অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পরিবারের দাবী মুছা পুলিশ হেফাজতে

0
MUSA FAM
মিতু খুনের নির্দেশদাতা মুছার স্ত্রী পান্না ও তাদের দুই সন্তান।

আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার মুল নির্দেশদাতা হিসেবে পুলিশ যাকে ধরার জন্য দেশব্যাপী সর্তকতা জারি করেছেন সে মুছার পরিবার দাবী করেছেন মুছা পুলিশের হেফাজতেই রয়েছে।

গত ২২ জুন বুধবার ভোর ৬ টা থেকে ১১ টার মধ্যে এই গ্রেফতার অভিযান চাালায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় নিজ বাড়িতে মুছা সম্পর্কে এসব দাবী করেন মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার (৩২)। মুছা’র স্ত্রী পান্না জানান, গত ২২ জুন পুলিশ মুছাকে চট্টগ্রামের বন্দর থানার কাটগড় এলাকা থেকে আটক করেছে। এর পর থেকে মুছার কোন সন্ধান পাচ্ছেন না তারা।

মুছার স্ত্রী পান্না আশংকা প্রকাশ করে বলেন, মুছাকে পুলিশ যে কোন মুহুর্তে ক্রস ফায়ারে ফেলতে পারে। তাই তাকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করছে না।

তিনি বলেন, পুলিশ যখন মুছাকে গ্রেফতারের জন্য খুজছে তখন আমরা ঝামেলায় এড়াতে আমাদের দুই ছেলে সামির সিকদার (১২) ও সানজু সিকদার (৯) কে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকার নবী নামে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিই। ডিবি পুলিশ সেখানে আমাদের জিম্মি করে আমার মোবাইলে মুসার অবস্থানের তথ্য নিশ্চিত করে বন্দরের কাঠগর এলাকার একটি রাস্তা থেকে মুসাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার মুছার স্ত্রী পান্না আকতারের পিতা ফারুক সিকদারের রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের বাড়িতে সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান পান্না।

তবে মুছার স্ত্রী পান্নার এ দাবী অস্বিকার করেছেন ননগর গোয়েন্দা পুলিশ।

CTG PIC-Musa - Copy
পুলিশের দাবী এই মুছা পালাতক, পরিবারের দাবী মুছা পুলিশের হেফাজতে।

পান্না আকতার বলেন, ৫ জুন পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকে পুলিশি তৎপরতা দেখে মুছা শহরের কালা মিয়া বাজারের বাসা ছেড়ে বন্দর এলাকার বন্ধ নুর নবীর বাসায় আশ্রয় নেয়। স্ত্রী পান্না আকতার দুই ছেলে ভাসুর সাইদুল ইসলাম সিকদারকে নিয়ে বন্ধুর বাসায় অবস্থানের সময় ২২ জুন সকাল প্রায় ৬ টার দিকে পুলিশ নুর নবীর বাসা ঘিরে ফেলে। অতঃপর বাসায় প্রবেশ করে ভাসুর সাইদুল সিকদার ওরফে সাকুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পান্নার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে নবীর হাতে দেয় এবং মুছা সিকদারের কলের অপেক্ষায় থাকেন। এক পর্যায়ে মুছার কল আসে পান্নার মোবাইলে।

পুলিশের মামনে তাদের ইশারায় নবী মুছার সাথে কথা বলে অবস্থানের কথা জেনে নেয়। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নবীকে নিয়ে কিছু সংখ্যক পুলিশ মুছার অবস্থান পতেঙ্গা কাঠগড় এলাকায় উপস্থিত হয়ে মুছাাকে গ্রেফতার করে।

এদিকে বাসায় মুছার স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করে রাখা পুলিশ দলের সদস্যরা মোবাইল ফোনে মুছার গ্রেফতার নিশ্চিত হয়ে অপারেশন সাকসেসফুল বলে মুছার স্ত্রী ও সন্তানদের মুক্ত করে বাসা থেকে চলে যায়।

পান্না আকতার বলেন, আমার দুই ছেলে, আমি এবং আমার স্বামীর বন্ধু নুর নবী মুছা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের প্রত্যক্ষস্বাক্ষী। অথচ পুলিশ আমার স্বামীর গ্রেফতারের কথা রহস্যজনক ভাবে অস্বীকার করে পলাতক রয়েছে বলে প্রচার করছে। আমার স্বামীর পাসপোর্ট আমার হাতে রয়েছে। পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশে যাবে কি করে। পুলিশের নাটকীয় ভাষ্য আমাদের শংকিত করছে। পান্নার দাবী মুছা ২২ জুন থেকে পুলিশের কাছে আটক রয়েছে। তাকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হতে পারে বলেও মুছার স্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

পান্না আকতার আরো বলেন, আমার স্বামী মুছা সিকদার কোন অপরাধী নয়। দীর্ঘদিন সৌদী আরবে প্রবাসে চাকুরী করেছে। ২০০১ সনে দেশে ফিরে ব্যবসা বানিজ্যের সঙ্গে জড়িত হয়। পুলিশ অফিসার বাবুল আকতারের সোর্স হিসেবে কাজ করে জানতাম। কিন্তু কোনদিন আমি বাবুল আকতার সাহেবকে দেখিনি। আমি বাবুল আকতারের বাসায় যায়নি, তিনিও কোনদিন আমাদের বাসায় আসেনি।

বাবুল আকতারের বাসায় আমার স্বামী মুছা সিকদার যাওয়া আসা করত বলে জানি কিন্তু সোর্স বা বাসায় যাওয়া আসার কোন গল্প আমার সাথে করেননি। তিনি বলেন, আমার স্বামী সোর্স গিরি করলে দোষের কি! এটা অপরাধ দমনে সরকারকে সহায়তা করা। কেন আমার স্বামীকে মিথ্যা অপরাধে জড়াতে চায়! আমার স্বামীর গ্রেফতারের বিষয়ে প্রকাশ করা এবং দোষ করলে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবী জানাই।

এসময় পান্না আকতার তার দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সাক্ষাতের সময় মুছা সিকদারের শশুর ফারুখ সিকদার এবং বোন ফেরদৌস বেগম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মুছার স্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাশ ভট্টাচার্য্যের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে পাঠকডটনিউজকে বলেন, মুছার স্ত্রীর দাবী সত্য নয়। মুছাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা সীমান্ত এলাকা এবং বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কর্বাতা পাঠিয়েছি।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাশ ভট্টাচার্য্য বুধবার রাতেপাঠকডটনিউজকে জানান, মিতু হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে যেসব আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হত্যার নির্দেশ দাতাসহ অন্যান্য সহযোগীদের নাম জানিয়েছে। এদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঠা-াছড়ি গ্রামের জনৈক কামরুল সিকদার প্রকাশ আবু মুছা মিতুকে হত্যার করার জন্য ভাড়াটে খুনিদের সাথে চুক্তি করেছেন বলে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।