অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

প্রচুর পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা

0

আমরা সবাই জানি–পানির অপর নাম জীবন| পানি ছাড়া আমরা একদিনও চলতে পারি না | প্রতিদিন প্রায় সব ধরনের কাজে আমাদের পানি লাগবেই| সারাদিন আমরা যত ধরনের খাবার খাই, তার মধ্যে একমাত্র পানিই হচ্ছে ক্যালরি,ফ্যাট,শর্করা,ও চিনি মুক্ত| তাই যত খুশি পানি পান করুন, কোনো সমস্যা নেই| আমাদের শরীরের ৬০-৭০% ওজনই হচ্ছে পানি| তার মানে শরীরের প্রধান উপাদান হচ্ছে পানি| কিন্তু আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ভাবে, (যেমন- ইউরিন, ঘাম, শ্বাস প্রশ্বাস ইত্যাদি) শরীর থেকে পানি হারাই| তাছাড়া শরীরকে সচল রাখতেও পানি দরকার| তাই আমাদের শরীরে দৈনিক পানির চাহিদা অনেক| শারীরিক ফিটনেস অর্জন করতে হলে, খাদ্য তালিকায় প্রচুর পানি থাকতেই হবে| প্রতিদিন আমাদের প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে, না হলে অনেক রকম সমস্যা, যেমন: পানিশুন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনির সমস্যা, শরীরের টক্সিন জমা, ইত্যাদি হতে পারে|

পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা :

  • পানি মেটাবলিজম বাড়ায়, পেট ভরায়/ ক্ষুধা কমায় , তাই ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে
  • বরফ শীতল পানি পান করলে, শরীর তা হজম করার জন্য গরম হয়, ফলে কিছু ক্যালরি খরচ হয়|
  • পিপাসার্ত অবস্থায় পানি খেলে, তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের পানিশুন্যতা দূর করে| ফলে শারীরিক ক্লান্তি দূর হয় ও শক্তি ফিরে আসে| কারণ পানি রক্তে ও কোষে অক্সিজেন ও অনান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে| এছাড়া সারা শরীরের রক্ত সরবরাহ ও সঞ্চালন বাড়ে পানি পান করার ফলে|
  • পানির অভাবে মাসলের দুর্বলতা, অস্ব্স্তি বোধ হওয়া, মাথা ঘুরানো, ও অন্যান্য সমস্যা হতে পারে
  • পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে| পানির অভাবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে heat stroke হতে পারে
  • পানির অভাবে সারা শরীরের ও সমস্ত অঙ্গ প্রত্বঙ্গের সমন্বয় ঠিক মতো হয় না
  • পানি ইউরিন, bowel movement,ও ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে দুষিত/বর্জ্য পদার্থ ও ফ্যাট বের করতে সাহায্য করে|
  • পানি হজম শক্তি বাড়ায়, হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে| কারণ আমাদের শরীরের ঠিক ভাবে খাবার হজম করার জন্য প্রচুর পানি দরকার হয়| তাই প্রচুর আঁশ জাতীয় খাবারের পাশাপাশি, প্রচুর পানিও পান করতে হবে
  • পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়| পানি ঠিক মতো পান না করলে শরীর সব পানি শুষে নেয়, ফলে কোলন শুষ্ক হয়ে যায়, তাই শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিক মতো বের হতে চায় না বা bowel movement ঠিক মতো হয় না|
  • পানি কিডনির পাথর হওয়া থেকে বাঁচায়| কারণ, পানি ইউরিনের লবন ও মিনারেল ভেঙ্গে দেয়, ফলে কিডনিতে পাথর হয় না|
  • ব্রেইনের ৮৫% হচ্ছে, পানি| তাই পানির অভাবে আমরা মানসিক/ শারীরিক চাপে ভুগি| একটু পর পর পানি পান করলে, এই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং শারীরিক শক্তি বাড়ে
  • ব্যায়াম করার সময় একটু পর পর পানি পান করতেই হবে| পানি শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে, মাসেলের  ক্র্যাম্প হতে রক্ষা করে, শরীরের শক্তি ঠিক রাখে |তাই অনেক সময় ধরে সঠিক ভাবে ব্যায়াম করা যায়| শুধুমাত্র কার্ডিও ব্যায়াম নয়, ওয়েট ট্রেইনিং করার সময়ও একটু পর পর পানি খেতে হবে | তাহলে মাসেলে পানি শুন্যতা হবে না ও ব্যায়াম ভালো কাজ করবে|
  • পানি হচ্ছে প্রাকৃতিক ক্রিম, যা ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়| পানিশুন্যতা আমাদের ত্বকে বলিরেখা ফেলে| তাই প্রচুর পানি পান করলে, বলিরেখা থেকে মুক্ত থাকা যায়| কারণ পানি, কোষের পানি বাড়ায়, ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে ও বয়স কম মনে হয়| তাছাড়া, পানি শরীর থেকে সব দুষিত পদার্থ বের করে দেয়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, তাই ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়| তাই হেলদি, উজ্জল, মোলায়েম/কোমল ত্বক পেতে প্রচুর পানি পান করতে হবে|
  • ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে এক সপ্তাহ প্রচুর পানি পান করুন এবং এক সপ্তাহ পরে লক্ষ্য করুন উজ্জল ত্বক
  • পানি রোগ মুক্ত রেখে ও ত্বক সজীব রেখে তারুণ্য ধরে রাখে
  • প্রচুর পানি পান করলে কিছু ক্যান্সার, যেমন: কোলন, ব্লাডার, ও ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে রক্ষা পাওয়া যায়
  • জয়েন্টের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে| কারণ জয়েন্টের মেইন লুব্রিকেন্ট হচ্ছে পানি
  • জয়েন্ট(Arthritis) ও ব্যাক পেইনের রোগীরা তাই প্রচুর পানি পান করলে উপকার পান
  • পানি মাথা ব্যথা দূর করে ও প্রতিরোধ করে
  • পানি হার্ট এটাকের ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়| কারণ পানি হার্ট ও ব্রেইনের arteries এর clogging প্রতিরোধ করে
  • পানি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • পানি মস্তিষ্কের/ ব্রেইনের ক্ষমতা বাড়ায়, স্মৃতি শক্তি বাড়ায়, আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ করে
  • Gastrointestinal সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়, হজমের সমস্যা ও heartburn কমায়
  • পানি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, তাই উচ্চ রক্তচাপ কমায়

