অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

একতরফা নির্বাচন আর বাংলাদেশে হতে দেয়া হবেনাঃ আমির খসরু

0
.

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই এই চুক্তি করা হয়েছে। এটা একটা ওপেন চুক্তি। কবে থেকে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে এবং কতদিনের মধ্যে পাঠানো হবে নির্দিষ্ট কোনও কিছুই নাই এই চুক্তির মধ্যে। এটা শুধুমাত্র জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই করা হয়েছে।’

আজ শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন : প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে আমির খসরু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে কারাঘরে রেখে আপনারা ঘরে ফসল তুলবেন সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব হবে না। বরং এর জন্য উচ্চমূল্য দিয়ে আপনাদেরকে পালাতে হবে। একজন আইনমন্ত্রীর মুখে এ ধরনে কথা শোভা পায়না। বিচার বিভাগ যে তারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারই প্রতিফলন ঘটেছে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে।’

৭ই মার্চের ভাষণ উপলক্ষে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশ প্রসঙ্গে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সমাবেশকে স্বাগত জানাই। একটা গণতান্ত্রিক দল হিসাবে প্রতিটি দলেরই সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। তবে কয়েকদিন আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আরেকটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল বিএনপি। এবং সেই সমাবেশ করার জন্য ২৩টি শর্ত দেয়া হয়েছিল, সমাবেশে যেন লোকজন না আসতে পারে তার জন্য গাড়ি-ঘোরা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এটা কি লেভেল প্লেইং ফিল্ড হল? একদল সরকারি সকল সুবিধায় নির্বাচনী প্রচারণা করবে অন্যদল সাধারণ সকল সুযোগ-সুবিধা পাবে না এটা তো গণতন্ত্র নয়। আজ লেভেল প্লেইং ফিল্ড নাই নির্বাচনকালীন সময়ে থাকবে এর তো কোনও আশাই দেখছি না।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত চিন্তা করে তাহলে তারা ভুল করছে। আগামী নির্বাচনের জন্য দেশের মানুষ প্রস্তুত। তারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সেই ধরনের নির্বাচন করার কোন সুযোগ থাকবে না।’

জাতীয় পরামর্শ বৈঠকে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সকলের একটা মত আছে চিন্তা আছে আমি জানি না আমার এ কথাটি বিচার বিভাগের বিপক্ষে যাবে কিনা? প্রধান বিচারপতিকে বিদেশে পাঠানোর নামে সরিয়ে দেয়া হয়েছে অন্য বিচারপতিদের হুঁমকি দেয়ার জন্য। এখন আমাদের বিচারপতিদের কথা আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে কিন্তু আমাদের ৫ জন বিচারপতি কোন কথা বলেন না। তাদের কথা বলেন অন্যজন। আর যখন প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার সময় বলে জান আমি সুস্থ্য আছি তখন তো আইনমন্ত্রী পদত্যাগ করতে পারতেন। কারণ তিনি আইনমন্ত্রী ডাক্তারের ভূমিকা পালন করে বলেছিলেন আমি নিজে স্বচক্ষে দেখেছি প্রধান বিচারপতি অসুস্থ্য।’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ এমন কোন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ নেই যাদের বিরুদ্ধে মামলা ছাড়া আর কিছু আছে। মামলার বাহিরে আছে গুম, খুন অপহরণ। আর যাদেরকে গুম করা হয়, এদের কেউ কেউ যখন গুম থেকে ফিরে আসে তারা আর কোন কথা বলেন না। যেমন কবি ফরহাদ মজাহার অনেক লিখতেন তিনি ফিরে আসার পর কি হয়েছে জানি না তবে এই দেশে তিনি একটা জিনিস বুঝতে পেরেছেন পণ্ডিত ব্যক্তি লেখক বুদ্ধিজীবী হওয়া ভয়ঙ্কর, একটা অপরাধের সমতুল্য হতে পারে। ভিন্নমত পোষণ করলে কি পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সেটি তিনি বুঝতে পেরেছেন।’

পরামর্শ বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার তো শাস্তি হয়ে গেছে। গতকাল আইনমন্ত্রী বলেছেন তার নাকি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আইনমন্ত্রী যদি এ কথা বলেন এই সিগনালটা কি? নিচের বিচারকদের কাছে সিগনাল নাকি? এখানে কি হাইকোর্টের করণীয় নেই? অন্তত হাইকোর্ট একটি সুমোটল জারি করে বলতে পারে একটি বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে বক্তব্য রাখার অধিকার আইনমন্ত্রীর নেই। আইনমন্ত্রীকে মানহানির মামলায় অভিযুক্ত করা উচিত।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে জাতীয় পরামর্শ বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক দিলারা চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সুকোমল বড়ুয়া, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন, জিনাপের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার প্রমুখ।