অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফটিকছড়িতে ‘নগর সোনালী নীড়’ নামে কোটি টাকা আত্মসাত!

1
.

জেলার ফটিকছড়িতে ‘নগর সৌনালী নীড়’ নামে মাল্টিপারপাস সোসাইটির অফিস খুলে গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সুয়াবিল ইউপিচেয়ারম্যান সহ চার জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী জারি করেছেন চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. হেলাল উদ্দিন।

কুসুম আকতার নামক এক গ্রাহকের করা মামলার প্রেক্ষিতে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন ”পিবিআই” তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। এর আগে প্রতারনার শিকার গ্রাহকরা সেই চেয়ারম্যান ও তার সমিতির বিরুদ্ধে এলাকায় মানববন্ধন ও ইউএনও’র নিকট স্মারকলিপি দিয়েছিল।

আদালত সূত্র জানায়, পিবিআই তদন্ত অনুযায়ী গ্রেফতারী পরোয়ানা করা হয় ‘নগর সৌনালী নীড়’ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সুয়াবিল ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি আবু তালেব চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওয়াহিদুল আজম, শহীদুল্লাহ ও ম্যানেজার রেবেকা সুলতানার বিরুদ্ধে।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী আজ ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়ারেন্ট তামিলের আদেশ দেন গত ৮ আগষ্ট। এদিকে এতোদিন পরও সংশ্লিষ্ট ভূজপুর থানায় ওয়ারেন্ট কপি পৌছায়নি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ভূজপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, আদেশ পেলে সে যেই হোক গ্রেফতার করা হবে।

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবু তালেব এ ব্যাপারে কোন সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য জানিয়ে বলেন, আমি ’নগর সোনালী নীড়’ নাম প্রতিষ্টানের ম্যানেজিং ডিরেক্টও ছিলাম না। আমিও সেখানে গ্রাহক ছিলাম। এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি জামিন নিয়েছি।

ফটিকছড়ি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আইয়ুবুর রহমান বলেন, ”নগর সোনালী নীড়” নামে কোন সমবায় সমিতি অনুমোদন আমার কার্যালয়ে নেই। কোন গ্রাহক অভিযোগ করলে আমরাও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৭ সাল থেকে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে এককালিন, মাসিক, সাপ্তাহিকসহ নানা কায়দায় গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার আমানত সংগ্রহ করে ‘নগর সৌনালী নীড়’ নামক ওই অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে গ্রাহকদের লভ্যাংশ দিলেও ২০১২ সালের মার্চের দিকে হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটি উধাও হয়ে যায়। তাদের অফিসে ঝুলতে থাকে বড় বড় তালা। গ্রাহকরা ভীড় করতে থাকেন অফিস এলাকায়। কিন্তু তাদের কারো দেখা মেলে না। বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নেন বেশ কয়েকজন গ্রাহক। একাধিক অভিযোগ ও মামলা দায়ের করেন গ্রাহকরা। তাদেরই একজন ছিলেন কুসুম আকতার। যার মামলার প্রেক্ষিতে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়।

কুসুম আকতার বলেন, আমার চার লক্ষ টাকার এককালিন তাদের কাছে জমা ছিল। আর্মা ছেলের নামে ডিপিএস করা টাকায় ছিল আরো ৮৬ হাজার টাকা।

আমার শেষ সম্ভলটুকু তারা লুটপাট করে নিয়েছে। আমি চেয়ারম্যান আবু তালেবের কাছে গেলে তিনি আমাকে আরো উল্টো ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিতেন। তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা, আবার জনপ্রতিনিধিও; তাই তার অনেক দাপট।’

কুসুম আকতারের মতো আরো কয়েকশ হতদরিদ্র লোকজন লাভের আশায় এ প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে এখন পথে বসেছে। দৌলতপুর এবিসি এলাকার এজাহার নামক এক ঘি বিক্রেতার সারা জীবনের সঞ্চয় করা দুই লক্ষ টাকা জমা রেখেছিলেন নগর সৌনালী নীড় নামক ওই প্রতিষ্ঠানে। পাড়ায় পাড়ায় ঘি বিক্রি করে জমানো টাকা লুট হয়ে যাওয়ার সেই কষ্টে তিনি ষ্টোক (হৃদক্রিয়া রোগে আক্রান্ত) করে মারা যান গত বছর।

শারীরিকভাবে পুঙ্গত্ব বরণ করা মহিউদ্দিন নামক এক গ্রাহক বলেন, ‘আমি ওই প্রতিষ্ঠানে চার লক্ষ টাকা জমা রেখেছিলাম। তা শুধু চেয়ারম্যান আবু তালেবকে দেখেই তার হাতেই আমার জীবনের শেষ সম্ভলটুকু জমা রেখেছিলাম। পরিষদে যখন তার কাছে আমার টাকার ব্যাপারে আমার স্ত্রীকে নিয়ে তার কাছে গেলাম; তিনি ধমক দিয়ে বললেন, পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে জেলে পাঠাবো। চৌকিদার দিয়ে আমাকে পরিষদ থেকে বের করে দিলেন। সেদিন আমার আর আমার স্ত্রীর চোখের পানি দেখে অনেকেই শান্তনা দিয়েছেন। কিন্তু তালেব চেয়ারম্যানের মন একটুও গলেনি। তার বিচার আল্লাহ করবে।’

১ টি মন্তব্য
  1. Solaiman Mohammad বলেছেন

    সব খেয়ে উজাড় হইছে অনেক আগে।