অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

0
13335387_1621883084797189_853956925_n
নতুন ভাবে সেজেছে চিড়িয়াখানার প্রবেশ পথ

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, শিক্ষার্থী-দর্শনার্থীদের প্রাণীজগত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, সব শ্রেণী, পেশা, বয়সের মানুষের বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় স্থান। যার অবস্থান পাহাড়তলীর ফয়’স লেক সংলগ্ন।

বর্তমানে এখানে ৬৭ প্রজাতির সর্বমোট ৩৬৫টি প্রাণী রয়েছে। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান এবং চট্টগ্রামের অন্যান্য অভিজাত ব্যক্তিবর্গ প্রাথমিকভাবে ফয়’স লেকে চিত্তবিনোদন, শিক্ষা এবং গবেষণার উদ্দেশ্যে চিড়িয়াখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী এই চিড়িয়াখানা সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়।

02d
নতুন সাজে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

শুরুদিকে এক টিকিটেই চিড়িয়াখানা এবং ফয়’স লেকে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও ১৯৯৫ সালে দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি বাড়তি লাভের বিষয়টি বিবেচনা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দুইটি আলাদা গেটে পৃথক টিকিটের মাধ্যমে প্রবেশের ব্যবস্থা করে। ১৯৮৯ সালে চিড়িয়াখানা উদ্বোধনের পর টিকিটের মূল্য ছিল ১ টাকা। পরর্তীতে তা বৃদ্ধি করা হয়ে ২ টাকা, এভাবে পশু-পাখির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে টিকিটের দামও। বর্তমানে প্রতি টিকিটের দাম ২০ টাকা। ২০ টাকা বর্তমান সময়ে খুব একটা বেশী না। তবুও অবাক কান্ড হলো- ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন দায়িত্ব নেয়ার পর সেই ২০ টাকার মূল্যের ফান্ডটির বর্তমান আকার কোটি টাকা!

02a
পুরোদমে চলছে চিড়িয়াখানার উন্নয়ন কাজ

এই ফান্ড থেকে চিড়িয়াখানার নিয়মিত ব্যায় নির্বাহ করার পরও এর টাকার এ অংক বলে দিচ্ছে কী পরিমাণ দর্শনার্থীর পদচারণায় মূখর এই বিনোদন কেন্দ্র। আর কর্মকর্তারা-আমলারা যদি সৎ হন, দেশের চেহারা কত তাড়াতাড়ি বদলাবে। একটা সময় চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীরা আতংকে থাকতো। কারণ এর কোন সীমানা প্রাচীর বা নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিলনা। ফলে স্থানী বখাটেরা নারী দর্শনার্থীদের উত্যক্ত করতো, হাতের ভ্যানিটি ব্যাগ, মোবাইল, ঘড়ি চিনতাই ছিল নিয়মিত ঘটনা। পশ্চিম পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করলেও সংরক্ষণ করা যেতোনা একটা সিন্ডিকেটের জন্য। যেখানে এখন সীমানা প্রাচীর হয়েছে সেই এলাকায় ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে চলতো অবৈধ কর্মকান্ড। যে সিন্ডিকেট এই কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতো তারা এই সীমানা প্রাচীর তৈরীতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

01a
চিড়িয়াখানার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন

ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনের দৃঢ়তায় সিন্ডিকেটের কোন বাঁধাই টিকেনি। তবে কাজ চলাকালে ময়লা নিক্ষেপ, ময়লা পানি নিক্ষেপসহ বিভিন্ন আচরণে তাদের ক্ষোভ মিটিয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন জানান-জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের আন্তরিকতায় উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। ইতোমধ্যে সীমানা প্রাচীর (সাইড ওয়াল, গাইড ওয়াল) বাবদ প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। প্রাণী রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন খাঁচা তৈরী হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার। আর্ট ওয়ার্ক বাবদ বরাদ্ধ আছে ২০ লক্ষ টাকা, নতুন গেইট নির্মান হবে ১৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে।

ফান্ডের ব্যাপারে তিনি জানান-২০১৪ সালে আমাকে যখন দায়িত্ব দেয়া হয় তখন ফান্ডে ছিল সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা। ২ বছরের মাথায় এসে ৫৫ লক্ষ টাকা খরচ করার পরও প্রায় ৬৭ লক্ষ টাকা ফান্ডে জমা আছে। পরবর্তি পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি জানান- সৌন্দর্য্য বর্ধন শেষে আমরা প্রাণী সংগ্রহের দিকে নজর দেবো। চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীরা বসার কোন জায়গা ছিলনা একটা সময়। এখন আমাদের চলমান কার্যক্রম শেষ হলে- দর্শনার্থীরা বসতে পারবে। শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বর্তমান উন্নয়ন পরিকল্পনায়। রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিশেষত স্কুল পর্যায়ের) পিকনিক করার সুযোগও।

03a
সুউচ্চ বাউন্ডারী দেয়াল, থাকবেনা বহিরাগতদের উৎপাত

উন্নয়ন কর্মকান্ড শেষে টিকিটের দাম বৃদ্ধি হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন জানান- আপাতত সেই চিন্তা নেই। জেলা প্রশাসক মহোদয়ও টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি না করার ব্যাপারে আন্তরিক। আমরা টিকিটের দামটা সবার সাধ্যে মাঝে রাখতে চাই। যাতে সবাই এই চিড়িয়াখানা প্রবেশ করতে পারে।

চিড়িয়াখানা ডেপুটি কিউরেটর চৌধুরী মঞ্জুর মোরশেদ জানান- ২০১২ সালে ৩১ অক্টোবর শেষ বাঘটি মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় প্রায় ১৫ বার যোগাযোগ করেও কোন বাঘ সংগ্রহ করা যায় নি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে। চিড়িয়াখানায় যে দুটি সিংহী আছে আগামী ১৬ জুন তাদের ১১ তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে, যা বাংলাদেশে কোন প্রাণীর জন্য অনন্য নজীর। খুব দ্রততম সময়ে যোগ হবে স্বাদুপানির কুমিরের ১০/১২টি বাচ্চা।

ইতোমধ্যে কুমিরের ১৩টি ডিম পরিচর্যা চলছে। চিড়িয়াখানায় রয়েছে- ময়ুর, ঈগল, মদন টাক, ভূবন চিল, গ্রিফন শকুন, পানকৌড়ি, গো-বক, নিশিবক, কানি বক, ময়না, টিয়া, ধনেশ, তিতির, প্যারা হরিণ, মায়া হরিণ, সিংহী, সঝারু, মুখপোড়া হনুমান, আরকান আর্মির ঘোড়াসহ প্রভৃতি প্রাণী।