প্রতিদিন কত টুকু পানি পান করবেন?

প্রতিদিন কত গ্লাস পানি পান করবেন, এটা নির্ভর করে আপনার স্বাস্থ্য, ওজন, কোথায় বাস করেন-গরম না ঠান্ডা আবহাওয়ায়, আপনি কত কর্মঠ—ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম কেমন করেন, ইত্যাদির উপর| তাছাড়া, আপনি আর অন্য কি পানীয়, যেমন- চা, লাচ্ছি, জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি খান, তার উপরও নির্ভর করবে দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করবেন|

  • সাধারণত: পুষ্টিবিদেরা বলেন দৈনিক অন্তত: ৮ গ্লাস পানীয় পান করতে| তার মানে সব ধরনের পানীয় ও পানি সহ দৈনিক অন্তত:৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে|
  • The Institute of Medicine এর মতে পুরুষদের জন্য দৈনিক অন্তত: ৩ লিটার বা ১২ গ্লাস এবং মহিলাদের জন্য অন্তত:২ লিটার বা ৮ গ্লাস পানি পান করা দরকার|
  • the Institute of Medicine’s Food and Nutrition Board ১৯৯৪ সালে আরেকটি হিসাব প্রকাশ করেছে যে মহিলাদের জন্য ৯১ আউন্স এবং পুরুষদের জন্য ১২৫ আউন্স পানি পান করতে হবে
  • আরেকটি নিয়ম হচ্ছে আপনার ওজন যত পাউন্ড, ঠিক তার অর্ধেক আউন্স পানি খেতে হবে| যেমন: আপনার ওজন যদি হয় ১৬০ পাউন্ড, তবে আপনাকে ৮০ আউন্স পানি পান করতে হবে| এই পানি সকল রকম পানীয়র হিসাব| তবে ৮০ আউন্স এর ৮০% বা ৬৪ আউন্স, শুধু মাত্র পানি খেলে ভালো| মনে রাখবেন যে, ৮ আউন্স = এক গ্লাস পানি
  • তবে আপনি যদি সুস্থ্য সবল হন, তবে পানি খাওয়ার হিসাব নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই| পিপাসা পেলে, স্বাভাবিক ভাবে পানি পান করলেই চলবে|
  • কিন্তু আপনি যদি খেলোয়াড় হন, ব্যায়াম করেন, বা অনেক ঘামেন, তাহলে আরো বেশি পানি পান করতে হবে|
  • অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়, তাই অনেক বেশি পানি পান করতে হবে|
  • অসুস্থ্য হলে, যেমন: জ্বর, ডায়রিয়ায়, বমি হবার পরে অনেক বেশি পানি পান করতে হবে|

কি ভাবে বুঝবেন যে আপনি সঠিক পরিমানে পানি পান করছেন?

  • আপনি যদি সব সময় তৃষ্ণার্ত বোধ না করেন
  • আপনার যদি দৈনিক ১.৫ লিটার ইউরিন হয়
  • যদি ইউরিনের রং সাদা বা হালকা হলুদ হয়
  • ইউরিনের রং হলুদ হলে আপনি সঠিক পরিমানে পানি পান করছেন না
  • আপনার bowel movement যদি ঠিক মতো হয় এবং আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়|

পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা কত তা অনুধাবন করে, আপনার সাথে তাই সব সময় বিশুদ্ধ খাবার পানি রাখুন ও বেশি বেশি পানি পান করুন| গরমের দিনে অনেক বেশি পানি পান করে শরীর ঠিক রাখুন| হেলদি লাইফ স্টাইল মেনে চলার খুব সহজ একটি উপায় হচ্ছে, প্রতিদিন অনেক বেশি পানি পান করা| তাহলে আপনাকে সুস্থ্য, সুন্দর ও সবল দেখাবে|