অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি রাঙ্গামাটি

1

পাহাড়ের কোলে হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশি। ঝর্ণার কলতান। আবার পাহারের চূড়ায় যেনোমেঘের খেলা। সবমিলিয়ে কেমন লাগে? হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না? ওহ! দারুন এক প্রশান্তি মিলবে সেখানে। বলছি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা রাঙামাটির কথা।

কাপ্তাই লেকের বুকে ভেসে থাকা ছোট্ট এই জেলা শহর আর আশপাশে সর্বত্রই রয়েছে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় স্থান। ছুটি কাটানোর স্থানটি যদি এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা হয়, ভালো না লেগে উপায় আছে! এখানকার জায়গাগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে।তবে বর্ষার সাজ একেবারেই অন্যরকম। শহরের কালো ধোঁয়া থেকেদূরে চলে গিয়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে ঘুরে আসতে পারেনরাঙ্গামাটি।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অপার সম্ভাবনাময় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের একঅপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। প্রকৃতি যেন বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে রাঙামাটিতে। চলাচলের প্রধান যানবাহনসিএনজি। ঢাকা শহরে বাস যেমন লোকাল চলে, সেখানে সিএনজিওলোকাল যাত্রী বহন করে। সিএনজিতে বসে বসে পাহাড়ের দৃশ্য দেখেমুগ্ধ না হওয়ার কোন উপায় নেই।

এই গরমের মাঝেও যদি কুয়াশা দেখতে চান তাহলে ভোর ৫টায়চোখ মেলে আকাশ পানে তাকাতে হবে আপনাকে। আবার ৮টারপর থেকেই রোদের প্রতাপ বাড়তে থাকে।

রাঙামাটি মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু:
রাঙামাটি শহরের শেষপ্রান্তে হ্রদের ওপর গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র।পর্যটন মোটেল পেরুলেই ঝুলন্ত সেতু। ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়ালেই চোখেপড়ে দৃশ্যমান লেকের অবারিত জলরাশি ও দূরের উঁচু-নিচু পাহাড়েরআকাশছোঁয়া বৃক্ষরাজি। পর্যটন কর্পোরেশন ১৯৭৮ সালে মূলমোটেলটি নির্মাণ করে। ৮৬ সালে মোটেলের আধুনিক অডিটোরিয়ামও ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে। ঝুলন্ত সেতু ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ, ৮ ফুটপ্রশস্ত এবং উভয় পাশে টানা তার দ্বারা বেষ্টিত। সেতুটির কারণেইমোটেলের গুরুত্ব ও আকর্ষণ অনেকগুণ বেড়ে গেছে। দিনবদলেরসঙ্গে সঙ্গে সেতুটি ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ হিসেবে রূপ নিয়েছে।এখানে আরও রয়েছে কটেজ, পার্ক, পিকনিট স্পট, স্পিড বোট ওসাম্পান টাইপের নৌযান।

রাজবন বিহার:
পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় তীর্থস্থান রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহীরাজবন বিহার। চাকমারা অবশ্য বিহার বা মন্দিরকে কিয়াং বলেথাকেন। এটি মূলত আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান বৌদ্ধবিহারহিসেবে পরিচিত। রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের রাজবাড়িরপাশেই এর অবস্থান। ১৯৭৬ সালে রাজবন বিহার প্রতিষ্ঠার পরথেকেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থাবির (বনভান্তে)অধ্যক্ষরূপে রয়েছেন। ৩৩ দশমিক ৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃতবিহার এলাকায় ৪টি মন্দির, ভিক্ষুদের ভাবনা কেন্দ্র, বেইনঘর,তাবতিংশ স্বর্গ, বিশ্রামাগার ও হাসপাতাল রয়েছে। প্রতিবছর বিহারেকঠিন চিবরদান অনুষ্ঠানে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে, যাদেশের আর কোন বৌদ্ধধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিরল।

শুভলং জলপ্রপাত:
রাঙামাটির শুভলং জলপ্রপাত সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব সৃষ্টি। পাহাড়িঝরনার শীতল জলধারা শুধু মনুষ কেন পাখিকেও দুর্বিনীত আকর্ষণেআকর্ষিত করে। শুভলং ঝরনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব নৈসর্গিকসৃষ্টি। শুভলং ঝরনা ৩০০ ফুট উঁচু থেকে বর্ষাকালে জল ধারারঅবিরাম পতনে সৃষ্ট ধ্বনিসমেত। শুভলং ঝরনা রাঙামাটির বরকলউপজেলায় অবস্থিত। কালিট্যাং তুগ এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।এটির উচ্চতা প্রায় ১৮৭০ ফুট।এই শৃঙ্গের পাদমূলে বরকল উপজেলা কমপ্লেক্স অবস্থিত। এইপর্বতশৃঙ্গ হতে রাঙামাটি জেলা সদর এবং ভারতের মিজোরামরাজ্যটি দৃষ্টিগোচর হয়। শুভলং ঝরণা ভিজিট করতে হলে রাঙামাটিসদরের তবলছুড়ি বাজার থেকে নৌযানে ২ ঘণ্টায় সরাসরি শুভলংযেতে পারেন।

