অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

হাঁপানির লক্ষণ ও ঝুঁকি এড়ানোর উপায়

0

একটু অসচেতনতায় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে হাঁপানি বা অ্যাজমা। আর তাই ভালভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন হাঁপানির টান কেন ওঠে, এর লক্ষণগুলো কি এবং জরুরি অবস্থায় কি করতে হবে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা কি?
হাঁপানি হলো কোনো ট্রিগার বা অ্যালার্জেনের কারণে সৃষ্ট শ্বাসনালীর সমস্যা। এই অ্যালার্জেন বা ট্রিগার ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়। এর ফলে যে নালীর মাধ্যমে ফুসফুসে বাতাস যায় তা সংকুচিত হতে হতে এমন অবস্থায় চলে আসে যে শ্বাস নেয়া খুব কষ্টকর হয়ে যায়। এসময় ভালোভাবে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বুকের মাংসপেশিগুলোর সাথে সাথে ক্লান্ত হয়ে যায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরও।

শরীরে স্বাভাবিক মাত্রায় অক্সিজেন না প্রবেশ করায় শরীর দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হল, এই যে শ্বাসনালীর সংকোচন, এটা কিন্তু শরীর করে নিজেকে রক্ষা করার জন্য, এটা হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঐ অ্যালার্জেনের বিপক্ষে চালানো যুদ্ধ, যেখানে মাঝখান থেকে আমরা পরে যাই বিপদে।

এই সমস্যা অ্যালার্জেনভেদে প্রকট আকার ধারণ করতে পারে খুব দ্রুত। তাই যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে তাদের তো বটেই, তাদের আশেপাশের মানুষ, পরিবার এবং বন্ধুদেরও জেনে রাখা উচিৎ যে এরকম অ্যাটাক হলে কি করতে হবে। যাদের এই সমস্যা খুব বেশী তারা প্রয়োজনে তাদের ডাক্তারের নাম, হাসপাতালের ফোন নাম্বার এবং সমস্যা হলে কী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে সব লিখে রাখতে পারেন। এতে বিপদের সময় সাহায্য পাওয়া সহজ হবে।

কারণ ও লক্ষণ
যে কোনো কিছু থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। ফুসফুসের কোনো ইনফেকশন, পোষা প্রাণী, ফুলের পরাগ রেণু, ছত্রাক, ধূলা, সিগারেট বা গাড়ির ধোঁয়া – যে কোনো কিছুই হতে পারে শ্বাসকষ্টের কারণ। তবে কারও শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে এটাই এর প্রধান লক্ষণ।

চিকিৎসা
যেহেতু প্রত্যেকের শ্বাসকষ্ট শুরু হবার কারণ বা ট্রিগার আলাদা সেহেতু এর চিকিৎসার শুরুতেই রোগীর জন্য কোন উপাদানটি ক্ষতিকর সেটা আলাদা করতে হবে, যাতে পরবর্তীতে সতর্ক হওয়া যায়। অ্যাজমা অ্যাটাক হঠাৎ করে শুরু হয়েই খুব দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে বসিয়ে শান্ত করতে হবে, এরপরে স্পেসারের সাহায্যে দুই বার শ্বাসনালী প্রসারক ইনহেলারের পাফ দিতে হবে।

এরপর চার মিনিট অপেক্ষা করে দেখতে হবে যে শ্বাসকষ্টের প্রকোপ কমেছে কিনা। যদি না কমে তাহলে আবার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া বাসায় নেবুলাইজার মেশিন থাকলে সেটার মাধ্যমে ওষুধ নেয়া যেতে পারে। তারপরও অবস্থার উন্নতি না হলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে যেন রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। অ্যাম্বুলেন্স আসবার আগ পর্যন্ত স্পেসার দিয়ে রোগীকে ইনহেলার দেবার চেষ্টা করতে হবে।

ঝুঁকি এড়াবেন কিভাবে
অ্যাজমার ওষুধ মূলত দুই রকমের, সমস্যা নিবারক ওষুধ, আর সমস্যা প্রতিরোধক ওষুধ, অর্থাৎ সমস্যা যেন বার বার না হয় তার জন্য ওষুধ । শ্বাসকষ্টের সমস্যা যেন বার বার না হয় সেজন্য রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিয়মিত প্রতিরোধক ওষুধ খেতে হবে যেন হঠাৎ করে অ্যাজমা অ্যাটাক না হয়। ফুসফুসের ইনফেকশন না সারলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিকতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তার স্টেরয়েড ওষুধ দিতে পারেন, সেটা সঠিক নির্দেশ মত খেতে হবে।

আর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া যাবে না। যেসব কারণে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয় সেসব ট্রিগার থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন, কারও ধূলায় অ্যালার্জি থাকলে বাইরে যাবার আগে মাস্ক পড়ে নিতে হবে বা মুখ ঢেকে রাখতে হবে যেন নিশ্বাসের সাথে শ্বাসনালীতে ধূলা না ঢুকে। এটি একটি বড় সমস্যা যার সময়মত চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, তাই এই রোগ সম্পর্কিত যতো প্রশ্ন আছে তা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিশ্চিত হয়ে নেয়া ভালো।