অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বিলবোর্ড ও ডিস ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতারা এখন প্রযোজক!

0
CTV
সিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র। ফাইল ছবি।

বিটিভি’র চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি) কেন্দ্রে হরিলুট চলছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিলবোর্ড ও ডিস ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা পরিচয়ধারীসহ ৪৮ জনকে প্রযোজক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে এদেরকে অতিথি প্রযোজক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এদের একজন হলেন যুবলীগ নেতা বিলবোর্ড ব্যবসায়ী ফরিদ মাহমুদ অপরজন হলেন নগরীর জামালখান এলাকার ডিস এন্টেনা ব্যবসায়ী সাঈদ সুমন।

বিলবোর্ড, ডিস ব্যবসায়ী ছাড়াও নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে স্টুডিও কর্মী, মিউজিক ভিডিওকর্মী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গৃহিণী, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোক রয়েছে। যাদের সংশ্লিষ্ট পদে কোন অভিজ্ঞতা নেই।

সিটিভির ইতিহাসে এটি নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অনিয়ম বলে জানা গেছে। সদ্য বদলি হওয়া চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাঁ নেঁসার ওসমানই এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রে (সিটিভি) প্রযোজক, এডিটর ও ক্যামেরাম্যানসহ ৪৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুরকার, সঙ্গীত পরিচালকদের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে ওই টাকা দেয়া হচ্ছে নিয়োগপ্রাপ্তদের। ইতোপূবে চট্টগ্রামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ সংস্থার নেতারা।

চট্টগ্রাম বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ সংস্থার সংবাদ সম্মেলন। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম শিল্পী কল্যাণ সংস্থা সাধারণ সম্পাদক শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনিয়ম-দুর্নীতি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গ রূপ না পাওয়ার পেছনে দায়িতপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দায়ী। কেন্দ্রটি এখন আর সরকারি কোনো নীতিমালার মধ্যে নেই। সব ক্ষেত্রে বেড়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি।

তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন জারি ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ৪৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত এসব প্রযোজক, এডিটর, ক্যামেরাম্যান, মেকাপম্যানদের কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।

সিটিভির ইতিহাসে একই সময়ে ৪৮ জন নিয়োগের নজির নেই জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সিটিভিতে নিয়োগের জন্য যোগ্য লোকের কি এতই আকাল? শেষ পর্যন্ত বিলবোর্ড আর ডিস ব্যবসায়ীদের এনে অনুষ্ঠান প্রযোজক বানাতে হবে!

১৬ হাজার ৮শ’ টাকা করে এই ৪৮ জনের বেতন বাবত প্রতিমাসে সরকারকে গুণতে হয় ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগপ্রাপ্তদের একজন বলেন, মাসিক বেতনই শুধু নয়, একেকজন অতিথি প্রযোজক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য বাড়তি বিল করে মাসে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত কামাই করছেন, কোনো মন্ত্রী-এমপি’র সুপারিশ নিয়ে চলে আসুন, আপনিও সে রকম ইনকাম করতে পারবেন!

এসব বিষযয়ে সিটিভির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মনোজ সেন গুপ্ত’র দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি লোকবল নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি আসার পর সিটিভিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে নিয়োগ পাওয়া ৪৮ জনকে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে বলেছি। ৮ জন এখনো জমা দেননি। যারা দেননি তাদের প্রোগ্রাম দেওয়া বন্ধ রেখেছি। এই ৮ জনের মধ্যে বিলবোর্ড ব্যবসায়ী ফরিদ মাহমুদ, ডিস এন্টেনা ব্যবসায়ী সাঈদ সুমনও আছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও ফরিদ মাহমুদ ও সাঈদ সুমনের বক্তব্য পাওয়া যায় নি।