অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রণজিৎ বিশ্বাসের মরদেহ চেয়ারের উপর কেন!

0
13537573_10209181309802356_8744333608051294421_n
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্লাষ্টিকের চেয়ার পেতে রাখা হয় দেশবরণ্য লেখক রনজিৎ কুমার বিশ্বাসের মরদেহ।

পাঠক প্রিয় লেখক রণজিৎ বিশ্বাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনতা। শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে রাখা হয় তার মরদেহ।

একে একে সকলেই তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেও জনপ্রিয় এ লেখক ও ক্রীড়া ভাষ্যকার রনজিৎ বিশ্বাসের মরদেহ কয়েকটি প্ল্যাষ্টিকের চেয়ার জড়ো করে তার উপর রাখা হয়েছে দেখে উপস্থিত লোকজনের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

13439173_1760970087451237_107160902147933043_n
চেয়ারের উপর ফুলে ফুলে ঢেকে যায় রণজিৎ বিশ্বাসের মর দেহ।

এসময় অনেককে বলেন, জীবিত থাকা কালে এ মানুষটি মূল্যায়ন হয়নি। মৃত্যুর পরও তার প্রতি এ কেমন অবহেলা..?

এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

সাইদুর রহমান পাটোয়ারী নামে একজন ফেসবুকে শ্রদ্ধা নিবেদনের ছবি দিয়ে লিখেছেন-

“অনেক গুলো ভন্ডের মাঝে আমাদের প্রিয় রণজিৎ স্যার ঘুমিয়ে আছেন। ক্ষমা করবেন স্যার। পেছনে দেখা যায় বড় বড় ফুলের তোড়া, এগুলো না এনে ৫০০ টাকা খরচ করলেইতো একটা খাটের ব্যবস্থা করা যেতো। সব শালা ভন্ড।”

সাংবাদিক আল রহমান লেখেন-রণজিৎ বিশ্বাস দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। কী পেলেন বিনিময়ে! তার কর্মকীর্তির মূল্যায়ন হয়নি এটা প্রকাশ্যে বললেন স্ত্রী শেলী বিশ্বাস। তার মরদেহ রাখার জন্যে একটি খাট বা পালঙ্ক জোগাড় কিংবা একটি ছোট্ট মঞ্চ তৈরি করতে পারেননি আয়োজকেরা! প্লাস্টিকের চেয়ারের ওপর মরদেহটি রাখা হলো। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন হলো, এটি কি পূর্বপরিকল্পিত প্রোগ্রাম, নাকি তাড়াহুড়োর! শিডিউল ঘোষণার পর কতক্ষণ সময় ছিল হাতে! শেষযাত্রায়ও তিনি শিখিয়ে গেলেন এখনো সমাজে অনেক পরিবর্তনের সুযোগ রয়ে গেছে। প্রচারপ্রিয় কাউকে দুঃখ দেওয়ার জন্যে কিংবা হেয় করার জন্যে এ পোস্ট নয়। আগামী দিনে যাতে গুণীজনদের যথাযথ কদর হয় সে জন্যেই এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। ভুল বুঝলে ক্ষমা করবেন। ভালো থাকবেন। (বোবার শত্রু নাই)

এসময় সেখানে উপস্থিত তার স্ত্রী শিক্ষিকা শেলী বিশ্বাস বলেন, লেখার সঠিক ব্যবহার যেমন করতে পারেনি; তেমনি সঠিক মূল্যায়নও হয়নি।

আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, এ অবস্থায় কিছু বলার কঠিন। আমি ৩৫ বছরের সাথি হারিয়েছি, দেশ হারিয়েছে একজন বড় মাপের লেখককে। শুদ্ধ বানান লেখা, শুদ্ধ ভাষা চর্চায় উনার চেয়ে ভালো কেউ পারেন না। তার শূন্যস্থান পূরণে কয়েক যুগ চলে যাবে। তার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। এটা নিয়ে তারও ক্ষোভ ছিল।

বেলা সাড়ে ১১টা দিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি মরদেহবাহী গাড়িতে করে রণজিৎ বিশ্বাসের মরদেহ জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে আনা হয়।

এসময় সেখানে রনজিৎ বিশ্বাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহিদুল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, ড. বিশ্বাসের স্ত্রী শেলী সেন গুপ্তা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ।

এছাড়াও শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, সদস্য আসিফ সিরাজ, ড. মনজুরুল আমিন চৌধুরী, কবি আনন্দ মোহন রক্ষিত, ওমর কায়সার, শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ, অরুণ শীল, আলেক্স আলীম, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, প্রবীণ ছড়াকার নূর মোহাম্মদ রফিক, নাট্যজন অসীম দাশ, সংস্কৃতি সংগঠক সুনীল ধর, চিটাগাং টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ প্রমুখ।

সাবেক সচিব ও জননন্দিত লেখক ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস পারিবারিক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামে এসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

লেখকের একমাত্র কন্যা মুক্তা বিশ্বাস ও জামাতা কানাডা থেকে আগামী রবিবার দেশে আসার পর রাঙ্গুনিয়ার পোমরা গ্রামে তার শেষ কৃত্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।