অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

খলিফা পট্টির ৩ শতাধিক কারখানায় চলছে ফ্যাশনাবল পোশাক তৈরীর উৎসব

0
.

ঈদকে সামনে রেখে দিনরাত কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের খলিফা পট্টির শ্রমিকরা। ঈদে ছোট বড় নারী/পুরুষের পছন্দের পোশাক তৈরীতে কাজ করছেন তারা। একটুও দম ফেলার সময় নেই তাদের। সেলাই মেশিনের আওয়াজ আর মোবাইলে গানের তালে তালে দুই পায়ের প্যাডেলের চাপে ঘুরছে মেশিনের চাকা। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের তিরোধান তাদের অবসরের একমাত্র সময়। তবে শত ব্যস্ততার মাঝেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ব্যবসা মন্দা চলছে বলে জানালেন একাধিক কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।

দেওয়ান বাজার এলাকার খলিফা পট্টি ঘুরে দেখা যায়, মাঝারি ঘরের ৩ শতাধিক কারখানায় কাজ করছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। কেউ কেউ সেলাই মেশিনে ব্যস্ত, আবার কেউ কাপড়া কাটায়, কেউবা ব্যস্ত কাপড় সেলাইয়ের পর আয়রন করতে। অনেক কারখানায় বয়স্ক শ্রমিকের পাশাপাশি দেখা গেল শিশু শ্রমিককেও যারা পেটে ভাতে কাজ করছে এসব কারখানায়। এসব কারখানায় তৈরী হচ্ছে দেশি ও বিদেশি ডিজাইনের থ্রিপিস, স্কার্ট, লেহেঙ্গা, গাউন, শার্ট-প্যান্ট, ছোটদের জামা প্রভৃতি। তবে দেশি ডিজাইনের চেয়ে ভারতীয় রাখিবন্ধন, দূর্গা ও পটল কুমার ডিজাইনের জামা কাপড়ের চাহিদা বেশি।

.

বৃষ্টি গার্মেন্টস নামে একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা দেশীয় ডিজাইনের জামা ও ছোটদের শার্ট প্যান্ট তৈরীতে ব্যস্ত। কারখানার মালিক সিরাজুল ইসলাম  বলেন, এমনিতে তার কারাখানায় ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। ঈদের পোশাক তৈরীর জন্য আরো ৫ জন শ্রমিক অতিরিক্ত কাজ করছে। তার কারখানায় বিপুল পরিমাণ পোশাক তৈরী হলেও বৈরী আবহায়ার কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা খুব একটা আসছে না বলে জানান তিনি।
মনছুর আহমেদ নামে আরেক কারখানার মালিক জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বর্তমানে ব্যবসা মন্দা গেলেও কিছু দিনের মধ্যে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। তার কারখানায় ১০ জন শ্রমিক ভারতীয় রাখীবন্ধন, দূর্গা ও পটল কুমার ডিজাইনের পোশাক তৈরী করছে। এই পোষাকের চাহিদা বেশি বলেও জানান তিনি।

কফিল উদ্দিন নামে এক কারখানার শ্রমিক বলেন, তিনি দৈনিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করছেন এখন। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ছাড়া অবসর পান না তিনি।

বন্ধু গার্মেন্টস নামে এক কারখানার ১২ বছর বয়সী শিশুশ্রমিক তারেক ও মাহফুজ বলেন, তাদের বাড়ি নোয়াখালী। তারা এখানে এক বছর যাবত কাজ করছে। যার বিনিময়ে শুধু থাকা আর খাওয়া চলে। এছাড়া মাঝে মাঝে বাড়ি যাওয়ার সময় মালিক কিছু টাকা পয়সা দেয়। এখন তারা দৈনিক ১৩ ঘণ্টার মতো কাজ করছে।

.

খলিফা পট্টির বিভিন্ন কারখানার শো রুম ঘুরে দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট ছোটদের শার্ট/প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়, থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, স্কাট বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা, গ্রাউন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়াও ভারতীয় ডিজাইনের রাখীবন্ধন বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দূর্গা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, পটল কুমার ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

নিউ ফয়সাল গার্মেন্টস এর সত্ত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কারণে এবার পোশাকের দাম কিছুটা বাড়তি বলে জানান তিনি।

.

খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সামশুল আলম বলেন, নোয়াখালী, কুমিল্লা, তিন পার্বত্য জেলা এবং টেকনাফ পর্যন্ত তাদের তৈরি কাপড় যায়। সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে দাম রেখে সেরা ডিজাইনের কাপড় এখানে তৈরি হয়। তিনি বলেন, এখন পোশাক তৈরির কাজ চলছে। বিক্রি শুরু হবে আরো কিছুদিন পর। বর্তমানে তিন শতাধিক কারখানায় ছয় হাজার কর্মী কাজ করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৌসুম চলে গেলে কারিগরের সংখ্যা অনেক কমে যায়।

*“অন্যদের সাজাতে নির্ঘুম রাত কাটছে খলিফাপট্টির খলিফাদের”