অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“হাসিনা আন্টি প্লিজ আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও“

1
.

সারাদেশে গুম হওয়া পরিবারের স্বজনদের আহাজারীতে ভারী হয়ে উঠেছিল ঢাকার পরিবেশ। শনিবার সকালে স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুম হওয়া পরিবার গুলো কাঁদলেন এবং কাঁদালেন নগরবাসীকে। জানিনা এ কান্নার শেষ হবে কবে?

পিতৃহারা ছোট্ট শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে যখন বলছিলঃ “আমি পাপার সাথে ঈদ করতে চাই। আমি পাপার সাথে স্কুলে যেতে চাই। আমরা ঈদে আনন্দ করতে চাই, আর কাঁদতে চাই না। ঈদে মা আর দাদু শুধু কান্না করে। প্লিজ হাসিনা আন্টি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও “ এ শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে এসব যখন বলছিলেন পথচারীরাও অশ্রু সংবরণ করতে পারেনি।

.

এক মা বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে গুম করুন, আমাকে মেরে ফেলুন বিনিময়ে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। অন্তত একটা পরিবার বেঁচে যাবে। পিতাহারা ছোট ও তাদের মায়ের কষ্ট, কান্না আর আমি সইতে পারছিনা আপনি কি চান, সব দিয়ে দেব -তারপরও আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। এ মায়ের কান্না শুনলে এমন কোন পাষাণ আছে যার হৃদয় গলবে না।
সহমর্মিতা প্রকাশ করতে এসে বুদ্ধিজীবীরা বলললেন, গুম হওয়া পরিবারের এ আর্তনাদ কি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায় না?
সন্তানহারা আরেক মা বললেন,

সরকারের কি কোন দায়িত্ব নেই? আর কত বছর অপেক্ষা করবো। অপেক্ষা দিয়েই আমাদের দিন শুরু হয়। কেউ দরজা নক করলেই দৌড়ে যাই, মনে হয় আমার কাদের ফিরেছ। আক্ষেপ নিয়ে একথা গুলো বললেন গুম হওয়া আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়শা আলী। বিগত কয়েক বছরে গুম হয়ে যাওয়া ২১ জন পরিবারের সদস্যদের আকুতি কবে খোঁজ মিলবে, হারিয়ে যাওয়া স্বজনের?

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা এক মানবন্ধনে অংশ নিয়ে স্বজনদের ঈদের আগে ফেরত চেয়েছেন। তা না হলে ঈদের দিন কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

.

মানববন্ধনে দেখা যায়, শিশুরা তার বাবার ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, গুম হয়ে যাওয়া সন্তানের খোঁজে মায়ের চোখে পানি, স্বামীর অপেক্ষায় মুখে কাপড় চেপে দাঁড়িয়ে আছে স্ত্রী।

তিন বছর আগে গুম হয়ে যাওয়া পারভেজ হোসেনের ছোট্ট মেয়ে হৃদি তার মা ফারজানা আক্তারের সাথে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বারবার বলতে ছিলো, ‘আমার পাপাকে ফিরিয়ে দাও। পাপাকে ছাড়া ভালো লাগে না। আমরা পাপার সাথে মার্কেটে যেতে চাই, তার সাথে ঈদ করবো।”মায়ের ডাক- গুম-খুন আর নয়। ঈদুল ফিতরের আগে গুম হওয়া সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’ এমন ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের সারিতে নাগরিক ঐক্যের আহ্ববায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না উচ্চারণ করেন, আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম। ২১ ঘণ্টা আমার কোন খোঁজ ছিলো না। এরপর ফিরে এসে পরিবারের লোকদের চোখে দেখেছি কি আর্তনাদ।

.

নিজের গুম হয়ে যাওয়ার কথা থামিয়ে মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মা কাঁদেন, সন্তান ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এসব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখেন না। গুম হওয়া সন্তানের মায়ের কান্না প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায় না।”প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বজন হারানোর ব্যথা আমি বুঝি। কিন্তু অন্যদের স্বজন হারানোর ব্যথা তিনি বুঝেন না’। ‘গুম হওয়া লোকদের খুঁজে আনার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন করে না। পুলিশ সরকারের হুকুমের বাইরে কোন কাজ করে না। এমনটা কি কোন রাষ্ট্রের ভূমিকা হতে পারে? প্রশ্ন তুলেন মান্না। তিনি বলেন, বর্তমানে হারিয়ে যাওয়া স্বজনরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি প্রশাসন বলছে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেছেন কিনা। জঙ্গি এমন এক শব্দ যা শুনলে সবাই চুপ হয়ে যায়।’

এ সময় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল হাকিম লালা বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। বেআইনিভাবে রাষ্ট্রের নাগরিকদের আজ হত্যা করা হচ্ছে। কান্না নয়, চিৎকার করতে হবে, গুম হয়ে যাওয়া স্বজদের দাবি তুলতে হবে।

গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেজ বোন আফরোজা ইসলাম আখি সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিন, আমাদের বাঁচতে দিন। আমরা ভাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছি। ভাইকে ফিরে পেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।

বাংলাদেশ মানবাধিকার সমিতির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন গুম হওয়া চঞ্চলের স্ত্রী রেশমা আক্তার, ছোট ছেলে আহাদ, তারার স্ত্রী বেবি আক্তার, সেলিম রেজার পিন্টুর বড় ভাই ইসলাম রেজা, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও আইন ও সালিস কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, ফেরদৌসী রহমান, অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান প্রমুখ।

১ টি মন্তব্য
  1. Alim Uddin বলেছেন

    কেন এই আহাজারি, এই আহাজারির দায় ভার কে নেবে ? এর জন্য কে দায়ি???