অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সিটিং বাসের চিটিংবাজী বন্ধ করার দাবী

0
.

রাজধানীতে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি লাঘবে সিটিং সার্ভিস নয়, সিটিং বাসের চিটিংবাজী বন্ধের দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আজ ৩০ এপ্রিল রবিবার সকালে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রদানকৃত এক স্বারকলিপিতে এই দাবী জানান যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে কর্মরত এই সংগঠনটি।

এ সময় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ৮০ শতাংশ গড় বোঝাই ধরে ভাড়া নির্ধারণ করায় প্রতিটি যাত্রীর সিটিং গাড়িতে যাতায়াতের অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। নগরীর যাত্রী সাধারণের জন্য বাস-মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে ১.৭০ ও ১.৬০ পয়সা এবং সর্বনিন্ম ভাড়া ৩ কিলোমিটারে ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও উক্ত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে লোকাল সার্ভিস নামধারী বাস-মিনিবাস গুলো যত্র তত্র যাত্রী উঠানো নামানো, বিভিন্ন স্টপেজে-যেখানে সেখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানোর জন্য হাঁক-ডাক করা, যাত্রী পরিপূর্ণ হওয়ার পরেও মুড়ির টিনের মতো ছেঁপে-ছেঁপে যাত্রী উঠানোর জন্য নির্লজ্জভাবে দাড়িয়ে হাঁক-ডাক করা, মুড়ির টিনেরমত বাসভর্তি যাত্রী হয়ে যাতায়াতকালে রাস্তার মাঝপথে উঠা বা নামা এভারেষ্ট জয়ের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এইসব লোকাল সার্ভিসে অফিসগামী নারী, স্কুল কলেজের ছাত্রী, অসুস্থ রোগী ও প্রতিবন্ধিদের যাতায়াত অত্যান্ত দুষ্কর হয়ে উঠে। এইসব বাসে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌছা, কাপড়-ছোপড় পরিস্কার রাখা, কাপড়ের ভাজ নিয়ে অফিসে যাওয়া, পকেটমার, ছিনতাই, গাড়ি আস্তে আস্তে চলা ইত্যাদি বিরক্তিপূর্ণ আচরনের কারনে যাত্রী সাধারণ অধৈয্য ও অস্তির থাকে। প্রচন্ড গরমে এইসব বাসে দাড়িয়ে যাতায়াত অস্বাভাবিক কষ্টদায়ক একটি সিট দখলকরা যেন নগরীর একখন্ড জমি দখল করার মত হয়ে দাড়িয়েছে। উক্ত সমস্যা সমূহ প্রতিকার না করায় যাত্রী সাধারণ সিটিং সার্ভিসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। যাত্রী সাধারণের এই দূর্বলতাকে পুঁজিকরে কতিপয় মুনাফাশিকারী বাস মালিক সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য চালিয়ে আসছে। এইসব বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২ থেকে ৫ গুন পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে দাবী করেন তিনি।

স্বারকলিপিতে বলা হয়, অফিস সময়ে সকাল ৮টা থেকে ১০ টা, বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত কথিত এসব সিটিং সার্ভিস সিটিং হিসেবে যাত্রী নিয়ে দরজা বন্ধ করে চলাচল করলেও সারাদিন লোকাল ভাবে চলাচল করেও সিটিং এর হারে ভাড়তি ভাড়া আদায় করে থাকে। এই কারনে মাঝপথের যাত্রীরা অফিস সময়ে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারে না।

এইসব বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়া পরিবর্তে কোম্পানির নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হয় বলে একই দুরত্বে একেক বাসে একেক রকম ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে স্বারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়। যেমন প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ ২.৪ কিলোমিটার দুরত্বে সরকার নির্ধারিত মিনিবাসের ভাড়া ৫ টাকা ও বাসের ভাড়া ৭ টাকা। এই পথে হিমাচল পরিবহন, স্বাধীন এক্সপ্রেক্স, দিশারী পরিবহন, সময় নিয়ন্ত্রন, শিকড় পরিবহনের বাস মিনিবাসে আদায় করা হয় ২৫ টাকা। মনজিল, শতাব্দী, আল মক্কা, মালঞ্চ, বসুমতি ও রাইদা পরিবহনের বাস-মিনিবাসে এই পথে ভাড়া ২০ টাকা, শুভেচ্ছা, ওয়েলকাম, তানজিল, গুলিস্থান-গাজিপুর পরিবহন লিঃ, মেশকাত পরিবহনের বাস-মিনিবাসে এই পথের ভাড়া ১০ টাকা । শুধুমাত্র ৭ নং রুটের মিনিবাস ও ৮ নং রুটের মিনিবাসে এইপথে ৫ টাকা ভাড়া আদায় করে থাকে। এই চিত্র পুরো নগরজুড়ে বিরাজমান বলে দাবী করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

