অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ধর্মহীন শিক্ষানীতি,পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিক্যবাদ কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হবে

0
hefajat press confa
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন, হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মহীন করে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের সন্তানদের নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে হেফাজত ইসলামের নেতারা বলেছেন, বিতর্কিত ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক গুলোতে ক্রমান্বয়ে ইসলামি ভাবধারার পাঠসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার টেক্সট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

অবিলম্বে পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুসিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।

বিতর্কিত ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি-২০১০ বাতিল, গুপ্তহত্যা, গুম, খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও রাজনৈতিক জিঘাংসা, গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন হেফাজতের নেতারা।

পাঠ্যসূচি পরিবর্তন দাবিতে ইসলামী জনতা রাজপথে নেমেছে। রক্তের বিনিময়ে হলেও এ দাবি আদায় করে ছাড়বো বলেন হেফাজত নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, বিগত ১৩ জুন জমিয়তুল মোদাররেসিনের ইফতার মাহফিলে শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ “শিক্ষানীতি ধর্মবিরোধী নয়” এরকম অসত্য কথা বলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছেন। অথচ শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রণীত প্রায় সকল শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে হিন্দুত্বাবাদ ও নাস্তিক্যবাদ এখন প্রমাণিত সত্য। শিক্ষামন্ত্রী বাম-ঘরানার হওয়ায় তিনি এদেশের মুসলমানদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পারছেন না।

তিনি বলেন, দেশ ও জাতি গঠনে আদর্শ নাগরিক সৃষ্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বুনিয়াদ হলো প্রাইমারি শিক্ষা। বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যকি স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে শুধু সংকোচনই করেনি বরং ইসলামধর্ম বিষয়ক এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক গল্প, রচনা ও কবিতাসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন রচনা, গল্প ও কবিতা একতরফাভাবে প্রতিস্থাপন করেছে। মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে গরুকে মায়ের সম্মান, পাঁঠাবলির নিয়ম, হিন্দুদের তীর্থস্থানের ভ্রমণ কাহিনী এবং হিন্দু রীতিনীতি ও দেব-দেবীর নামে প্রার্থনা করার বিষয় পড়ানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে কোমলমতি কোটি কোটি মুসলমানের সন্তানদের ইসলামবিমুখ করার পাশাপাশি নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের শিক্ষা দিয়ে ঈমানহারা করার পাঁয়তারা করছে। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতিসত্তার বিরুদ্ধে এটা ভয়াবহ চক্রান্ত। দেশব্যাপী অভিভাবক মহলে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র নাস্তিক্যবাদ উস্কে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের ভিতরেই ঘাপটি মেরে থাকা বাম ও রামপন্থী একটি কুচক্রী মহল এই কাজ করেছে। স্কুল-কলেজের বর্তমান ইসলামবিচ্ছিন্ন শিক্ষাব্যবস্থাকে আইনি ভিত্তিদান এবং কওমি মাদরাসাসমূহকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে সরকার প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৬ নামে একটি বিতর্কিত খসড়া আইন প্রকাশ করে তড়িঘড়ি পাস করার উদ্যোগ নিয়েছে।

Exif_JPEG_420
আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ছেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

হেফাজতের এ নেতা আরো বলেন, স্কুলের পাঠ্য বইয়ে কী কী বিষয়ের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং কী কী বিষয়ের লেখা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তার একটি তালিকা আমরা আলাদাভাবে পেশ করেছি। ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন সংশোধনপূর্বক জাতীয় আকাক্সক্ষার প্রতি সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষানীতি ও আইন প্রণয়নের জন্যে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি বহুবার বলেছেন যে, কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না এবং মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাবেন। সুতরাং এ বিষয়ে তিনি দায়িত্বশীল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন, আমরা এটাই আশা করি।

সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধ গুপ্তঘাতকচক্র দেশে সিরিজ টার্গেট কিলিং-এ মেতে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডে দেশের সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক যুক্ত হয়েছেন। পাবনার অনুকূল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমে নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে নিহত হওয়ার পর ভারতীয় হাইকমিশনের কূটনীতিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরপরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত এবং অভিনেতা পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের জিইসির মোড়ে পুলিশ কর্মকর্তা এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে সন্ত্রাসীদের হাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। গত কয়েক বছরে দেশে যেসব গুম, খুন, নাশকতা ও হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে তাতে দেশবাসী শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অধীনে একজন মানুষও আঁততায়ী, সন্ত্রাসী বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিনা বিচারে নিহত হোক, এটা কোন বিবেকবান মানুষ কামনা করে না। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এসব হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার এবং নীরিহ জনগণকে হয়রানী না করার দাবী জানান।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা, কৃষ্টি-কালচার, সভ্যতা সংস্কৃতি সুরক্ষায় সরকারের নিকট ৮ দফা দাবী পেশ করা হয়। দাবী গুলো হলো-ধর্মহীন শিক্ষানীতি ২০১০ এবং বিতর্কিত শিক্ষাআইন ২০১৬ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

নুরানী-মক্তব, হাফেজি মাদরাসা ও কওমী মাদরাসা নিবন্ধনের আওতামুক্ত রাখতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে পরিকল্পিতভাবে যুক্ত করা ইসলামবিদ্বেষী ও হিন্দুত্ববাদী রচনা, গল্প ও কবিতা বাদ দিতে হবে এবং বাদ দেওয়া ইসলামী ভাবধারার রচনা, গল্প ও কবিতা পুনঃস্থাপন করতে হবে।

শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষার প্রধান্য এবং দশম শ্রেণী পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। হক্কানী উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে ইসলাম শিক্ষার পাঠ্যবই রচনা করে পাঠ্যসূচিভুক্ত করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনায় বিশেষজ্ঞ আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আধুনিক ও যুগোপযোগী করার নামে কওমী মদরাসা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। গুপ্তহত্যা, গুম, খুন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। লিফলেট, প্রচারপত্র বিলি, বয়ান, আলোচনা এবং ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সর্বস্তরের নেতা কর্মী ও ওলামায়ে কেরামের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

আগামী ঈদের পর দেশের শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হেফাজতের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, হেফাজত আমীরের প্রেস সচিব মাওলানা মনির আহমদ, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা হাকীম আবু তাহের আরবী, মওলানা ইউনুস, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা আবু রায়হান, মাওলানা কুতুবুদ্ধিন, মাওলানা ফরিদুল হক, মাওলানা মাহমুদুল হাসান প্রমূখ।