অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

১০ লাখ পেশাজীবী অভিবাসী নেবে কানাডা

1

উন্নত দেশ কানাডায় পাড়ি জমাতে চান, এমন পেশাজীবীদের জন্য দারুণ সুখবর। আগামী তিন বছরে প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী নেবে দেশটি।

তিন বছরে প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী নেবে কানাডা। দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী আহমেদ হোসাইন জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে তিন লাখ ১০ হাজার, ২০১৯ সালে তিন লাখ ৩০ হাজার ও ২০২০ সালে তিন লাখ ৪০ হাজার অভিবাসী নেওয়া হবে।

কানাডায় বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জন্মহার কমে যাওয়ায় শ্রমশক্তির চাহিদা মেটাতে বছরে সাড়ে চার লাখেরও বেশি বাড়তি জনশক্তি প্রয়োজন। ২০১৮ সালকে কানাডায় দক্ষ কর্মীদের ইমিগ্রেশনের সেরা বছর আখ্যা দিয়েছেন দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী। সংশোধিত নিয়মে প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রগ্রাম, এক্সপ্রেস এন্ট্রি, ফেডারেল স্কিল, কেয়ারগিভারসহ বিভিন্ন প্রগ্রামে আছে দক্ষ পেশাজীবীদের অভিবাসী হওয়ার সুযোগ।

লো স্কিল ট্রেড প্রোগ্রাম

আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আলহাজ শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, কানাডায় লো স্কিল ট্রেডে কাজের সুযোগ অনেক বেশি। তাই এ ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক অভিবাসনের সুযোগ পেতে পারে। এসএসসি হলেই আবেদন করা যাবে। আইইএলটিএসের প্রয়োজন পড়বে না, তবে থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট কাজের ট্রেড স্কিল সার্টিফিকেট। আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ৩৯ বছরের মধ্যে। লো স্কিল ট্রেডসহ প্রচলিত অন্যান্য প্রগ্রামে তিন বছরে প্রায় ১০ লাখ লোক কানাডায় কাজ করার সুযোগ পাবে।

এক্সপ্রেস এন্ট্রি

এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাজে অভিজ্ঞরা কানাডায় অভিবাসনের সুযোগ পান। এক্সপ্রেস এন্ট্রির তিনটি প্রগ্রাম আছে। এগুলো হলো—ফেডারেল স্কিল্ড ওয়ার্কার, ফেডারেল স্কিল্ড ট্রেডস ও কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস। আইএলটিএস স্কোর থাকতে হবে কমপক্ষে ৬.৫। ফেডারেল স্কিল্ড ওয়ার্কার প্রগ্রামে আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিপ্লোমা বা স্নাতক। লাগবে নির্দিষ্ট পেশায় কমপক্ষে এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। ফেডারেল স্কিল্ড ট্রেডস প্রগ্রামে নির্দিষ্ট ট্রেডে দক্ষরা আবেদন করতে পারবেন। কানাডা সরকারের ইমিগ্রেশনবিষয়ক ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে পয়েন্ট পাওয়া যাবে না। থাকতে হবে নির্দিষ্ট ট্রেড সার্টিফিকেট এবং কমপক্ষে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। গত তিন বছরে কানাডায় কমপক্ষে এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আছে—এমন সব ব্যক্তি কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন। কানাডিয়ান ন্যাশনাল অকুপেশনাল ক্লাসিফিকেশন (এনওসি) অনুযায়ী কাজের অভিজ্ঞতার পয়েন্ট হিসাব করা হবে।

প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রগ্রাম

কানাডার ১১টি প্রদেশ আবেদনকারীদের ইমিগ্রেশনের নমিনেশন দিতে পারে। একেক প্রদেশ একেক সময় প্রগ্রাম উন্মুক্ত করে। প্রদেশভেদে শর্ত আলাদা হয়। আইইএলটিএসে ৫.৫-সহ দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েটরা ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভিনশিয়াল প্রগ্রামে আবেদন করতে পারেন। সাসকাচুয়ানে অভিবাসনের সুযোগ আছে কিছু পেশাজীবীর জন্য। কম্পিউটার বা ইনফরমেশন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার/অ্যানালিস্ট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, এনজিও কর্মকর্তা, সোশ্যাল ওয়ার্কার, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কৃষি ব্যবস্থাপক, কৃষি কর্মকর্তা, সাপ্লাই চেইন/পারচেজ ম্যানেজার হলে অভিবাসী হতে পারবেন। যাঁরা কানাডায় লেখাপড়া করেছেন এবং কানাডায় চাকরি করার যোগ্যতা ও অফার রয়েছে অথবা যাঁরা ব্যবসা করতে ইচ্ছুক, তাঁরা অন্টেরিও ইমিগ্র্যান্ট নমিনি প্রগ্রামে আবেদন করতে পারেন। ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অ্যাডমিন অফিসার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটারে দক্ষ ব্যক্তি, নার্স, এনজিও কর্মীরা আবেদন করতে পারবেন নভো স্কশিয়া নমিনি প্রগ্রামে। মার্চ ২০১৭ থেকে চালু হয়েছে আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রগ্রাম। প্রগ্রামটিতে জব অফার থাকে বলে এটি অনেকেরই পছন্দের।

