অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পুলিশী হয়রানীতে মানুষ সেহেরী, ইফতারী করতে পারছে না

0
337064
ছবি: প্রতিকী

সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ও চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাকান্ডের জের ধরে পুলিশের চলমান সাঁড়াশি অভিযানের নামে ছাত্রদের মেস, বাসা বাড়ীতে নির্বিচারে হয়রানী, বিরোধী মতের নেতা কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে আটক, পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য এবং সুধী সমাবেশের নামে নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সভায় পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক’র মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগরী উত্তর সভাপতি সালাউদ্দিন মাহমুদ ও সেক্রেটারী নাজিব আহসান রোববার রাতে সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন গণধীকৃত অবৈধ আওয়ামী সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা আড়াল করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি, গণগ্রেফতার ও আটক বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছে।

পবিত্র রমজান মাসে যেখানে ধর্মপ্রাণ মানুষরা সারা দিন রোজা, ইবাদাত বান্দেগীর মাধ্যমে প্রভুর স্মরণে ব্যস্ত সেখানে জাঙ্গিসহ অপরাধীদের আটক করার নামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ মানুষকে জ্যামিতিক হারে কষ্ট দিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলেছে। পুলিশী হয়রানীতে মানুষের সেহেরী ও ইফতারী গ্রহণ করতে পারছে না।

সারাদিন রোজা রেখে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে পারছে না নিজেদের বাসা বাড়ি ও মেসগুলোতে। ছাত্ররা মেসে থাকতে না পারার কারণে তাদের নিয়মিত পড়ালেখায় ব্যহত হচ্ছে। পুলিশের এচেন ন্যাক্কার জনক ভূমিকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে অস্থিরতায় দিন কাটছে। পবিত্র এ মাসে স্বয়ং রব যেখানে মানুষদের ধোকা দানকারী শয়তানদের শিকল দিয়ে বেধে রাখে সেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর এরূপ জঘণ্য ও অমানবিক আচরণে ক্ষিপ্ত হচ্ছে নগরবাসী।

তাছাড়া সুধী সমাবেশের নামে আয়োজিত চট্টগ্রামের এক সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে আটক করা হচ্ছে না বলে যে মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এমন শতাব্দী নিকৃষ্ট মিথ্যাচার সাধারণ মানুষের প্রতি চরম উপহাস ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না বলে সাফ জানিয়ে দেন শিবির নেতারা। কেননা আজ পর্যন্ত সরকার দলীয় খুনি সন্ত্রাসীদের একজনও আটক করতে না পারায় পুলিশের আগাম ঘোষণা দিয়ে এই বিশেষ গ্রেফতার অভিযান জাতির সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।

এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতা-কর্মীসহ পাঁচ শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শিবির নেতৃবৃন্দ বলেন জঙ্গিবাদ ও টার্গেট কিলিং রোধ করার নামে এ সাঁড়াশি অভিযান ঘোষনা করা হলেও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুনের সাথে জড়িত কাউকেই আজ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এটা এখন জাতির কাছে স্পষ্ট যে নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল, বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের দমন পীড়ন ও পুলিশকে গ্রেফতার বাণিজ্যের সুযোগ করে দিতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। অন্য দিকে এই অভিযান প্রচলিত আইনের সাথেও সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেন শিবির নেতারা।

সম্প্রতি উচ্চ আদালতে দেয়া এক রায়ে বলা হয়েছে যে, বিনা কারণে বা ওয়ারেন্ট না থাকলে ৫৪ ধারায় কাউকে আটক বা হয়রানী করা যাবে না উল্লেখ থাকলেও এ রায়ের কোন রকম তোয়াক্কা করছে না পুলিশ।

সুতরাং সরকারের নিদের্শে পুলিশের এই অভিযান সম্পূর্ণ বেআইনি। এই অভিযানে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলেছে স্বয়ং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যা আইনের চোখে আরেকটি গুরুতর অপরাধ।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার পুলিশকে দলীয় কর্মীদের মত ব্যবহার করছে আর পুলিশও নিজেদের দায়িত্ববোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে দলীয় সেবাদাসের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কতিপয় সন্ত্রাসী বা জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে নিরপরাধ হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা কোন ভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।

বেআইনি গ্রেফতার ও অবিচারের মাধ্যমে নিরাপরাধ বিরোধী মতের মানুষদের কারাগারে রাখলেও সন্ত্রাসীদের লালন পালন করছে সরকার।

এই বেআইনি গ্রেফতার অভিযান দেশে ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া আইন শৃঙ্খলা অবস্থার উন্নতিতে কোন ভূমিকা পালন করবে কিনা, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

পবিত্র রমজান মাসে নিরপরাধ মানুষকে এভাবে হয়রানীর কোন অর্থ হয় না। অবিলম্বে অভিযানের নামে এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক হয়রানী বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে তদন্ত সাপেক্ষে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।

নেতৃবৃন্দ নৃশংস হত্যাকান্ড নিয়ে অসভ্য রাজনীতি না করে প্রকৃত অপরাধিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জোর দাবী জানান।