অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কারাগারে বন্দি জঙ্গির চিঠির সুত্র ধরে মিতু হত্যা তদন্তে নতুন মোড়

0
13382133_1751585405056987_607175384_n - Copy
মিতু হত্যার ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম কারাগারে আটক এক জঙ্গির চিঠির সুত্র ধরে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী চাঞ্চল্যকর মাহমুদ খানম মিতু হত্যার তদন্তের মোড় ঘুরে গেছে। রহস্য উন্মোচনে নতুন ক্লু নিয়ে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন এবং ডিসি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে মিতু হত্যার মনিটরিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এই হত্যামামলাটি নতুন করে গতি এসেছে বলে মনে করছে ডিবি।

মুলত বাবুল আক্তারসহ জঙ্গি অভিযানে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যার নির্দেশনা দিয়ে কারাগারে বন্দি বুলবুল নামের এক জঙ্গী সদস্যের পাঠানো একটি চিঠির সুত্র ধরে পুলিশ মনে করছে জঙ্গিরাই বাবুল আক্তারকে হত্যা করতে না পেরে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। এই চিরকুটের লেখক বাবুল আক্তারের হাতে গ্রেফতারকৃত জঙ্গী সদস্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি বুলবুলকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে মিত্যু হত্যা মামলার তদন্ত দল।

মিতু হত্যায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিতু হত্যা মামলাটি এখন নতুন করে গতি পেয়েছে। আমরা শীঘ্রই বড় কোন সাফল্য দেখাতে সক্ষম হবো। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত মাসে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জঙ্গীদের কাছে প্রেরিত একটি বিশেষ চিরকুট নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই চিরকুটে কারাগারে বন্দি বুলবুল নামের এক জঙ্গী সদস্য তাদের উপর নির্যাতনের কাহিনী এবং জঙ্গী নেতা জাবেদকে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করার কথা উল্লেখ করে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

ফাইল ছবি
কর্ণফলীর খোয়াজ নগরে জঙ্গির আস্তানা থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র দেখছেন বাবুল আক্তার। ফাইল ছবি

কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিরকুটটি বের হয়ে বিভিন্ন হাত ঘুরে এটি নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতেও এসেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এই চিরকুটের নির্দেশনায় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে কি-না তা অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ।

উল্লেখ, গত বছর ৫ অক্টোবর নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজ নগর এলাকা থেকে জঙ্গী সদস্য বুলবুলসহ ৫ জঙ্গী সদস্যকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গ্রেণেড ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। গ্রেফতারকৃতরা হলো মো. জাবেদ (২৪), ফুয়াদ ওরফে মো.বুলবুল (২৬), সুজন ওরফে বাবু (২৫), মাহবুব (৩৫) এবং সোহেল ওরফে কাজল (৩৫)। খোয়াজ নগরের এই অভিযানের সময় জঙ্গীরা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাবুল আক্তারকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু এদিন তিনি প্রাণে রক্ষা পান। গ্রেফতারকৃত ৫ জঙ্গীর মধ্যে জঙ্গী নেতা জাবেদ পরদিন ভোরে পুলিশের অস্ত্র ও গ্রেনেড উদ্ধার অভিযানে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়ে নিহত হয়।

মিতু হত্যাকান্ডের নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিন) কামরুজ্জামান জানান, মিতু হত্যার রহস্য উন্মোচনে আমরা সাম্ভাব্য সব দিক অনুসন্ধান করে দেখছি। এর মধ্যে কারাগারে বন্দি কোন জঙ্গীর নির্দেশনা বাইরের জঙ্গীরা বাস্তবায়ন করেছে কি-না, বা এর সাথে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারাগারের বিশেষ চিরকুট বিষয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য না করলেও সিনিয়র এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন কারাগারে বন্দি জঙ্গী সদস্য বুলবুলকে বাকলিয়া থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে বুলবুলের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বুলবুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদা করা হলে বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যাকায় কারাগার থেকে কোন নির্দেশনা গিয়েছিলো কি-না তা জানা যাবে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, কারাগারে বন্দি জঙ্গী সদস্য বুলবুলকে বাকলিয়া থানার একটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। আজ এ ব্যাপারে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।