অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ইস্টার্ন রিফাইনারী থেকে লাখ লাখ টাকার তেল পাচার করছে সিণ্ডিকেট চক্র

1
ইআরইএল গেইট।

চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল) থেকে তেল পাচারের অভিযোগে পুলিশ ৩টি তেলের ভাউচার আটক করলেও ৬দিন পর তা থানা থেকে ছেড়ে দেয়া অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে দেশের রাষ্ট্রায়াত এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে লাখ লাখ টাকার তেল পাচারে জড়িত রয়েছে একটি সিণ্ডিকেট। আর পুলিশ ও ইআরএল’র যোগসাজসে তেল পাচারের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। তেল পাচারের বিষয়টি ইআরএল, পুলিশ এবং বিপিসি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা যায়, ইআরএল’র অভ্যন্তরে ক্রুড অয়েলের স্টোরেজ ট্যাঙ্ক ১ জমা হওয়া পেট্রোলিয়াম স্লাজ (তেলের গাদা) বিক্রির জন্য গত অক্টোবর মাসে দরপত্র আহবান করলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। পরে কর্তৃপক্ষে পছন্দের নাজমা অয়েল অ্যান্ড কোম্পানী নামে একটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে যে গত ১ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং তারিখে ইআরএলের মাসিক মজুদ ডীপ অনুযায়ী ট্যাংক ১ এর তেলের পরিমাণ ছিল ১.৮৯৬ মিটার এবং পানির পরিমান ০.০৬০ মিটার। এই হিসেব অনুযায়ী ঐ ট্যাংকে ১.৮৩৬ মিটার তেল মজুদ ছিল। এই মজুত তেলের হিসাব ইআরএল হতে বিপিসি পর্যন্ত সংরক্ষিত হয়। এই মজুদ তেলের ১০% থেকে ১৫% স্লাজ থাকতে পারে। সাধারনত সিভিল বিভাগের হাতে ট্যাংক হস্তান্ত করার আগে ইনস্টলেশান প্রতিনিধি কর্তৃক পরিমাপ করে নিশ্চিত হতে হয় যে উক্ত ট্যাংক ড্রাই অবস্থায় অর্থাৎ উহাতে কোন তেল মজুত নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে ট্যাংকে বিপুল পরিমান ক্রুড অয়েল থাকা অবস্থায় স্লাজ ডিসপোজের অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইপিজেড থানায় আটকরা ৩টি তেলের ভাউচার।

সে মতে গত ৪ ডিসেম্বর থেকে নাজমা অয়েল অ্যান্ড কোম্পানীর নিয়োগকৃত লোকজন ভাউচারের মাধ্যমে স্লাজ নেয়ার কাজ শুরু করে।

অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে ট্যাংকে থাকা ১.৮৩৬ মিটার (প্রায় ৪ লাখ লিটার) অপরিশোধিত তেল পাচার করতে থাকে।

সুত্রমতে গত ০৪/১২/২০১৮ইং তারিখে মুনিরুজ্জামান নামে একজনের ডিউটি থাকার পরও তাকে বিদায় করে দিয়ে সেখানে নিজ থেকে দায়িত্ব পালন করেন সিভিল বিভাগের শ্রমিক (সিবিএ নেতা) বেলাল হোসেন। পরে স্লাজ এর আড়ালে ৫ ট্রাক (ভাউচার) ক্রুড অয়েল ইআরএলের বাইরে নিয়ে যায়। স্লাজের আড়ালে ইআরএল থেকে তেল পাচারে অভিযোগ পেয়ে নগরীর ইপিজেড থানা পুলিশ ৩টি তেলে ভাউচার জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।

একই দিনে আরও চার ট্রাক তেল ইআরএল গেটে আটক করে ভেতরে ফেরত পাঠানো হয়।

এদিকে দ্রুত তেল বের করার জন্য ট্যাংকের ম্যানহোলে যে পরিমাণ খোলার করার নির্দেশ ছিল, তারচেয়ে বেশি খোলা হয়। যাতে তেলের চাপে ট্যাংকে জমা থাকা সব তেল বাইরে পরে যায়। পরবর্তী সময় কর্তৃপক্ষ উক্ত তেল পাম্প ব্যবহার করে উত্তোলন করে।

.

ট্যাংক ১ এর ধারণ ক্ষমতা প্রতি মিলিমিটারে ৩.৮ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৩৮০০ লিটার। হিসাব অনুযায়ী উক্ত ট্যাংকে ১.৮৩৬ মিটার অর্থাৎ ১.৮৩৬*৩৮০০ লিটার ক্রুড ওয়েল মজুদ ছিল যেটা অত্যান্ত সু-পরিকল্পিত ভাবে পাচার করার উদ্দেশ্যে রাখা ছিল।

ঘটনা জানাজানি হলে ইআরএলের এমডি আক্তারুল হক স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে বাইরে পরা তেল সংগ্রহ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

এ ব্যাপারে জানতে এমডি আক্তারুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা এবং তাকে একাধিকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইষ্টার্ন রিফাইনারী এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইয়াকুব বলেন, একটি অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রীকে দাওয়াত দেয়ার জন্য আমি কয়েকদিন ঢাকায় ছিলাম। তবে তেল পাচারে অভিযোগে কয়েকটি গাড়ি পুলিশ জব্দ করেছে শুনেছি। যে অভিযোগে গাড়ী আটক করা হয়েছিল তা বিপিসি থেকে তদন্ত করে প্রমাণ পায়নি।

সিবিএ নেতারা জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বিকার করে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা প্রতিষ্ঠানের যে কোন অনিয়ম অব্যবস্থার প্রতিবাদ করি প্রতিষ্ঠানের সুনামের স্বার্থে। কারণ এ প্রতিষ্ঠানের একটা সুনাম রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিপিসির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমত উল্লাহ মুনায়েমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু মন্তব্য না করে বলেন, বিষয়টি বিপিসির অন্যান্য পরিচালকদের সাথে কথা বলেন।

এদিকে ইপিজেড থানা পুলিশ ৩টি তেলের ভাউচার আটকের পর বিষয়টি তোলপাড় শুরু হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ বিপিসির কাছে জানতে চাইলে বিপিসি তেল পাচারের বিষয়ে পরীক্ষ নিরীক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। অভিযোগ রয়েছে ইর্ষ্টাণ রিফাইনারীর কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে কমিটি আটক ৩টি তেলে ভাউচারে তেল নয় স্লেজ নেয়া হচ্ছি বলে রিপোর্ট প্রদান করে। আর এ রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই গত ১১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ আটকের ৬ দিন পর ভাউচার ৩টি ছেড়ে দেয়।

এ ব্যাপারে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আহমানুল ইসলাম বলেন, কোন একটি পক্ষ আমাদের মিচ গাইড করে মিথ্যা তেল পাচারের অভিযোগ করায় পুলিশ ৩টি তেলের ভাউচার জব্দ করে থানায় নিয়ে এসেছিল। পরে তদন্ত করে এর কোন প্রমাণ পাওয়া না যাওয়ায় গাড়ী ৩টি ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গাড়ীতে স্লাজের পরিবর্তে তেল রয়েছে কিনা জানতে আমরা বিপিসিকে বলেছিলাম তারা সেম্পল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানিয়েছে এতে তেল নয় স্লাজ নেয়া হচ্ছিল। তাই আমরা গাড়ী ছেড়ে দিয়েছি।

১ টি মন্তব্য
  1. Ismail Hossain বলেছেন

    সমস্যা নাই কোন জায়গায় ,