অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই, ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদ গ্রেফতার

0
Screenshot_6
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলা করে অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনায় বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ তার কাছ থেকে ১৮টি রামদা, ৮ রাউন্ড গুলি, ইয়াবা ও ২৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। ওই সময়ে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডারদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, উপজেলায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘বাংলা ডকইয়ার্ড’ নামে একটি বেসরকারি বাল্কহেড মেরামত ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবিতে ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলার অভিযোগ ওঠে। এমনকি ৯ বছরের এক শিশু গুলিবিদ্ধসহ আরও ৪ জন আহত হয়েছে। ওই সময়ে ডকইয়ার্ডে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনায় ডকইয়ার্ড মালিক আবুল কালাম বাসু বাদী হয়ে শুক্রবার বন্দর থানায় খান মাসুদকে প্রধান করে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামসুদ্দিন খানের ছেলে খান মাসুদ, ১৭২নং উইলসন রোড এলাকার মৃত জুলমত খানের ছেলে লিটন খান, র‌্যালি আবাসিক এলাকার মৃত হোসেন মিয়ার ছেলে সবুজ, মজিবুর রহমানের ছেলে নাদিম, বন্দর রেললাইন খালপাড় এলাকার নাসির মিয়ার ছেলে মাসুদ ওরফে ছোট মাসুদ, লেজারার্স এলাকার কামাল খালাসীর ছেলে রুবেল, বন্দর ইটালি বিল্ডিং এলাকার ইউনূস মিয়ার ছেলে অভি, চিনারদী স্ট্যান্ড এলাকার শাহ আল মিয়ার ছেলে রাজু, চুনাভূড়া এলাকার পারভেজ, জামাইপাড়া এলাকার মান্নান কাজীর ছেলে জাহাঙ্গীর, বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ আলীর ছেলে হানিফ তার কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় খান মাসুদ ও তার সহযোগীরা ডকইয়ার্ডে প্রবেশ করে ফের ৩০ লাখ টাকা দাবি করে। ডকইয়ার্ড মালিক বাসু মিয়ার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে খান মাসুদ গং তাকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে আসবাবপত্র ভাংচুর করে ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধণ করে এবং অফিসের ড্রয়ারে রক্ষিত নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে আহতের ডাক চিৎকারে আশ পাশের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাসু মিয়াকে গুরুতর অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

শনিবার সকালে ডকইয়ার্ডের সামনে খান মাসুদের লোকজন পাল্টা বিক্ষোভ সমাবেশ করার সময়ে পুলিশের এসআই অখিলচন্দ্র বিশ্বাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয়। ওই সময়ে হামলা করে পুলিশের একটি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন পুলিশ স্থানীয় একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে খান মাসুদকে আটক করে। তার কাছ থেকে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে।

এ দিকে পুলিশের অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কোনো সন্ত্রাসীই কোনো দলের নেতাকর্মী হতে পারে না। খান মাসুদ সম্পর্কে বার বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছি। আমার কোনো মিটিংয়ে তাকে দেখলে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। আজকে বন্দরে পুলিশের অস্ত্র লুটের ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ কোনো সন্ত্রাসীকেই যেন ছাড় না পায়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর বন্দরের প্রকৃত রাজনীতিবিদদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে পুলিশি সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া কেউ যেন কোনো প্রকার তদবির বা সমবেদনা না দেখাতে যান। এলাকার শান্তির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী কর্মসূচি সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ রাখছি।

অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া বন্দর থানার এসআই আহসানউল্লাহ চৌধুরী জানান, পুলিশের অস্ত্রটি উদ্ধারে অভিযান চলছে। এ ছাড়া খান মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।