অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় গুলি ও বোমা হামলায় এ পর্যন্ত ৪জন নিহত

0
solakia-ed-03
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পাশে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গুলি বিনিময়।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পাশে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গুলি বিনিময়ের সময় চার জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের দু’জন পুলিশ সদস্য, একজন নারী ও অন্যজন সন্ত্রাসী। তবে সন্ত্রাসীর নাম জানা যায় নি। এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে বেশির ভাগই পুলিশ সদস্য।

আহত পুলিশ ২ সদস্যনকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। অন্যদের ময়মনসিংহ সিএমএইচ ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঈদের দিন যারা হামলা চালায় তারা ইসলামের শত্রু। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে ২ জনকে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশ পথে ঈদের জামাত শুরু হওয়ার আগে টহল পুলিশর ওপর বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের গুলি বিনিময় শুরু হয়। এতে নিহত হন জহিরুল ইসলাম নামে পুলিশের এক কনস্টেবল।

Exif_JPEG_420
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত এক দুর্বৃত্তের লাশ পড়ে আছে। (গোল চিহ্ন)

নিহত অন্য পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায় নি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ পুলিশ সদস্য। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাঠের বাইরে একদিকে পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময় চলতে থাকে, অন্যদিকে শুরু হয় ঈদের জামাত। হামলার পর পুলিশসহ ১১ জনকে কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নেয়া হলে জহুরুল হক (৩০) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে ডেপুটি সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন। শোলাকিয়া মাঠে উপস্থিত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খানও এ সময় হাসপাতালে ছুটে যান। পরে আহতদের মধ্যে ছয় পুলিশ সদস্যকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে ডেপুটি সিভিল সার্জন জানান। ঈদ জামাতে অংশ নিতে অনেকেই একটি স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে মাঠে আসছিলেন। এ সময় স্কুল ফটকের কাছে বসানো পুলিশ চেকপোস্ট লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বোমা হামলা চালানো হয়। শোলাকিয়া মাঠ থেকেও ওই শব্দ পাওয়া যায়। আর মাঠে যাওয়ার পথে সামনে বিস্ফোরণ আর ছুটোছুটি দেখে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা জানান স্থানীয় এক বাসিন্দা। হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল বলে একটি টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়। তবে হামলাকারী কয়জন ছিল সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। হামলার পর হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি শুরু হয়ে যায় বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান। পরে বিজিবি সদস্যরাও সেখানে যান।

Exif_JPEG_420
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধ চলছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির উপর ঐতিহ্য্যবাহী এ ঈদগাহ প্রতি ঈদে নামাজ পড়তে আসেন লাখো মানুষ। মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ সালে এই ঈদগাহ চালু করেন। প্রথম জামাতে সেখানে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। পরে উচ্চারণের বিবর্তনে তা পরিণত হয় আজকের নাম শোলাকিয়ায়। ঈদ জামাতে দূর দূরান্ত থেকে মুসুল্লিদের আসার সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনেরও ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ।

গত ১লা জুলাই ঢাকার গুলশানে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ২০ জন নিহতের পর এবার দেশের প্রধান সব ঈদ জামাতেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থ করা হয়। শোলাকিয়াতেও ওয়াচ টাওয়ার থেকে এবং ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ঈদের সকাল থেকে ঈদগাহ মাঠ ও আশপাশের এলাকায় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন ছিল বলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।