স্বারকলিপিতে আরো বলা হয়, কথিত সিটিং সার্ভিসের গাড়িগুলো বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি প্রতি ৩১ আসনের মিনিবাসে ৪১ আসন, ৩৬ আসনের বাসে ৪৬ আসন, ৩৯ আসনের বাসে ৫২/৬১ আসন সংযোজন করায় যাত্রী সাধারণ এইসব বাসে আরামদায়ক ভাবে বসতে পারেনা। ভিতরে যাতায়াত করতে পারে না। যাত্রা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কথিত সিটিং সার্ভিস কোম্পানী কর্তৃক নির্ধারিত স্টপেজে আগে নামলেও পুরো পথের ভাড়া যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে আদায় করে আবার মাঝপথ থেকে যাত্রী উঠানো নামানো, এক সিট একাধিকবার বিক্রিকরা, সিটিং সার্ভিসের নাম ধারণ করেও মুড়ির টিনের মতো করে যাত্রী বোঝাই করে চলাচল করা এইসব বাস-মিনিবাসে নিত্য-নৈমত্তিক চিত্র।

কথিত এইসব সিটিং সার্ভিসের বাস-মিনিবাস রুট পারমিটের শর্ত অমান্য করে শুধুমাত্র রুটের লাভজনক অংশে চলাচল করে। যেমন, গুলিস্তান থেকে তারাবো বা গুলিস্তান থেকে মদনগঞ্জ রুটের বাস-মিনিবাস সকাল ও বিকেলে পিক আওয়ারে শনিরআখড়া, রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান পথে সিটিং হিসেবে দ্বিগুন ভাড়ায় চলাচল করে থাকে। নগরীর বিভিন্ন রুটে একই চিত্র বিদ্যমান।

স্বারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ভালোমানের গাড়িতে যাত্রী সেবা দিয়ে ভাড়তি ভাড়া আদায়ের নীতি অনুসরনের পরিবর্তে কথিত এইসব সিটিং সার্ভিসের বাস-মিনিবাসের ৯০ শতাংশ ঝুকিপুর্ণ লক্কড়-ঝক্কড়, ভাঙ্গা সিট, ভাঙ্গা সাইড বা পেছনের গ্লাস, অপরিস্কার-ধুলা ময়লায় পূর্ণ, সিটের বেহাল দশা, কোনটির সিট নড়েবরে, কোনটির সিটের হাইট নিচু, কোনটির ছাদ নিচু, কোনটির ভিতরে বৃষ্টির পানিতে যাত্রীরা ভিজে যায়, শীতের দিনে ভাঙ্গা জানালা কনকনে শীতে যবুতবু অবস্থা সৃষ্টি হয়, কোনটির দুজনের সিটে একজন কেবল সোজা হয়ে বসা যায়, কোনটির সামনের সিটে হাটু লেগে যায়। স্বাস্থ্যবান ও লম্বা যাত্রীরা এইসব বাসে বসতে ও দাড়াতে পারেনা।

মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা ঝুলানোর নির্দেশনা ৯২ শতাংশ বাস-মিনিবাসে মানা হয় না দাবী করে সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সাধারণ যাত্রীরা স্পষ্ট বুঝতে পারেনা। অধিকাংশ সিটিং সার্ভিসের ভাড়ার আদলে স্টপেজ কমিয়ে ভাড়ার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যেমন, ফার্মগেইট থেকে যেকোন বাসে আগারগাঁও যেতে মিরপুর ১০ পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হয়, এই রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাস স্টপেজ ভাড়ার তালিকা প্রনয়নে উপেক্ষা করা হয়েছে।

কথিত এইসব সিটিং সার্ভিসে মাঝপথের যাত্রীদের অত্যান্ত অমানবিকভাবে রাস্তার মাঝপথে চলন্ত অবস্থায় উঠানো নামানো হয়ে থাকে। এতে করে বয়স্ক, অসুস্থ, প্রতিবন্ধি, নারী শিশু যাত্রীরা অনেক সময় দূর্ঘটনার শিকার হয়। যেমন, দেশবরেন্য সাংবাদিক জগলুল আহম্মেদকে এই অবস্থায় রাস্তার মাঝপথে নামতে বাধ্য করায় তিনি দূর্ঘটনায় পড়ে মারা যায়।

উল্লেখিত অনিয়ম ও বৈষম্যসমূহের অবসান ঘটিয়ে ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়া অনুযায়ী, নিবন্ধন-রুট পারমিটের শর্ত অনুযায়ী সিটিং সার্ভিস সিস্টেমে নগরীর যাত্রী সাধারণের যাতায়াত সুনিশ্চিত করার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবী জানানো হয়।
এই সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিআরটিএর আইন উপদেষ্টা এডভোকেট রাফিউল ইসলাম, যাত্রী কল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক এম মনিরুল ইসলাম, কেন্দ্রিয় নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ, সামসুদ্দীন চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম, জিয়াউল হক চৌধুরী প্রমূখ।