অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে সন্তান দাবী করেছে দুই পরিবার

1
মানসিক ভারসাম্যহীন ২৩ বছরের নেই যুবক।

চট্টগ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন ২৩ বছরের এক যুবককে নিজেদের সন্তান দাবী করে দুটি পরিবারে মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। দুই পক্ষই দাবী করছে যুবকটি তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান।

এনিয়ে থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ালেও কোন সমাধান দিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নগরীর সিইপিজেড থান পুলিশ আদালতের দারস্থ হয়েছে। এখন আদালত সমাধান দিবেন আসালে যুবকটি কার সন্তান!

মানসিক ভারসম্যহীন যুবকটিকে মো:রবিউল হোসেন বলে নিজের ছেলে দাবী করা মো: মুকসেদুর রহমান ও রোকেয়া বেগম দম্পতি অপর দিকে এই যুবককে মো: আবু তারেক বলে তার পিতা-মাতা দাবী করছে মো: আবু তাহের ও নাজমা বেগম দম্পতি।

পুলিশ জানায় গত ২২ জুলাই শনিবার ভারসম্যহীন যুবককে মো:রবিউল হোসেন দাবী করে নিজের ছেলে পরিচয় দিয়ে নগরীর ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়রী করেন পিতার দাবী করা মুকসেদুর রহমান।

এর পর ইপিজেড থানা পুলিশকে মুকসেদুর রহমান জানায়, তার সন্তান রবিউলকে নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন জামতলা বাজারের পুলিশ ফাঁড়ির পূর্ব পাশে আবু তাহের এর বাড়িতে দেখা গেছে। পরে পুলিশ সেই বাড়িতে গিয়ে রবিউলকে উদ্ধার করতে গেলে মো: আবু তাহের দম্পতি জানায় ভারসম্যহীন যুবকটি রবিউল নয়, সে তার সন্তান মো: আবু তারেক। এ অবস্থায় পুলিশ  বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ যুবকটিকে ইপিজেড থানায় নিয়ে আসে এবং পিতা-মাতার দাবী করা দুই পক্ষকেই থানায় আসতে বলে।

যুবকটিকে নিজেদের সন্তান দাবী করা মুকসেদুর রহমান ও রোকেয়া বেগম দম্পতি।

যুবকটিকে নিজের সন্তান মো: রবিউল হোসেন দাবী করা মুকসেদুর রহমান পাঠক ডট নিউজের প্রতিবেদককে জানায়, আমার ছেলে রবিউল কর্ণফুলী ইপিজেডের এবি সিকিউরিটি বাংলাদেশ লিমেটেডে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরী করত। গত ফেব্রুয়ারী মাসের ৯ তারিখ রবিউল হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়রী লেখাতে গেলে পতেঙ্গা বলে আপনারা ইপিজেড থানায় যান আর ইপিজেড থানা বলে আপনার বাসা পতেঙ্গা থানার আওতাধীন আপনি পতেঙ্গা থানায় যান।

এর পর পতেঙ্গা থানা রবিউল যে কোম্পানিতে চাকরি করে তার কাগজপত্র তুলে এনে থানায় জমা দিতে বলে। কিন্তু আমরা রবিউল এর কারখানায় গিয়ে তার কাগজপত্র চাইলে অফিস কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয় রবিউলের সকল কাগজ পত্র ঢাকায় আছে যা এখন তারা দিতে পারবে না। এরপর আমরা আর নিখোঁজ ডায়রী লেখাতে পারিনি।

তিনি জানান, নিখোঁজের প্রায় ৫ মাস পর গত ১৪ জুলাই আমরা জানতে পারি আমাদের ছেলে রবিউল কর্ণফুলী থানাধীন জামতলা বাজারের আবু তাহের এর বাড়িতে আছে। আর এই সংবাদের ভিত্তিতে গত ২১ জুলাই শুক্রবার আমরা আমাদের সন্তান রবিউলকে পেতে ঐ বাড়িতে গেলে বাড়ির মালিক মো:আবু তাহের জানায় রবিউল নয় তার নাম মো: আবু তারেক আর সে তাদের সন্তান।