শহরে এক চক্কর:

রাঙামাটি শহরে রয়েছে পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু,বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান রাজবন বিহার ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট জাদুঘর। জাদুঘরে রয়েছে পার্বত্য জাতিগোষ্ঠীরইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতির অনেক নিদর্শন এবং পার্বত্যচট্টগ্রামের চাকমা, বোমাং ও মং রাজা পরিবারের ব্যবহৃত রাজকীয়পোশাক, তলোয়ার, কামান, তৈজস ও দলিল–দস্তাবেজ। এ ছাড়াশহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পাহাড়িদের পরিচালিত রেস্তোরাঁ, যেখানেখেতে পারেন পাহাড়ি খাবার।

রাইন্যা টুগুন:

ইকো-টুরিজমের ধারণা নিয়ে গড়ে ওঠা বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্ররাইন্যা টুগুন। কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে আসামবস্তি সড়ক দিয়ে সাতকিলোমিটার দূরে কাপ্তাই হ্রদের পাশে গড়ে উঠেছে রাইন্যা টুগুন।অসাধারণ এই পর্যটনকেন্দ্রে পরিবার–পরিজন নিয়ে কাটাতে পারেনএকটি দিন। রাতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। দেখা মিলবে হরেকরকম পাখির।

আরণ্যক রিসোর্ট:

রাঙামাটি শহরের সেনানিবাস এলাকায় রয়েছে আরণ্যক রিসোর্ট।কাপ্তাই হ্রদে ঘেরা ছিমছাম পরিবেশ এ রিসোর্ট আপনাকে মুগ্ধকরবেই। রিসোর্টে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেভরা কেন্দ্রটি সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত।

মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতিসৌধ:

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিতহয়েছিলেন, তাদের একজন ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ।রাঙামাটি শহর থেকে নৌপথে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে স্বচ্ছজলরাশিবেষ্টিত ছোট একটি দ্বীপে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুররউফ স্মৃতিসৌধ। সৌধের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদেরবিমোহিত করে।

তাহলে আর দেরি কেন? এখনই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুনরাঙামাটির উদ্দেশে। তবে হাতে কমপক্ষে দুই দিন রাখতে হবে।রাঙামাটি গেলে অবশ্যই এই কয়েকটি স্থান ঘুরে আসুন। সারাজীবনএই স্মৃতি আপনাকে আনন্দ দেবে।

কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির সরাসরি বাস রয়েছে। আবার চিটাগং হয়েওযাওয়া যায়। যে পথেই যান না কেন খরচ হবে ৬৫০ টাকারমধ্যে। বাসে উঠতে পারবেন কল্যাণপুর, কলাবাগান, সায়েদাবাদথেকে। রাঙ্গামাটি পৌছানোর পর যেতে হবে রিজার্ভ বাজার। সেখান থেকেযেতে পারেন লঞ্চে। সকাল সাড়ে ৬টায় এবং দুপুর আড়াইটায় লঞ্চছাড়ে জুরাছড়ির উদ্দেশ্যে। যদি জুরাছড়িতে রাতে না থাকেন তাহলেদুপুর দেড়টা অথবা রাত ৮টার লঞ্চে ফিরতে পারবেন। ভাড়া নেবে৭০ থেকে ২০০ টাকা। রিজার্ভ বোট ভাড়া নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রেকয়দিনের জন্য নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করবে ভাড়া।

১ টি মন্তব্য
  1. Juwel chakma নানিয়ারচর রাঙ্গামাটি বলেছেন

    সত্যি অামাদের প্রিয় জন্মস্থান রাঙ্গামাটি খুব ভালো লাগে ।। চারিদিকে পাহাড়ের ফাকে ফাকে কাপ্তাইয়ের নদীর পানি, চাকমা রাজার রাজ বাড়ি, বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম রাজবন বিহার, জুলন্ত ব্রীজ, সুভলং ঝর্ণা, নানিয়ারচরের বুড়িঘাতে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতিসৌধ, তাছাড়া রয়েছে অারো অনেক গুলো দার্শনীয় স্হান । তাই। যারা বন্ধের দিনে পিকনিকে যাওয়ার চিন্তা করতেছেন তারা দেরি না করে রাঙ্গামাটি চলে অাসুন ।।