অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সুদিপ দাসের অপরাধ তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী!

1
.

২০১৩ এর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন অনুযায়ী প্রতিবন্ধী মানুষের সকল প্রকার সুরক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা হলেও আইন বিষয়ে লেখা পড়া করা একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে সহকারি জজ পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

পরীক্ষায় নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে কথা বলেও কোন কাজ হয়নি। সুদিপ দাস নামে এ শিক্ষার্থীর অপরাধ! তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

সহকারি জজ পরীক্ষায় অংশ নিতে ব্যর্থ হয়ে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি একটি আবেদন করেন। তার সে আবেদন আমরা হুবহু তুলে ধরছি

“আমি সুদিপ দাস, একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ। এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পরীক্ষা সফলভাবে পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হতে সক্ষম হই এবং ২০১৪ সালে আইন বিভাগ হতে এল.এল.বি অনার্সে পাস করি। ২০১৫ সালে এল.এল.এম পরীক্ষা সম্পন্ন করি।
গত ১৫-০৪-২০১৭ ইং তারিখ বিজেএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে অনলাইনে ফরম পূরণ করি। এরপর সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ম মেনে কাগজ পত্র জমা দিয়ে শ্র“তিলেখকের অনুমতির জন্য আবেদন করি। ২৪-০৪-২০১৭ইং তারিখ বেলা ২ ঘটিকায় জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন কার্যালয়ে সহকারি পরিচালক রাশেদুল আলমের সাথে সাক্ষাত করি। কিন্তু তিনি আমাকে সরাসরি, “২০০৭ সালের নিয়োগ সংক্রান্ত বিধির ৩য় তফসিল অনুযায়ী সকল ধরণের প্রতিবন্ধী মানুষ উক্ত বি.জে.এস পরীক্ষা প্রদানে বিবেচ্য নয়। এই বিধিটি প্রদর্শন করে তিনি আরও উল্লেখ করেন বিগত কয়েক বছর পূর্বে সোহেল নামের একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ আবেদন করে (তার পায়ে সমস্যা ছিল) তাকে জুডিসিয়ারি পরীক্ষা প্রদানে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে “আপনারা চাইলে যেকোন প্রকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু আমি তারপরেও বারবার অনুরোধ করছিলাম বলে তিনি বলেন এতে কোন প্রকার লাভ হবে বলে মনে হয় না।

আমরা তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে চলে আসি এবং সিদ্ধান্ত নেই আমি আইনি লড়াইয়ে যাবো। এই সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সংগঠন ঝড়পরবঃু ড়ভ ঃযব উবধভ ্ ঝরমহ খধহমঁধমব টংবৎং এর কোষাধ্যক্ষ রফিক জামান এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আইনি পরামর্শ প্রদান করেন এবং বলেন আইনি লড়াইয়ের পূর্বে দেশের গণমাধ্যমগুলোর কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইতে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় গণমাধ্যম গুলোতে যোগাযোগ করি। দেশের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আজ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এরপর আমাকে জানানো হয় যে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের কন্ট্রোলার ও সচিব উক্ত প্রতিবেদককে জানান “উনি যদি বিষয়টি আরও কয়েকদিন পূর্বে অবহিত করতেন তাহলে তার বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া যেত।” উক্ত প্রতিবেদকের কাছ থেকে কন্ট্রোলার ও সচিব মহোদয়ের নাম্বার সংগ্রহ করি এবং কন্ট্রোলার মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান বিধির বাহিরে গিয়ে আমরা কোন কিছু করতে পারবো না। যদি কিছু করতে হয় তা পরে দেখা যাবে। এরপর সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বললে তিনি জানান, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিভাবে বিচারক হবে? কেননা, বিচার কার্য পরিচালনা ও রায় লিখার সময় সে যদি শ্রুতি লেখকের সাহায্য নেয় তাহলে রায়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। তিনি আরো উল্লেখ করেন, যখন কোন জমি সংক্রান্ত মামলায় দলিলাদি উপস্থাপন করা হবে তখন তা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি সমর্থ হবে না। এরপর আমি তাঁকে দেশের বাইরে বিভিন্ন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিচারকের উদাহরণ দিলে তিনি আমাকে বলেন, ঐ সকল দেশে শুনে শুনে বিচার কার্য পরিচালনা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা এখনো প্রচলিত হয়নি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ চোখে দেখতে সক্ষম নয় বলে বিজেএস পরীক্ষা দিতে পারবে না। তখন এ বিষয়ে আমার বক্তব্য, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে “সংগতিপূর্ণ বন্দোবস্ত” (জবধংড়হধনষব অপপড়সসড়ফধঃরড়হ) মেনে সেই অনুযায়ী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কর্মক্ষেত্র বা পরিবেশ তৈরি করা হয়। তাহলে আমাদের দেশে কেন এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আমি আইনের ছাত্র হয়ে আইন থেকে পাশ করেও আইন বিষয়ক এই পরীক্ষায় কেন অংশ গ্রহণ করতে পারবো না? আইন আমার পক্ষে বলে, আমাদের দেশের ২০১৩ এর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরুক্ষা আইন অনুযায়ী প্রতিবন্ধী মানুষের সকল প্রকার সুরুক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো এই অধিকার কোথায়? আমার প্রতিবন্ধিতাই কি এর মূল কারণ? নাকি আমরা বৈষম্য মুক্ত হতে পারি নি? আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা যেখানে কোটি মানুষের নিবেদিত প্রাণ তিনি সকলের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করেন ও কাজ করেন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি আমি আমার যোগ্য অধিকার চাই। আমার প্রতিবন্ধিতা এতদিন আমাকে কোন কিছুতে আটকে রাখতে পারেনি। সুতরাং আমি এখনো হেরে যাবো না। আমি আমার অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যাবো। আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক এবং আমাদের সংবিধানে রয়েছে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার প্রযোজ্য। তাহলে কি আমি রাষ্ট্রের নাগরিক নই? নাকি আমি প্রতিবন্ধী মানুষ বলে আমাকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কেন তাহলে প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে এরূপ বৈষম্য প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা কি তবে মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ? যদি তা নাই হবে তাহলে কেন আমি আবেদন করেও পরীক্ষা দিতে পারছিনা। যেখানে প্রতিবন্ধী মানুষ সকল ধরণের প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে এমন কি বিসিএস পরীক্ষায় পর্যন্ত তারা অংশগ্রহণ করতে পারে তাহলে বিজেএস পরীক্ষায় কেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না? এটা কি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বৈষম্যমূলক আচরণ নয়? যত বাধাই আসুক না কেন আমি আমার লড়াই চালিয়ে যাবো এবং এই বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।

নিবেদক –
সুদীপ দাশ
মোবাইলঃ ০১৯১৩৬১৩৫৭৩

১ টি মন্তব্য
  1. Haidar Ali বলেছেন

    সুদীপ আমার ব্যাচমেট,দাদা।
    খুবই ট্যালেন্ট ও বন্ধুপ্রিয়।
    কোন আওয়াজছাডা শুধু হ্যান্ডসেকে বুঝতে পারে সামনের বন্ধুটি কে!