পরে আমরা রবিউলের ব্যবহৃত আইইডি কার্ড, পাসপোর্ট ও পরিবারের সাথে তোলা ছবিসহ স্থানীয় মেম্বার ইলিয়াছের কাছে গেলে সে আমাদের আইনের আশ্রয় নিতে বলে। সে অনুযায়ী শনিবার ইপিজেড থানায় এসে নিখোঁজ ডায়রী দায়ের করলে পুলিশ রবিউলকে তাদের হেফাজতে নিয়ে আসে। “আমি আমার সন্তান রবিউলকে আবার আমার কাছে ফিরে পেতে চাই” বলে জানান মুকসেদুর রহমান।

যুবতটির নাম মো: আবু তারেক দাবী করে তাকে নিজেদের সন্তান বলে দাবী করা মো: আবু তাহের ও নাজমা বেগম দম্পত্তি।

অন্যদিকে ভারসম্যহীন যুবকটিকে নিজের সন্তান মো: আবু তারেক বলে পিতা দাবী করা মো: আবু তাহের পাঠক ডট নিউজকে জানায়, প্রায় ৩ বছর আগে হারিয়ে যায় তার সন্তান মো: আবু তারেক। পরে কর্ণফুলী থানায় ২০১৪ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখে আমরা এ ব্যাপারে একটি নিখোঁজ ডায়রী করি।

এরপর গত মার্চ এর ৮ তারিখ আমার খালাতো ভাই লোকমান সকালে আমাকে ফোন দিয়ে কালামিয়া বাজারে তার ফুলকলি নামক দোকানে আসতে বলে। কেন আসতে বলেছে জানতে চাইলে লোকমান আমাদের জানায়, সকাল ৮টা নাগাদ তার দোকানের সামনে ময়লা কাপড় পরিহিত অসুস্থ এক যুবককে দেখে সে যুবকটিকে তার নাম বলতে বলে। তখন যুবকটি তাকে জানায় তার নাম আবু তারেক। তার পিতার নাম আবু তাহের। এটা শোনার পর আমরা লোকমান এর দোকানে গিয়ে অসুস্থ তারেককে বাসায় নিয়ে এসে চিকিৎসা করতে থাকি। হঠাৎ করে গত শুক্রবার একদল লোক এসে দাবী করে আমাদের তারেক তাদের সন্তান রবিউল। পরে তারা পুলিশ দিয়ে আমার কাছ থেকে আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে আসে। তিনি বলেন, তারেক আমার সন্তান আমি আমার তারেককে ফিরে পেতে চাই।

যুবকটির আইডি কার্ড ও সনদ বলে দাবী করছে এক পক্ষ।

এব্যাপারে ইপিজেড থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই জাহেদ উল্লাহ জামান পাঠক ডট নিউজকে জানায়, গত শনিবার থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি দায়ের করা হলে রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ আমরা নিখোঁজ যুবককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। উদ্ধার হওয়া যুবকটিকে নিজেদের সন্তান বলে পরিচয় দিতে আসে দুই পক্ষ।

তবে যুবকটি হয়ত মানসিক ভারসম্যহীন কারন সে কাউকেই চিনতে পারছে না।যুবকটি একবার মুকসেদুর রহমানকে আরেকবার আবু তাহেরকে বাবা বলছে। তাই আমরাও এ নিয়ে সমস্যায় পড়ে গেছি। আসলে সে কার সন্তান সেটাই বুঝতে পারছি না।তাই আমরা আদালতের দারস্থ হয়েছি। আদালত যা রায় দেবে তা মানবে দু্ই পরিবার। যুবকটি বর্তমানে নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

১ টি মন্তব্য
  1. Kayum Abdullah Al বলেছেন

    সম্পদ াছে নাকি