অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“অন্যদের সাজাতে নির্ঘুম রাত কাটছে খলিফাপট্টির খলিফাদের”

1
Pic-01
খলিফা পট্টিতে আলো ঝলমলে পোষাক। ছবি: মনির ফারুক

চট্টগ্রামের খলিফা পট্টি, যেখানে রাত আর দিনের মাঝে কোন তফাৎ পুরো রমজান মাসেই থাকেনা। শুধু রমজান নয়, সারা বছরই তারা ব্যস্ত থাকেন। তবে শবে বরাতের পর থেকে সেই চাপ আরো বেড়ে যায়, কাটে নির্ঘুম রাত।

বলছিলাম পোশাকের বাজারে স্বনামধন্য খলিফাপট্টির পোশাক শ্রমিকদের কথা। ১৯৫০-এর দশকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আইয়ুব আলী আন্দরকিল্লা আর দেওয়ান বাজারের মাঝামাঝি এলাকায় পোশাক তৈরী শেষে ফেরী করে বিক্রি করতেন। আর আজ সেই এক আইয়ুবের পথ ধরে এখানে গড়ে উঠেছে প্রায় সাড়ে চার শত দর্জি দোকান। যার নাম খলিফা পট্টি।

Pic-02
নির্ঘূম রাত জেগে কাপড় সেলাই করছেন খলিপাপট্টির এসব পোষাক শ্রমিক।

এই খলিফাপট্টিতে জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিক। দর্জিকে চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় খলিফা বলা হয়। দর্জি বা খলিফাদের নামানুসারে এই এলাকার খ্যাতি-খলিফাপট্টি নামে। এখানকার দর্জিদের দক্ষতা অবাক হওয়ার মতো। আপনি যেকোন ডিজাইন দেখাবেন আর একটু সময় নিয়ে শুধু অপেক্ষা করবেন। তারা আপনার হাতে তুলে দিবে আপনারই পছন্দের সেই পোশাক। যে মৌসুমে যে পোশাকের কদর বেশী সেই পোশাকে তারা মনযোগ দেয়। এখানকার দর্জি শ্রমিকরা বিদেশে গিয়েও সুনামের সহিত কাজ করে।

Kabir
খলিফাপট্টি বনিক সমিতির সেক্রেটারী হুমায়ুন কবির নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

গত মৌসুমে যাদের দেখেছিলাম এবার না পেয়ে খোঁজ নিতেই জানলাম ওরা এখন প্রবাসে। বেশ সুখে আছে, উচ্চ দামে কাজ করছে। উন্নত জীবন যাপন করছে। এখন যারা শ্রমিক তাদেরও চোখে স্বপ্ন- তারাও সময় সুযোগে বিদেশে পাড়ি জমাবে। কেন, তোমরা এই আয়ে সন্তুষ্ট না? এমন প্রশ্নের জবাবে এক শ্রমিক জানালো- যা পাই তাতে চলে। এখানে যে দাম তা পরিশ্রম অনুযায়ী পুষায় না। বিদেশে যেতে পারলে মজুরী বেশী পাবো। কিছু টাকা-পয়সা জমাতেও পারবো।

Meyor
খলিফা পট্টির অবহেলিত পোষাক শ্রমিকদের সুখে দু:খের সাথী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও কাউন্সিলর হাসান মাহমুদ হাসনি। ফাইল ছবি

খলিফাপট্টি বনিক সমিতির সেক্রেটারী হুমায়ুন কবির জানান- এই খলিফাপট্টির তৈরী করা পোশাক চট্টগ্রামের অভিজাত বিপনি বিতান ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা দক্ষিণে টেকনাফ উত্তরে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা পর্যন্ত সাপ্লাই দেয়া হয়। কখনো ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যায় আবার কখনো তাদের চাহিদা অনুযায়ী পৌঁছে দেয়া হয়।

এখানকার ব্যবসায়ী শুধু মুনাফা নিয়ে ঘরে ফিরেন তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও তারা জড়িত থাকেন। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির আরো জানান- মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, স্থানীয় কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র হাসান মাহমুদ হাসনি আমাদের অভিভাবকের মতো খোঁজ খবর রাখেন। আমরাও উনাদের মাধ্যমে আশ-পাশের গরিব, দুঃখীদের মাঝে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কাপড় বিতরণ করি। খলিফাপট্টির ব্যবসায়ীরা সবাই অল্প পুঁজির। যদি পৃষ্ঠপোষকতা পায় এই শিল্প আরো উন্নতি লাভ করবে।