অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিএনপি: মির্জা আলমগীর

0
.

চিন্তা ও কাজের ক্ষেত্রে বিএনপি ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি ঘোষিত ভিশন-২০৩০ শীর্ষক এক গোল টেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ‘সেন্টার ফর ন্যাশনাল অ্যান্ড রিজিওনাল রিসার্চ স্টাডিজ’ এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ গোলটেবিল সঞ্চালন করেন।

.

দলের চেয়ারপারসনের ভিশন- ২০৩০ ঘোষণা শেষ হতে না হতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতিবাচক প্রতিক্রয়া দেওয়ার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, তারা বলছেন এটা ফাঁপা বেলুন। কেউ আবার বলছেন, বিএনপি তাদের অনুকরণ করেছে। কিন্তু বিএনপির দর্শন অনুকরণ করে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক দর্শন, কর্মসূচি পরিবর্তন করেছে।

বিএনপি আওয়ামী লীগের ভিশন অনুকরণ করেনি দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেভাবেই হোক তারা (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে। তাদের কাছ থেকে আমরা গঠনমূলক ভূমিকা প্রত্যাশা করি।

ভিশন-২০৩০ এর মধ্যে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের কথা উল্লেখ না থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যখন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট গঠন করা হয় তখন সেই ম্যানুফেস্টুতে এই বলে ঐক্য হয়েছিলো যে, আওয়ামী লীগ সরকার একনায়ক, স্বৈরাচারীভাবে দেশ পরিচালনায় রয়েছে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথের আন্দোলনে বিএনপির পাশে জামায়াত থাকবে। এর বাইরে অন্য কিছু না। তাদের সঙ্গে যে জোট এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক। তাই ২০৩০ সালে জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কি সম্পর্ক হবে সেটা এই মুহুর্তে বলার অবকাশ নেই। সুতরাং এখানে জামায়াতের বিষয়টি উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডাঃ জাফরুল্লাহ, প্রফেসর ডঃ মাহবউব উল্লাহ,সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজি ও কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বকুল, প্রফেসর দিলারা চৌধুরী, সাবেক সচিব ইসমাঈল জবিউল্লাহ প্রমুখ।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ এর বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, খালেদা জিয়া তার অনেক বক্তব্যে র‌্যাব বিলুপ্তির কথা বলেছেন। কিন্তু যে ভিশন দিয়েছেন সেখানে র‌্যাব বিলুপ্তির কথা বলেননি। এমনকি জনগুরুত্বপূর্ণ রামপাল ইস্যু নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এমনকি রামপাল শব্দটিও নেই।

বলেন, ভিশনে একইভাবে ভারতীয় আগ্রাসন, অত্যাচার, নির্যাতনের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিবেন সে বিষয়েও কিছু বলেননি। বিএনপির ভিশন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনারা বলছেন, বিএনপি অনুকরণ করেছে। খারাপ কিছু অনুকরণ না করা ভালো, ভালোর অনুকরণ করলে দোষের কিছু নেই। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ভালো ভালো কথা শেষ। এখন কাজ করতে কবে মাঠে নামবেন। না এবারও বলবেন ঈদের পর। আপনারা আর কত অজুহাত দেবেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিশন- ২০৩০ ঘোষণায় বলেছেন- বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনায় গেলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মকান্ডকে যথাযথভাবে সম্মান ও গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রশ্ন থেকে যায়- যদি বিএনপি আগামী দিনে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কি হবে? রাজনৈতিক জোটে থাকা জামায়াত ইসলাম তো থাকবেই? যাদের এখন যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে বিচার করা হচ্ছে। তিনি (খালেদা) এ বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, ভিশন-২০৩০ আধুনিক বাংলাদেশে গড়ার একটি কর্মসূচি। কথা হচ্ছে এ সরকারকে বিদায় দেয়া না গেলে এ কর্মসূচি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে?তাই আগে এই সরকারকে বিদায়ের ব্যবস্থা করতে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন,

বিএনপির ভিশন -২০৩০ বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান বলে আমি মনে করি। এটি উন্নয়ন, অগ্রগতি, শান্তি ও সম্প্রীতির একটি সনদ। বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন -২০৩০তে স্পষ্ট করে বলেছেন, দেশের জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি। তারা দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি, জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ, ও কারাগার—এ চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা, সব ধরনের কালাকানুন বাতিল , বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, ও খুন এ অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসানসহ বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করবেন।

বর্তমানে দেশের অন্যতম সমস্যা জঙ্গিবাদ দমনে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে ভিশন -২০৩০তে বলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার ইচ্ছা, শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ ব্যয়, একটি পৃথক শিক্ষা টিভি চালু করা, স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করবে বলে রুপকল্পে বলা হয়েছে। এ রুপকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।