুবেল ও তার পরিবার। আমার পরিবার যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করায় ২০১৪ সালের ১৮ই মে রুবেল ও তার পরিবার আমাকে নির্মমভাবে, মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করে।

এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ১১ (গ)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করি। আসামী করা হয় স্বামী মোজাহের হোসেন রুবেল, শ্বশুর আবদুল মোনাফ, শাশুড়ি নুর জাহান বেগম, এবং মামা শশুর আব্দুর শুক্কুরকে। মামলা দায়েরের দেড় মাস পর পুলিশ আসামী স্বামী রুবেল ও তার মা বাবাকে সীতাকুণ্ডের বাসা থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন তাদের আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামীরা হাজতে থাকাকালে ১২ দিন পর জামিন পায় তিন নং আসামী শাশুড়ি নুর জাহান বেগম এবং দেড় মাস পর জামিন পায় দুই নং আসামী শশুর আবদুল মোনাফ। এবং ৩ মাস পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে যায় প্রধান আসামী রুবেল। নির্যাতিত দিনা আক্তার রিতু’র পিতা শহীদুল ইসলাম খোকন অভিযোগ করেন, জামিন পেয়ে বেরিয়ে তারা আমার মেয়েকে ফের শশুর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং আবার তার উপর নির্যাতন চালাতে থাকে। এরই মধ্যে আমার মেয়ে গর্ভবতী হয়। সে অবস্থাও তারা তাকে মারধর করেছে। পরে গত বছরের ৫ মে আমার মেয়ে একটি কন্যা সন্তান জন্মদিলে হাসপাতাল থেকে মেয়েকে আমার আমাদের বাসায় নিয়ে আসি। বাচ্চা জন্ম নেয়ার দেড় মাসের মাথায় আমার মেয়েকে তালাক নামা পাঠায়।

শহীদুল ইসলাম খোকন আরো বলেন, আদালতে মামলা চলাবস্থায় আসামীরা গড় হাজির থাকলে আদালত তাদের জামিন বাতিল করে। এ অবস্থা গত বছরের ২৪ আগষ্ট ভোরে পালাতক থাকাবস্থায় দুই নং আসামীকে পুলিশ আটক সীতাকু- থেকে গ্রেফতার করে। ভোর ৪টায় গ্রেফতার করার পর পরই পুলিশ তড়িগড়ি করে আদালত বসার আগেই সকাল ৯টার মধ্যে আদালতে নিয়ে যায়। এর এক সপ্তাহ আগে গ্রেফতার হওয়া ৪ নং আসামীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। একই দিনে পালাতক প্রধান আসামী রুবেল ৩ নং আসামী নুর জাহান বেগম আদালতে উপস্থিত হয়। তাদের আইনজীবির মাধ্যমে ৪ আসামীর জামিনের আবেদন করে। ব্যাপারটি আমার কাছে রহস্যজনক ঠেকেছে।

আদালতে আমরা বাদীপক্ষ আসামীদের জামিনে বিরোধীতা করলেও রহস্যজনক কারণে আদালত আমাদের অনুপস্থিতি দেখিয়ে তাদের সবার জামিন মঞ্জুর করেন। বাদীসহ আমরা আদালতে উপস্থিত থাকলেও আমাদের অনুপস্থিতি দেখান আদালতে পেশকার মোরশেদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদালতের সহকারি (পেশকার) মোরশেদ বলেন, আসামীরা আগের থেকেই জামিনে ছিলেন। মাঝে দুইটি তারিখে হাজির না থাকায় আদালত তাদের জামিন বাতিল করেছিলেন। আদালত আসামীদের দুপুরে জামিন দেন। আমি সন্ধ্যায় আদেশ লিখার সময় ভুলক্রমে বাদী ও স্বাক্ষীদের অনুস্থিত দেখাই। পরে আমি ভুলটি দেখতে পেয়ে সংশোধন করেছি। বিষয়টি আমার ভুলের কারণে হয়েছে।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের-৩ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম সেন্টু বলেন, এই আদালতে দীর্ঘদিন যাবত বিচারক না থাকায় আমি আদালতে যাইনি। তবে পেশকারের ভুলের কারনে যদি বাদীপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে বিষয়টি আমরা অবশ্যই দেখবো।