অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

৪ নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতা স্বীকার

0
এ বাড়িতে ৪ নারী ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা বড়উঠান ইউনিয়নের শাহ মিরপুর গ্রামে এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে ৪ নারীকে ধর্ষণের ঘটনার ১২ দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর থেকে বিচ্ছিন্ন কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে কর্ণফুলী থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে এক পর্যায়ে মামলার তদন্তে এবং তাৎক্ষণিক যথাযত ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে নিজেদের কিছুটা ব্যর্থতা হয়েছে বলে স্বীকার করেন সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) হারুন উর রশীদ হাযারী।

স্পর্শকাতর এ ঘটনার পর আমাদের (পুলিশের) যে ভূমিকা পালনের উচিত ছিল সে ক্ষেত্রে আংশিক ব্যর্থতা ছিল।
মামলা নেওয়া কিংবা আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে তিনি জানান। যেহেতু ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর, আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ ছিল।

.

মামলা নেওয়া ও আসামীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কর্ণফুলী থানার ওসির রহস্যজনক ভুমিকা ও ব্যর্থতার প্রশ্ন তুলে সাংবাদিকরা জানতে চান ওসির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা?

এ প্রশ্নে সরাসরি জাবাব না দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন-উর-রশিদ হাযারী বলেন, আমি এ বিষয়টি সিএমপি কমিশনার স্যারকে জানাব। উনি এখন আসামি গ্রেফতারের বাইরে কোন কথাই শুনতে চাচ্ছেন না। তারপরও স্যার নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় ওসি ছৈয়দুল মোস্তফাও উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি নিশ্চুপ ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় দৈনিকের একজন সাংবাদিক বলেন, ঘটনা জানার পর আমি নিজেই ওসিকে ধর্ষণের কথা বলেছিলাম। তখন ওসি আমাকে বলেছিলেন-সেখানে ডাকাতি হয়েছে, কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আমি বললাম- আপনাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম ধর্ষণ হয়েছে। ওসি বলছেন-আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম।

লিখিত বক্তব্যে হারুন উর রশিদ হাযারী দাবি করেন, ঘটনার দুই-তিনদিন পর বাদি থানায় এলেও ধর্ষণের কথা বলেননি। ডাকাতির বিষয়টিও তিনি শুধু মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-বন্দর) আরেফিন জুয়েল বলেন, এ ঘটনায় কার গাফেলতি কম, কার বেশি সেটা বিষয় নয়। ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং আসামিদের গ্রেফতারেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

এই ঘটনার পর এ পর্যন্ত ৩ জন গ্রেফতার হওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত মো. সুজন ওরফে আবুকে ২৮ ডিসেম্বর টিআই প্যারেডের মাধ্যমে ভিকটিমের শনাক্ত করার কথা আছে।

উল্লেখ্য গত ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে মহানগরীর আওতাধীন কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের শাহ মিরপুর গ্রামে এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে চারজন যুবক জানালার গ্রিল কেটে বাড়িতে প্রবেশ করে চার নারীকে ধর্ষণ করে। চারজনের মধ্যে তিনজন প্রবাসী তিন ভাইয়ের স্ত্রী, অন্যজন তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা আত্মীয়া যুবতি। এ সময় তারা নগদ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৫ ভরি স্বণালঙ্কারও নিয়ে যায়।’

এ ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করতে গেলে কর্ণফুলী থানা পুলিশ তাদের পটিয়া থানায় যেতে বলে, পটিয়া থানা পুলিশ বলে কর্ণফুলি থানায় মামলা করতে। প্রায় ৭দিন গড়িমসি করেও মামলা না নেয়ায় আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় এমপি ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদের নির্দেশে কর্ণফুলী থানা পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়। পরে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় পড়ে যায়। পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে।

এ ঘটনায় পুলিশ শাহ মীরপুর গ্রামের আহমদ মিয়ার ছেলে মো. সুমন ওরফে আবু (২৩) এবং পটিয়া উপজেলার শিকলবাহা গ্রামের দুলা মিয়ার ছেলে মো. ইসমাঈল ফারুকী (২৫)। এবং সর্বশেষ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলার চাতুরী-চৌমুহনী এলাকা থেকে বাপ্পী (২৩) নামে আরো একজনকে আটক করা হয়।