অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন সংকট

0
ছবি: প্রতিকী

সারাবিশ্বে প্রতি বছর জলাতঙ্ক রোগে ৫৫ হাজার রোগী মারা যায়। বাংলাদেশে মারা যায় প্রায় দুই হাজার। তবে একটু সচেতন হলেই এ রোগ থেকে বাঁচা যায়। কুকুর বা অন্য প্রাণী কামড়ালে দ্রুত হাসপাতাল বা যেখানে এই রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয় সেখানে গেলেই বিপদ মুক্ত হওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা এ মতামত জানালেও চট্টগ্রামে সময় মত হাসপাতালগুলোতে এর প্রতিষেধক না পাওয়ায় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা। গত এক বছরে যে পরিমাণ মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছিল চলতি বছর মাত্র নয় মাসেই ওই পরিমাণ মানুষ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছে। কুকুরের কামড়ের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় জলাতঙ্ক রোগের আশঙ্কাও বেড়েছে। তবে যে হারে জলাতঙ্কের আশঙ্কা বেড়েছে সে অনুযায়ী কোন কর্মসূচী গ্রহণ করেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

গত বছর কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিন প্রদান করলেও এবার তারা এ বিষয়ে কোন আগ্রহ দেখায়নি। উল্টো গত কয়েকদিনে কর্পোরেশনের লোকজন চট্টগ্রাম নগরীর বেশকিছু এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করেছে। অথচ নিধন না করে কুকুরকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এনেই জলাতঙ্ক প্রতিরোধ সম্ভব বলে অভিমত বিশেষজ্ঞ মহলের।

নগরীতে কুকুর নিধিন চলছে।

চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের সংকট অনেক দিনের গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রামে সরকারিভাবে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সরবরাহ কমে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা আক্রান্তরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে এসব ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হলেও বাইরে থেকে কিনতে রোগীদের প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

চট্টগ্রামে জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এসব ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও রোগীদের কম খরচে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দিয়ে থাকে। এসব চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, মাসে ৭০০ থেকে ৮০০ আক্রান্ত রোগী ভ্যাকসিন নিতে আসছে হাসপাতালগুলোতে।

জানা যায়, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদানের কোনো সরকারি ব্যবস্থা নেই। ফলে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হিংস্র প্রাণীর কামড়ে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিতে শহরের জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০/২৫ দিন পূর্বে ৭০টি ভায়েল সরবরাহ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর আর কোনো সরবরাহ পাওয়া যায়নি। অথচ জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন রোগী ভ্যাকসিন নিতে হাসপাতালে আসছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন অনেক আক্রান্ত রোগী ভ্যাকসিন না পেয়ে ফেরত যাচ্ছে। নগরী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক আক্রান্ত রোগী জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে ভিড় করছে।

অন্যদিকে সরকারিভাবে ফৌজদারহাট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা সেবার সুখ্যাতি রয়েছে। অন্যান্য স্থানে রোগীদের মাংসের মধ্যে ভ্যাকসিন পুশ করা হয়। কিন্তু এই হাসপাতালে রোগীদের চামড়ার নীচে ভ্যাকসিন পুশ করা হয়।

চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েক মাস ধরে জলাতঙ্কের পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে মাসে ২০০ ভায়েল ভ্যাকসিন সরবরাহ পাওয়া যেত। এখন মাসে ৫০ ভায়েলের বেশি বরাদ্দ মিলছে না। হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে ৮/৯ জন রোগী চিকিত্সাধীন রয়েছে। আর প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ভ্যাকসিন পুশ করে চলে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন সরবরাহ কমে যাওয়ায় রোগীদের চিকিত্সা ব্যাহত হচ্ছে। গত তিন মাসে প্রায় ৩/৪ জন রোগী জলাতঙ্কে মারা গেছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও দীর্ঘদিন জলাতঙ্ক রোগীদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চালু রেখেছে। কুকুর, বিড়াল, শৃগাল, ভল্লুক, বাঁদর ও বেজির কামড় থেকে জলাতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে। চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক রোগ নির্ণয়ের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসাকরা রোগীর আচরণ দেখে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।