অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পথ শিশুদের ঈদ আনন্দ

0

মাহমুদুল হক আনসারী:

13567411_918641194911409_5668709457533730385_n
“পথ শিশুদের ঈদ আনন্দ” ছবি: কমল রুদ্র

ঈদ মানে আনন্দ বা খুশি। ঈদের চাঁদ দেখা দিলেই খুশিতে আত্মহারা কি শিশু, কী কিশোর, বৃদ্ধ বণিতা সকলের মাঝেই এ খুশি দেখা যায়। আবহমান কাল থেকে বাংলার ঘরে ঘরে সকল ধর্ম গোত্র মানুষের মাঝে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে দেখা যায়। সামর্থ্য অনুপাতে পরিবারের শিশু থেকে সব বয়সের সকলেই ঈদ খুশিতে নতুন জামা কাপড় সকলেই চায়। ঈদের বেচা বিক্রিতে মার্কেট সমূহ জমজমাট। দিনের শুরু থেকে রাতব্যাপি বেচাবিক্রিতে ব্যস্ত থাকে ব্যবসায়ীরা। শহর গ্রাম, পাড়া, মহল্লা সবখানেই ঈদের আনন্দ খুশিতে সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। সকল পরিবারেই নতুন জামা কাপড়, সকলের জন্যই থাকে এবং দেখা যায়। ঈদে আনন্দ করার জন্য জামা কাপড়, শাড়ীচুড়ি, আতর সুগন্ধিন কমতি নাই। কেউ ২শ টাকার আবার কেউ লাখ টাকার শাড়ী পরে ঈদ করে। কেউ অর্থ খরচ করার খাত পাচ্ছে না। আবার অনেকেই অর্থের অভাবে সেমাই চিনি কিনতে পারছে না। তাই ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, নিজে খাবে, পরবে, পাশে অবস্থানরত প্রতিবেশীদের খবর রাখবে, “আমার উম্মতের মধ্যে যারা প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব রাখে না, তারা আমার উম্মত নয়।” নিজের বরণ পোষণ ব্যয় আহারের সময় পাশের দরিদ্র পরিবার নিপীড়িত মানুষদের প্রতি নজর রাখা ইসলামের শিক্ষা। এ শিক্ষা সমাজে সামন্যতম যদি বাস্তবায়িত হয়, তহালে আবশ্যই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র শিশু, অসহায় মানুষগুলো ঈদের খুশিতে কিছুটা হলেও হাসতে পারবে। তারাও নতুন জামা কাপড় পরতে পারবে। সেমাই, মিষ্টি অন্তত একদিন হলেও খেতে পারবে। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায়, বস্তিতে অসংখ্য সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও দরিদ্র মানুষ আছে। তাদের এই ঈদ আনন্দে খুশি করতে সমাজের বিত্তবান মানুষেরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে ঈদ আনন্দ আরো ব্যাপকভাবে ফলপ্রসু হবে। মুসলিম সমাজে সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য যাকাত ফরজ করা হয়েছে। সামর্থ্যবান মুসলিম নরনারীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত প্রদান করা নামাজ রোজার ন্যায় অবশ্যই কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন না করলে, উক্ত ব্যক্তি অন্য ফরজ সমূহ ঠিক মত পালন করলেও তিনি পরিপূর্ণ মুসলিম হতে পারবেন না। তাই সামর্থ্যবানদের যাকাত আদায় করা খুবই জরুরী। অন্য ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য যাকাত আদায় করা অবশ্যই দরকার। আর যদি ঠিকভাবে সমাজে যাকাত নামক ইসলামী এ কর আল্লাহর পথে তার বান্দাহদের জন্য ব্যয় করা হয় তাহলে কখনো সমাজে দারিদ্রতা এ পর্যায়ে থাকবে না। যা অর্থনীতিবিদদের অভিমত। পবিত্র কালামে পাকে যাকাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে। নিজের অর্জিত ধন সম্পদকে হালাল করার জন্য অবশ্যই তোমার ধন সম্পদ হতে নির্দিষ্ট পরিমাণে যাকাত দিয়ে দাও, না হয় তোমার সমস্ত সম্পদ অপরিষ্কার থেকে যাবে। তোমার ব্যবসা হালাল হবে না, তোমার যাবতীয় ইবাদত পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ হবে না। আর এ যাকাতের অংশটা যদি দরিদ্র মানুষগুলো প্য়া তাহলে তাদের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্বচ্ছতা ফিরে আসবে। অভাব অনটন দূর হবে। তাদের মধ্যে অন্যান্যদের মত হাসিখুশি বিরাজ করবে। সমাজে চড়িয়ে চিটিয়ে আছে অনেক পথ শিশু, কারো বাসা বাড়ী আছে, আবার কারো নাই। ফুটপাতে দোকানে মার্কেট অলিগলিতে যাদের ঠিকানা, যাদের নেই কোন ঘর জমি জমা, ভিটেবাড়ী আশ্রয়হীন এই সব পথশিশুদের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন বিত্তবানেরা। তাদেরও ঈদের হাসি ফুটাতে পারেন অর্থনীতিতে এগিয়ে থাকা মানুষগুলো পথশিশু দরিদ্র শিশুদের সহযোগিতায় সরকারী, বেসরকারী কর্মসূচি আরো বৃদ্ধি করা দরকার। যা আছে তা অপ্রতুল। এখনো পথশিশু, শিশু শ্রমিক রাস্তাঘাটে যত্রতত্র দেখতে পাওয়া যায়। নিশ্চয় কোথাও না কোথাও তাদের জন্ম। অবশ্যই তাদের একটি পরিচয় আছে, মহান আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে শ্রেষ্ঠ জাতি মানুষ হিসেবে তাদের পাশে দ্ড়াান। সামর্থ্যবান ও সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের পুনর্বাসন সাহয্য সহযোগিতা সভ্য সমাজের দাবী রাখে। একটি শ্রেণীকে প্রশ্চাপদ রেখে সরকারী বেসরকারী যত উন্নয়নই হোক না কেন তা পরিপূর্ণ উন্নয়ন বলা যাবে না। বিত্তবানদের অর্থের পাহাড়ের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটা অংশ অবশ্যই রয়েছে। তাদের ন্যায্য অধিকার প্রাপ্য অবশ্যই রাষ্ট্র ও সামর্থ্যবানদের দেয়াটাই সভ্য সমাজের দায়িত্ব। শিক্ষা অর্থনীতি রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন অগ্রগতিতে পথশিশু দারিদ্র মানুষদের অংশগ্রহণ ও তাদের সুখ দু:খের সাথী হতে না পারলে রাষ্ট্রীয় সাফল্য পরিপূর্ণ হবে না। তাই ঈদ আনন্দে সেমাই মিষ্টি, জামা কাপড়ের খুশিতে অবশ্যই রাষ্ট্র ও সামর্থ্যব্নাদের পথ শিশু দারিদ্র মানুষের পাশে থাকা চায়।

লেখক: শিশু সংগঠক ও কলামিষ্ট