অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আপন ঠিকানায় ফিরেছে শিলা ও নাজিরা

0
01
বাবা মা’র হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে শিলা ও নাজিরাকে।

বাবা মার কাছে বাড়ী ফিরেছে। হারিয়ে যাওয়া এ দুই শিশুকে সোমবার তাদের দুজনকে তাদের মা বাবারকাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। সন্ধ্যা ছয়টার গাড়ীতে করে তারা নীলফামারি জলঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে।

গত শুক্রবার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে “ওরা বাড়ি ফিরে যেতে চায়” শিরোনামে সংবাদ প্রচারের পর তাদের মা বাবার খোজ পাওয়া যায়। “জাগো নিউজের” নীলফামারি প্রতিনিধি জাহিদুল শিলা ও নাজিরার মা বাবা কে খুঁজে বের করার ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করেন। সে দিন বিকালেই খোঁজ মেলে তাদের।

এর পর নীলফামারি (০৩) আসনের সাংসদ গোলাম মোস্তফা এ প্রতিবেদকরে কাছে ফোন করে বিস্তারিত জানার পর তাদের মা বাবাকে চট্টগ্রামে পাঠানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করেন। এ ছাড়া জলঢাকা উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী,কৈমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিটন বিষয়টি নিয়ে ফোনে মনিটরিং করেন।

এদিকে রোববার শিলা ও নাজিরার মা বাবারা নীলফামারি থেকে চট্টগ্রামে এসে পৌছেন। এর পর তাদের মেয়েদের কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা। এসময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়।

এর পর রাত হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে চট্টগ্রামে রেখে দেয়া হয়। সোমবার কাগজপত্রের মাধ্যমে মেয়ে দুটিকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

এসময় শিলার মা ফিরোজা বলেন, আমরা আমাদের মেয়েদের ফিরে পেয়েছি আল্লাহ’র দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। মেয়েরা এখানে এসে বিপদে পড়েছে শুনে মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন মেয়েকে নিজের কাছে পেয়েছি আর কোন দুঃখ নাই।

নাজিরার বাবা জামিয়ার রহমান বলেন, সংবাদ পত্রে মেয়ের বিপদে পড়েছে খবর পেয়ে ছবি দেখে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। এর পর এ প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য কওে তিনি বলেন আপনাদের সহযোগিতায় মেয়েকে ফিরে পেয়েছি । এখন অনেক খুশি লাগছে। আর কখনো মেয়েকে এভাবে বের হতে দেবোনা। যারা আমাদের মেয়েকে এ ধরনের বিপদে ফেলেছে তাদের বিচার আল্লাহ করবেন।

এদিকে বিকালে শিলা ও নাজিরাকে তাদের মা বাবার হাতে তুলে দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন আকবর শাহ থানার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (গোয়ন্দা শাখা) পুলিশ কনস্টবল রকিবুল্লাহ, স্থানীয় সমাজ সেবক ওয়াাসিম, স্থানীয় বাসিন্দা সালাউদ্দিন, মিন্টু, জাহাঙ্গীর,আবদুল্লাহ প্রমুখ।

শিলা বলেন আমরা আমাদের মা বাবাকে পেয়েছি এখন আর কোন ভয় নেই। আমরা আমাদের বাড়ী ফিরে যেতে পারবো। নাজিরা বলেন আমরা বড় বিপদে ছিলাম । এখন শংকামুক্ত ।

02
বাবা মার কাছে ফিরে গেল হারিয়ে যাওয়া শিলা ও নাজিরা।

উল্লেখ্য গত ২ মে দিবাগত রাতে তাদেরকে নগরীর সিটি গেইট এলাকায় পাওয়া যায়। তখন তারা দুজনেই কৌশলে নগরীর একটি বাসা থেকে পালিয়ে এসছে বলে জানান। তাদের চোখে মুখে ছিল আতংকের চাপ। এ ব্যাপারে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজে সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর সারাদেশে বিশেষ করে রংপুর, নীলফামারি, যশোর,রাজশাহী, দিনাজপুর,ঢাকা থেকে ব্যাপক ফোন আসতে থাকে এ প্রতিবেদকের কাছে। সবাই তাদের অবস্থা জানতে চায়।

এদিকে শিলা ও নাজিরার মা বাবা চট্টগ্রামে আসার পর বের হয় আসল রহস্য। স্থানীয় জোসনা নামের উক্ত মহিলা তাদেও দুজনকেই নগরীর জিইসি মোড়ের রাশেদ নামের জনৈক ব্যবসায়ীর বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে দেন। কিন্তু সেখানে উক্ত রাশেদের স্ত্রী তাদেরকে নানা ভাবে নির্যাতন করে বলে জানান শিলা ও নাজিরা। এমনকি গত কয়েকমাস ধরে তাদের মা বাবার সাথে কোন ধরনের যোগাযোগও করতে দেয়নি রাশেদেও স্ত্রী। তারা বাড়ী যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে তিনতলার ছাদের উপরে নিয়ে নীচে ফেলে দেয়ার ভয় দেখাতো। চুলের মুষ্ঠি ধরে মারধর করতো । এসব অত্যাচার সইতে না পেরে তারা সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কৌশলে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের পর এ প্রতিবেদককে ফোন করেন রাশেদ। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন মেয়ে দুটি পালিয়ে গেছে। থানায় জিডি করেননি কেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে এর পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়।