অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ার আর বেঁচে নেই

2
.

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার আর বেঁচে নেই। সোমবার (২৩ অক্টোবর-১৭) দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডের নিজ বাসায় এই বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দীন দিদার রাতে বিষয়টি জানিয়েছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের স্থায়ী কমিটির এ সদস্যের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

এম কে আনোয়ারের জন্ম ১৯৩৩ সালে কুমিল্লায়। তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে তিন দশকের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন।

চাকরিজীবন থেকে অবসর নিয়ে বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

এরপর বিভিন্ন সময়ে পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দুই বছর ধরেই তিনি নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে এই সরকারের আমলেও বিভিন্ন সময়ে জেল খেটেছেন।

এম কে আনোয়ার জাতীয় রাজনীতির বিবেক পুরুষ হিসেবে খ্যাত। মোহের কাছে তিনি কখনো আত্নসমর্পন করেননি। তার রাজনীতি ছিল মানব কল্যানের রাজনীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের রাজনীতি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশের জন্য, মানবতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, আইনের শাসনের জন্য লড়াই করে গেছেন।

রাজনীতিতে বিবেকের কন্ঠধবনি হিসেবে তার নাম এদেশের ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় এমকে আনোয়ার সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর যোগ দেন বিএনপির রাজনীতিতে। ৩৪ বছরের পেশাজীবনে যেমন সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সৎ,মার্জিত, সজ্জন ও মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবেও পরিচিত পান তিনি। পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে সরব দেখা গেছে মাঠে-রাজপথে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার অসুস্থতাবস্থায় গত দুই বছর এখন অনেকটা ঘরের মধ্যেই বিছানায় কাটিয়েছেন। মামলার হাজিরা ছাড়া ঘর থেকে খুব একটা বের হতেন না

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা গত দুই বছর ধরে রাজনীতিতে খুব একটা সময় দিতে পারেননি। নাশকতার মামলায় আটক হয়ে ছয় মাস কারাগারে থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পান তিনি।জেলে যান সুস্থাবস্থায়। আর জেল থেকে বের হয়ে আসেন অসুস্থাবস্থায়। জেল থেকে বের হওয়ার কিছুদিন পর চিকিৎসার জন্য চলে যান ভারতে। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি।

শারীরিক অসুস্থতায় সেভাবে চলাফেরা করতে না পারায় কোথাও যেতেন না এম কে আনোয়ার। এমনকি তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও অংশ নিতে পারতেন না। তবে তাকে নাশকতা মামলার আসামি হিসেবে এ্যাম্বুলেন্স চড়ে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। গত বছর দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর গঠিত নতুন কমিটিতে কুমিল্লার জনপ্রিয় নেতা এম কে আনোয়ারকে রাখা হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে।

সরকারি কর্মকর্তা, এম পি ও মন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে তিনি দেশের সেবা করে গেছেন। চরম শত্রুরাও তার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি কখনো।কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তার শেষ জীবন কেটেছে আদালতের বারান্দায় বারান্দায়।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে অসুস্থতার কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি মাঠে না থাকলেও নাশকতা, উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে ২১টি মামলা হয় এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খাটেন। ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় আটজন নিহত হওয়ার ঘটনার মামলায় সাবেক এই সচিবকে কারাগারে পাঠান আদালত।প্রবীণ ও মার্জিত এ রাজনীতিককে জেলে পাঠানোর এ ঘটনা দেশবাসীর মনে দারুণ দাগ কাটে। সমালোচনায় পড়তে হয় সরকারকে।

প্রায় ছয় মাস জেল খেটে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান তিনি। জেল খানায় এত অসুস্থ হয়ে পড়েন যে,বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০ এপ্রিল দিল্লি যান এম কে আনোয়ার। সেখানে তিনি হরিয়ানার মেদান্তা হাসপাতালে হৃদরোগ ও কিডনির চিকিৎসা নেন। এরপর দেশে ফেরার পর তাকে খুব বেশি প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

দলীয় কর্মসূচি তো দূরের কথা, সবশেষ গত ২১ মে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তিনি যেতে পারেননি শারীরিক দুর্বলতার কারণে।

এর মধ্যে কেবল দুই দিন তাকে দেখা গেছে বেরোতে। গত ১০ মে খালেদা জিয়ার ভিশন-৩০ ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। এরপর নাশকতার এক মামলায় গত ১৫ মে ঢাকার সিএমএম কোর্টে হাজিরা দিতে যান এম কে আনোয়ার।

খাঁটি জাতীয়তাবাদী এ নেতা নিজ এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়মিত তার সঙ্গে যোগাযোগ সার্বিক খোঁজখবর রাখতেন। রাখতেন দলের চেয়ারপার্সনের খোঁজখবর। অসুস্থতাবস্থায়ও লণ্ডন থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর তিনি ফোন করে খবর নেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদে এরই মধ্যে নির্দেশ দেন মামলার হাজিরা দেয়ার জন্য (২৪অক্টোবর) খালেদা জিয়া কুমিল্লা গেলে যেন তাঁকে সেখানে যেন তাকে ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হয়।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারি চাকুরে হিসেবে পেশাজীবন শুরু হয় এম কে আনোয়ারের। ১৯৯০ সাল পর‌্যন্ত তার ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি ফরিদপুর ও ঢাকার ডেপুটি কমিশনার, জুটমিল কর্পোরেশনের সভাপতি, টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের সভাপতি এবং প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিএসপি কর্মকর্ত এম কে আনোয়ার ১৯৭১ সালে ঢাকা জেলার প্রশাসক ছিলেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে এম কে আনোয়ার বিএনপিতে যোগ দেন। ওই বছর অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৮ সাল পর‌্যন্ত টানা পাঁচবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপি সরকারের বাণিজ্য, নৌ-পরিবহন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২ মন্তব্য
  1. Md Najim Nur বলেছেন

    আমিন

  2. Riponctg Ripon বলেছেন

    ইননালিললা হি ওয়া ইননা ইলাহী রাজিউন । আল্লাহ পাক উনার সমস্ত গুনা মাফ করে উনাকে বেহেস্ত নসিব করুন । আমিন ।