অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আপনার শিশুর স্কুলব্যাগ বেশি ভাড়ী নয় তো !

0

সিনান (ছদ্মনাম) কেজি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। ক্লাসের ফার্স্টবয়। স্কুলে পাঠ্যবই অনেক। হাতে করে সব বই স্কুলে নিয়ে যাওয়া বা নিয়ে আসা সিনানের পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া আছে স্কুলের এবং বাড়ির কাজের নানা খাতা, পেনসিল বক্স, টিফিন বক্স, পানির বোতল। তাই সাহায্য নিতে হয় স্কুলব্যাগের। বই, খাতা, পেনসিল বক্স, টিফিন বক্স, পানির বোতল, খেলার সরঞ্জাম—সব মিলিয়ে বেশ ভারী হয়ে যায় স্কুলব্যাগটা। ব্যাগের ভারে ওর হাঁটতে কষ্ট হয়। শরীর বাঁকা হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে পিঠব্যথা, ঘাড়ব্যথা, হাতব্যথার কথা বলে মায়ের কাছে।
শুধু সিনানই নয়, বাচ্চাদের স্কুলের সব ছাত্রই স্কুলব্যাগে করে বইপত্র আনা-নেওয়া করে এবং এদের অনেকেরই এ রকম শারীরিক সমস্যা হয়।
১৬-১৭ বছর বয়সের আগে শিশুর শরীরের হাড়, মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড়ার লিগামেন্ট, মাংসপেশি—এসবের বিকাশ লাভ পরিপূর্ণ হয় না। কম বয়সে নিয়মিত বাড়তি ওজন বয়ে বেড়ালে এসবের বিকাশলাভে যেমন বিঘ্ন ঘটে, তেমনি দেখা দিতে পারে নানা শারীরিক সমস্যা। গবেষকদের মতে, বইখাতাভর্তি স্কুলব্যাগের ওজন বাচ্চার শরীরের ওজনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি যেন না হয়। আপনার সন্তানের ওজন ২০ কেজি হলে তার স্কুলব্যাগের ওজন দুই-তিন কেজির বেশি করা যাবে না। বেশি হলে এবং দিনের পর দিন এভাবে ব্যাগ বহন করলে তার মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যেতে পারে; কাঁধে, ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা করতে পারে, যা পরে বড় হলেও থেকে যেতে পারে। মেরুদণ্ডে আছে পরপর সাজানো ৩৩টি কশেরুকা। দুই কশেরুকার ফাঁকে ফাঁকে আছে স্পঞ্জের মতো চাকতি। বেশি ভারে এসব চাকতি চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যাবে।
মেরুদণ্ডকে স্বাভাবিক অবস্থায় একপাশ থেকে দেখলে ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো দেখায় অনেকটা। ঘাড়ের অংশ সামনের দিকে, পিঠের অংশ পেছনের দিকে, আবার কোমরের অংশ সামনের দিকে এবং নিতম্বের অংশ পেছনের দিকে বাঁকা। এটা মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা। বসা বা দাঁড়ানো অবস্থায় আমাদের মেরুদণ্ডের এই স্বাভাবিক বক্রতাকে ধরে রাখতে হবে। অন্যথায় হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট ও মাংসপেশিতে চাপ পড়বে। মেরুদণ্ড, পিঠ ও কোমরব্যথাসহ নানা সমস্যা দেখা দেবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুঁজো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যাবে। স্কুলব্যাগের বইপত্রের ভারে আপনার সন্তান যদি সামনের দিকে বা পেছনের দিকে কিংবা ডানে অথবা বাঁয়ে বাঁকা হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে, স্কুলব্যাগটি বেশি ভারী হয়ে গেছে।
এ ছাড়া ব্যাগের ফিতার চাপে কাঁধ ফুলে যেতে পারে। এমনকি কাঁধে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চার কাঁধে, ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা হবে, পিঠ বাঁকা হয়ে যাবে। বাহু বা হাতেও ব্যথা হতে পারে। ঝিমঝিম করতে পারে হাতে।
এসব হলে বুঝতে হবে, ব্যাগের ওজন বেশি হয়ে গেছে।
 স্কুলব্যাগের ভারে ছোট্ট শিশুটির শারীরিক কোনো ক্ষতি যেন না হয়, সে জন্য বাবা-মাকে একটু সতর্ক হতে হবে।
 কিনতে হবে অপেক্ষাকৃত কম ওজনের কাপড়ের ব্যাগ। ব্যাগে ধাতব রিংয়ের বাড়তি ওজন যেন না থাকে।
 সরু ফিতার নয়, মোটা ফিতার ব্যাগ ভালো। সরু ফিতা কাঁধে দেবে যাবে বেশি, ব্যথা হবে।
 পিঠে ঝোলানো যায় এমন ব্যাগ ভালো। তাতে ব্যাগের ওজন ঠিকমতো পায়ের দিকে সঞ্চালিত হতে পারে। শরীর বাঁকা হবে না। এক কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে নিলে শরীর একদিকে বাঁকা হয়ে যাবে। মেরুদণ্ডে ব্যথা হবে। মেরুদণ্ড বাঁকা হবে।
 দুই হাতে ওঠাতে হবে ব্যাগ। সন্তানের দুই হাত ব্যাগের দুই ফিতার ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যাগটা তার পিঠে ঝুলিয়ে দিতে হবে।
 ব্যাগের ফিতাগুলো যেন লম্বা না হয়। পিঠে ঝুলন্ত ব্যাগ যেন বাচ্চার ঠিক কোমরে এসে পড়ে। তাহলে বইভর্তি ব্যাগের ওজন কোমরে এসে পড়বে এবং দুই পা বেয়ে মাটিতে পতিত হবে, মেরুদণ্ডে চাপ পড়বে কম।
 ব্যাগের নিচের অংশ ফিতা দিয়ে কোমর বরাবর বেঁধে দিতে পারলে আরও ভালো। তাতে পিঠে বাড়তি চাপ পড়বে না। পিঠ বাঁকা হবে না। কোমরের নিচে ব্যাগ ঝুলতে থাকলে ব্যাগের ওজন পিঠ বাঁকা করে মাটির দিকে ধাবিত হবে এবং পিঠ বাঁকা হয়ে যাবে, ব্যথা হবে।
 ব্যাগে বেশি পকেট থাকলে ভালো। তাহলে ব্যাগের মোট ওজন ব্যাগের বিভিন্ন দিকে ভাগ করে দেওয়া যাবে। শরীরের দুই দিকে সমান চাপ পড়বে।
 মাথায় বিদ্যার বোঝা বেশি চাপাতে গিয়ে পিঠে ব্যাগের বোঝা যেন বেশি হয়ে না যায়, এ ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখা দরকার শিক্ষকদেরও।