কুইবেকের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আলাদা। সরকারের পরিকল্পনা, ২০১৮ সালেই ৫১ হাজার নতুন ইমিগ্র্যান্ট নেওয়া। সাধারণত এই প্রদেশের শর্ত বা যোগ্যতা তুলনামূলক অনেক সহজ ও শিথিল থাকে। গ্র্যাজুয়েশন বা ডিপ্লোমা, কমপক্ষে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, আইইএলটিএস ৫.৫ স্কোর থাকলে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার প্রগ্রামার, নার্স, রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার, সেলসম্যান, হেলথ কেয়ার ম্যানেজার ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট পেশাজীবীরা আবেদন করতে পারেন আলবার্টা ইমিগ্র্যান্ট নমিনি প্রগ্রামে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে উন্মুক্ত হচ্ছে এটি।

ফেডারেল স্কিল ট্রেড প্রগ্রাম

ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, অটোমোবাইল প্রভৃতি পেশায় সরাসরি এই প্রগ্রামের আওতায় আবেদন করে চাকরিসহ ইমিগ্রেশন করতে পারেন। তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের ট্রেড স্কিল সার্টিফিকেট ও সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ফিশ প্রসেসিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা, কৃষি ইত্যাদি কাজেরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে কানাডায়। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী যে কেউ আবেদন করতে পারবেন।

কেয়ারগিভার প্রগ্রাম ও অন্যান্য

সার্টিফায়েড নার্সরা আবেদন করতে পারবেন কেয়ারগিভার প্রগ্রামে। নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা বা বিএসসি ডিগ্রি এবং ন্যূনতম আইইএলটিএস ৫ স্কোর থাকলে চাকরিসহ কানাডায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন। শিশু বা বয়স্কদের যত্ন ও লক্ষ রাখাই হবে এই পেশার কাজ। এ ছাড়া আইটি প্রফেশনাল, প্রকৌশলী, ম্যানেজার, মানবসম্পদ কর্মকর্তা, অ্যাডমিন, ফিন্যান্স, অ্যাকাউন্টিং, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার, ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যানালাইসিস অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, মিডিয়া ডেভেলপার, মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রিটেইল-সেলস সুপারভাইজার, গ্রাফিক ডিজাইনার, চিকিত্সক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, ব্যাংকারসহ বেশ কিছু পেশাজীবীও আবেদন করতে পারেন।

দরকারি কাগজপত্র

লাগবে পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত, এতে পরিবারের সব সদস্যের প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। আরো লাগবে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সনদ, এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ছবি, জন্মসনদ, বিয়ের সার্টিফিকেট (বিচ্ছেদ হলে বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্র)। পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে কমপক্ষে এক বছর। বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক নয়, তবে দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে এটি কানাডায় ছয় মাস কার্যকর থাকবে। প্রয়োজন হবে আগের নিয়োগকারীদের রেফারেন্স, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের। প্রয়োজন হবে ডকুমেন্টের মূল অনুবাদ ও অঙ্গীকারনামা। কানাডা প্রবাসী মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান বলেন, ‘চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে যা করার নিজে বুঝে করবেন। কানাডায় চাকরি বা অভিবাসনের ব্যাপারে দালালদের কিছুই করার থাকে না। তারা শুধু কাগজপত্র ঠিক আছে কি না তা দেখে দিতে পারে। ’

আবেদনের নিয়ম

সব নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, প্রথমে প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। জব অফারের জন্য কানাডা ইমিগ্রেশন ল ফার্মে অথবা সরকারি অনুমোদিত এজেন্টের কাছে দরকারি কাগজপত্রের ফাইল পাঠাতে হবে। জব অফার না পেলে প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রগ্রামের জন্য অনলাইনে ফাইল সাবমিট করা যাবে না। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা স্কোর থাকতে হবে কমপক্ষে ৫.৫। এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে ভাষা দক্ষতা স্কোর থাকতে হবে কমপক্ষে ৭। অভিজ্ঞতার সনদ না থাকলে ট্রেড স্কিল্ড প্রগ্রামে আবেদন করা যাবে না।

দরকারি ওয়েবসাইট

কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে (www.cic.gc.ca) দরকারি সব তথ্য দেওয়া আছে। অভিবাসনের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আবেদনের যোগ্যতা ও অন্যান্য তথ্য পাবেন www.cic.gc.ca/english/immigrate লিংকে। অভিবাসন সম্পর্কে আরো তথ্য জানা যাবে www.immigration.ca/en ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। কানাডার ভিসা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে www.canadavisa.com ওয়েবসাইটে। বাংলাদেশি আবেদনকারীদের আবেদনের প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে www.wwbmc.com ওয়েবসাইটে।

 

১ টি মন্তব্য
  1. Alim Uddin বলেছেন

    চলেন যাই।