সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে বেহায়াপনা নারীত্বের প্রাতি চরম অবমাননা
শোভা বর্ধনের পণ্য যাচাই বাছাইয়ের মানদণ্ড হিসেবে পণ্যের বাহ্যিক বেশ-ভূষা ও কাঠামোগত সৌন্দর্যনকেই মুখ্য বিবেচ্য বিষয় হিসেবে ধরা হয়। কথিত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগী নারীদের বেলায়ও তো ঠিক সেটাই হচ্ছে।
যেমন- প্রতিযোগী নারীর কার ত্বকের রং কতটা ফর্সা? কতটা মসৃণ? কতটা আকর্ষনীয়? কার উচ্চতা কতটুকু? উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কেমন? উচ্চতা ও ওজন অনুযায়ী পেট কত সরু? বুক কতটা ভারী? নিতম্ব কতটা চওড়া? পা ও ঊরুর দৈর্ঘ্য কত? পায়ের পাতার গড়ন কেমন? হাসি কেমন? হাসার সময় গালে টোল পড়ে কিনা? চাহনী কেমন? বাচনভঙ্গী কেমন? কণ্ঠস্বর কতটা ধারালো? চুলের স্টাইল কেমন? হাঁটার সময় নিতম্ব কতটা দুলে ওঠে? ত্বকের রং, চেহারা ও শারীরিক কাঠামো মিলে কতটা যৌন আবেদনময়ী? মূলতঃ এসব বিচার করেই তো ‘বিশ্ব সুন্দরী’ নির্ধারণ করা হয়। সেই সাথে আরো শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়- বিবাহিত হওয়া যাবে না, সন্তানের মা হওয়া যাবে না; মানে কৌমার্যে অক্ষত থাকার ঘোষণা থাকতে হবে।
শারিরিক এইসব বিষয়ের মাপ-জোকের পর সম্মিলিত পর্যবেক্ষণের জন্য অংশগ্রহণকারীদেরকে বিকিনি পরে বিচারক ও নির্বাচিত দর্শকদের সামনে হাজির হয়ে নানা কসরতে হেঁটে, হেলে-দুলে, যৌন আবেদন তৈরি করে, নিজেদের নিখুঁত দেহবল্লরীর প্রদর্শন করতে হয়।
মাংসের দোকানে নিজেকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করলে তো মাংস বিক্রির নিয়ম মেনেই সেটা করতে হবে; তাই না? খরিদ্দার পয়সা দিয়ে পচা-বাসি মাংস কিনবে কেন? কথিত সুন্দরী প্রতিযোগিতায়ও নারীকে সেই পর্যায়েই দেখা হয়। যে কারণে এবারের প্রথম বিজয়ীনির কাছ থেকে তার বিবাহের তথ্য গোপন রাখার কারণে (মানে কৌমার্যক অক্ষত না থাকার কারণে) মুকুট কেড়ে নেওয়া হয়। সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে নারীকে আগাগোড়া পণ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে, তার আরো উদাহরণ দিতে হবে?
– এই হচ্ছে সুন্দরী প্রতিযোগিতা!!!
যৌন আবেদনের শরীরিক বৈশিষ্টের ভিত্তিতে একজন নারীকে নিরেট ‘পন্য’ হিসেবে উপস্থাপনের এই পুরুষতান্ত্রিক পদ্ধতিকে সমর্থন দিয়ে কার্যতঃ কথিত নারীবাদিরা নারীদেরকে পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজটাই করে যাচ্ছেন অবলীলায়।
আচ্ছা, আমি, আপনি বা আমাদের সমাজের কেউ কি প্রকাশ্য ভরা মজলিশে আমাদের স্ত্রী, বোন, ভাগনি, ভাতিজীদের ত্বক, বুক, পেট, নিতম্ব, ঊরু, পা, শরীরের নিখুঁত মাপ-জোক ও সৌন্দর্যের বর্ণনাকে কখনো সাপোর্ট করব বা মেনে নেব? বাংলাদেশের সমাজ চিত্র ও সংস্কৃতির দিক থেকে যদি উত্তরটি “অবশ্যই না” হয়ে থাকে, তবে কীভাবে সমাজে বসবাসকারী অন্যের বোন, ভাগনি, ভাতিজীদের ক্ষেত্রে এমনটা সমর্থন দিতে পারি? ওমেনচ্যাপ্টার ও নারীবাদের ধ্বজ্জাধারীরা মূলতঃ নারীদেরকে পুরুষদের মনোরঞ্জণের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে নারীত্বের চরম অবমাননার কাজটিই করে যাচ্ছে।
নারীদের মর্যাদা ও সম্মানহানি করে নারীদেরকে নিরেট ভোগ্য পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের কথিত এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে জোর আওয়াজ তুলতে হবে।
বাংলাদেশের কালচার ও সমাজ জীবনে নারীদের এমন সম্মানহানি কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। এটা রুখে দিতে তৎপর হওয়া আপনি, আমি এবং আমাদের সকলের দায়িত্ব।
লেখকঃ মুনির আহমদ
সাবেক প্রেস সচিব, হেফাজতে আমীর ও
সাবেক নির্বাহী সম্পাদক : মাসিক মঈনুল ইসলাম।
“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।”
ঠিক।
yes
১০০% ঠিক
রাইট
এটাতো ওদের ব্যবসা,,,,আর কিইবা বলব,,,যেখানে নিজেকে খুবিই সুন্দরী হিসেবে জাহির করার জন্য যদি নিজের সব কিছু দেখিয়ে বেড়ায়,,, সেখানে অন্যের দোষইবা দিয়ে লাভ কি,,,,?