অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১নিরাপত্তা কর্মীকে চাকুরীচ্যূতির অভিযোগ

0
কুমিরাস্থ আই আই ইউ সি’র স্থায়ী ক্যাম্পাস।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আই আই ইউ সি) এ কর্মরত ২১ জন নিরাপত্তা প্রহরীকে কোন কারণ ছাড়াই চাকুরীচ্যূত করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় অস্থ্যির দিনাতিপাত করছেন অসহায় এসব প্রহরী।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে ছাত্র ছাত্রীরা। তারা ক্যাম্পাসে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্বোচ্চার হচ্ছেন।

.

১৮ ফেব্রুয়ারী-২০১৭ ইং জারী করা আই আই ইউসির রেজিষ্ট্রার কর্ণেল (অব,) মোহাম্মদ কাশেম পিএসসি’র স্বাক্ষর করা অফিস আদেশে আগামী ১লা মার্চ-২০১৭ থেকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া নিরাপত্তা প্রহরীরা হলেন, সিটি ক্যাম্পাসের মো. জালাল মিয়া, জহুর আহমদ চৌং, নেসার আহমেদ, আব্দুল হক, জামাল উল্লাহ, মো. শওকত, আব্দুস সাত্তার, ওসমান গণি, আব্দুর রহিম (১), আব্দুর রহিম (২), মো. জাকারিয়া। কুমিরা ক্যাম্পাসের মো. দুলাল মজুমদার, মো. শফিউল আলম, মো. শাহজাহান, মো. জালাল উদ্দিন, মো. আলমগীর মো, গণি আহমেদ, মো. আকতার কামাল মো. ফসিউল আলম, মোহাম্মদ আলী, তাজ মোহাম্মদ।

চাকুরিহারা নিরাপত্তা প্রহরীরা অভিযোগ করেন, তারা একেকজন ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত চাকুরি করে আসছেন। অথচ কোন কারণ উল্লেখ্য করে কিংবা পূর্ব কোন নোটিশ না দিয়ে তাদের অব্যাহতি পত্র দিয়েছে আই আই ইউসি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে নতুন আরো ২৭ জন প্রহরী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

চাকুরীচ্যূত ওসমান গণি বলেন, কি অপরাধে আমাদের চাকুরি গেলো তা আমরা কেউ বলতে পারিনা। তারা আমাকে অব্যাহতি পত্র দিলেও তাকে কারণ উল্লেখ্য করেনি। এব্যাপারে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের প্রতিটি কর্মকর্তার সাথে দেখা করে কারণ জানতে চেয়েছি। কিন্তু কেউ বলতে পারেনি কেন আমাদের অব্যাহতি দেয়া হল।

তিনি বলেন, এতো বছর চাকুরী করার পর শেষ বয়সে এসে আমরা কোথাই যাবো। অন্যায়ভাবে আমাদের চাকুরি থেকে বিদায় করছে পরিবারের সদস্যদের খাওয়াবো কি..! তাই আমরা বাধ্য হয়ে সবাই আইনগতভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাথীরা জানান, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভার্সিটিকে পাহারা দিয়ে আসছেন। সাতদিন পর পর নাইট ডিউটি করেছেন৷ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এই ২১ জন সিকিউরিটি গার্ড প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে ভার্সিটিকে পাহারা দিয়েছেন। যাদের সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা বাৎসরিক কোন ছুটি ছিলনা। এমনকি নিকটাত্বীয়ের মৃত্যুতে যদি একদিন ছুটি কাটিয়েছেন তার জন্য ঐ দিনের বেতন কেটে রাখা হয়েছ যা এখনও অস্থায়ী সিকিউরিটি গার্ডদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

এদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা বিগত ১০/১১ বৎসর যাবত চাকুরী করেছেন আইআইইউসিতে কিন্তু কেউই স্থায়ীভাব নিয়োগ প্রাপ্ত হননি। দীর্ঘদিন যারা এই ভার্সিটির নিরাপত্তা রক্ষা করেছেন বিনিময়ে আজ তাদের আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এই বয়সে তাদের কেউ নতুন একটা চাকুরী নিতে পারবেন এই সমাজে তা দুরাশারই নামান্তর। তাই কর্তৃপক্ষের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং ২১ জনের চাকুরী ফিরিয়ে দেয়ার দাবীতে অচিরেই মানববন্ধন বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা করবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার থেকে এ লক্ষ্যে জন সমর্থন গড়ে তুলতে ফেসবুকে ইভেন্ট চালু করা হয়েছে।

আন্দেলনের প্রস্তুতি নেয়া নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আবাসিক শিক্ষার্থি বলেন, কর্তৃপক্ষের এ অমানবিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমরা যা যা করা প্রয়োজন তাই করবো। ইতোমধ্যে আমরা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। ওনারা আমাদের কোন জবাব দিতে পারেন নি। কেন নিরাপরাধ ২১ জন প্রহরীকে বিদায় করা হয়েছে। এ শিক্ষার্থী বলেন, আমরাতো কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি। আমার হলে দুইজনকে চাকুরীচ্যূত করা হয়েছে। অথচ বছরের পর বছর তারা আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ২১ জন নিরাপত্তা প্রহরীকে অব্যাহতি দেয়ার কথা স্বীকার করে আইআইইউসির রেজিষ্ট্রার কর্ণেল (অব,) মোহাম্মদ কাশেম পিএসসি বলেন, এদেরকে অস্থায়ী ভিক্তিতে দৈনিক বেতনে রাখা হয়েছিল। যাদের অনেকে এখন ফিজিক্যালি আনফিট হয়ে গেছেন। অনেকের বয়স হয়ে গেছে। এছাড়া আমাদের শহরের ক্যাম্পাস, মহিলা ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়ার কারণেও জনশক্তি কমাতে হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষ তাদের বিদায় করেছে। তিনি নতুন প্রহরী নিয়োগের বিষয়টি অস্বিকার করেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক শহিদুল্লাহ সেলিমকে ফোন করা হলে তিনি এটি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বলেই ফোন লাইন কেটে দেন। পরে বার বার ফোন করে আর কথা বলা সম্ভব হয় নি।